শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ , ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দেশ

প্রধানমন্ত্রীর কথার মধ্যে খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকি ছিল

নিউজজি ডেস্ক ১৯ মে, ২০২২, ২০:১৪:৩৭

315
  • ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতকালের বক্তব্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘হত্যার’ হুমকি ছিল বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, পদ্মা সেতুতে নিয়ে খালেদা জিয়াকে টুপ করে ফেলে দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার কথার মধ্যে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকি ছিল।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দুপুরে নীলফামারীর সৈয়দপুরে বিএনপির কার্যালয়ে এক কর্মিসভায় এ অভিযোগ করেন তিনি।

সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা গতকাল (বুধবার) আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর একটা বক্তব্য শুনেছেন, যিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন; যেভাবেই আসুন না কেন। তিনি যে এভাবে এত অশালীন কথা বলতে পারেন এবং এভাবে এত অরাজনৈতিক কথা বলতে পারেন, এটা আমাদের ধারণার বাইরে। তার কথার মধ্যে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকি ছিল। তিনি কী বলেছেন? পদ্মা সেতুতে নিয়ে তাকে (খালেদা জিয়া) টুপ করে ফেলে দিতে বলেছেন।

‘এটা অচিন্তনীয়’ মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা যারা দীর্ঘকাল রাজনীতি করি, আমরা কল্পনাও করতে পারি না যে, একটা দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে যিনি আছেন, যেভাবেই আসেন না কেন; এই ধরনের অরাজনৈতিক, অশালীন ও একজন বিরোধীদলীয় রাজনীতিককে এভাবে হুমকি দিয়ে কথা বলতে পারেন।

নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ব্যক্তি নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. ইউনূসকে বলেছেন দুবার চুবিয়ে চুবিয়ে তুলে নিতে। ভাবা যায় না, চিন্তা করা যায় না, কোন মানসিকতা নিয়ে...। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিকে পুরোপুরি দ্বন্দ্ব-সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাবের উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তোমরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করবা আর এর দায়ভার কেন জনগণ বহন করবে?

দেশে চার মাসের রিজার্ভ রয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, অর্থনীতি ধ্বংসের পথে। ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। টাকার মান কমে যাচ্ছে। ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই সরকারের।

সংসদ ভেঙে দেয়ার ও নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান বিএনপির মহাসচিব।

বিএনপির সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা শাখার আহ্বায়ক আবদুল গফুর সরকারের সভাপতিত্বে কর্মিসভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা শাখার সদস্যসচিব শাহিন আকতার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত হায়াত শাহ।

রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না 

পরে ঠাকুরগাঁওয়ে শ্রমিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই সভায়ও একই বিষয়ে কথা বলেন তিনি। বলেন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে সেতু থেকে ফেলে দেয়া কখনো স্বাভাবিক ব্যাপার হতে পারে না। এমন উক্তিতে দারুণ বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছি। তার এই উক্তির নিন্দা জানাই। তিনি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে একদম অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেন, যা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আজকে জাতি এ ধরনের নেতৃত্ব পেয়েছে।

ক্ষমা চেয়ে বিএনপি পদ্মা সেতু ব্যবহার করতে পারবে- তথ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, পদ্মা সেতু কারো বাবার টাকায় তৈরি হয়নি। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় তৈরি। সেই টাকাও আওয়ামী লীগ লুট করেছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় ১০ হাজার কোটি থেকে ৪০ হাজার কোটিতে গেছে।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ গত দুটি নির্বাচন লুট করে নিয়ে গেছে। যে নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি, জনগণ ভোট দিতে পারে নাই। বিদেশিদের সাথে বিএনপি যোগাযোগ করে না বরং আওয়ামী লীগই যোগাযোগ করে। তারাই আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চেয়েছে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য। এক-এগারোর সময় সামরিক সমর্থন নিয়ে যে সরকার এসেছিল তাদের পেছনেও আওয়ামী লীগ ছিল এবং সমর্থন ও বৈধতা দিয়েছিল।

বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে বিএনপি এখন কোনো চিন্তা করছে না। নির্বাচন কীভাবে হবে সে চিন্তাই বিএনপি করছে। এই সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে এবং নতুনভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে জনগণকে ভোট দেয়ার অধিকার দিতে হবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিতরাই সরকার গঠন করবে।

গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ ভুল ছিল বিএনপি তা কখনোই ভাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনে যাওয়া এবং পূর্বে নির্বাচন বর্জন সেটিও ভুল ছিল না। কারণ পূর্বে নির্বাচন বর্জন করা হয়েছিল কেয়ারটেকার সরকারের কারণে আর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না এটি প্রমাণ করার জন্য পরবর্তী সময়ে নিবাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি।

তিনি আরো বলেন, দির্ঘদিন পর আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আসার অর্থ হচ্ছে ধর্মকে কেন্দ্র করে সমস্যা সৃষ্টি করা, যা বিএনপি কখনোই সমর্থন করে না। আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে নতুন চক্রান্ত। চিহ্নিত মানুষগুলো দেশে অস্থিতিশীল সৃষ্টি করার জন্য এবং বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ধর্ম সম্পর্কে যে অনুভূতি তা নষ্ট করার জন্য এমন পরিস্থিতি করা হচ্ছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সহসভাপতি আল মামুন, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফসহ জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।

নিউজজি/জেডকে

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন