রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১ , ২৬ রজব ১৪৪৬

দেশ

চিকিৎসক সংকটে ধুঁকে ধুঁকে চলছে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৯:৪৬:১৭

75
  • চিকিৎসক সংকটে ধুঁকে ধুঁকে চলছে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে পাঁচ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে ৫০ শষ্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চিকিৎসক স্বল্পতাসহ নানান সংকটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা-সেবা নিতে আসা রোগীরা। এখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নেই, নেই রোগ নির্ণয়ের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। ফলে উপজেলার প্রায় পৌনে তিন লক্ষ মানুষের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।

বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩২ জন চিকিৎসকের স্থলে রয়েছেন মাত্র সাত জন। এই সাত জন চিকিৎসকের মধ্যে এক জন কোরিয়া ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতালে সংযুক্ত এবং এক জন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ছিলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাসহ মোট পাঁচজন চিকিৎসক হাসপাতালে আগত রোগীদের চিকিৎসা-সেবা দিচ্ছেন। বাধ্য হয়েই তাঁদের একাধিক শিফটে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

অন্যদিকে চিকিৎসক সংকট থাকায় রোগী দেখার নিয়ম না থাকলেও বাধ্য হয়েই বহির্বিভাগে রোগী দেখে ওষুধ লিখে দিচ্ছেন হাসপাতালে কর্মরত ২ জন ফার্মাসিস্ট। প্রতিদিন তারা বিভিন্ন শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন।

এ বিষয়ে ফার্মাসিস্ট রিয়া খাতুন বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে ইউএইচএফপি স্যারসহ মোট পাঁচ জন চিকিৎসক রয়েছেন। তারা ইনডোরে রোগী দেখেন।ডাক্তার সংকটের কারনে আমাদের ওয়ার্ডার করে এখানে আনানো হয়েছে। দুইজন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট সহ আমরা শিফট করে রোগীদের সেবা দিচ্ছি।

হাসপাতালে কনসালটেন্ট না থাকায় শিশু রোগীদের সেবা দিচ্ছেন সহকারী ডেন্টাল সার্জন। এ বিষয়ে সহকারী ডেন্টাল সার্জন মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আগে উপরে বসতাম। একমাস থেকে কোন কনসালটেন্ট নেই। তাই আমি এখন রোগী দেখতেছি।

চিকিৎসক সংকট থাকায় বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগী এবং তাদের স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। পৌরসভার থানা পাড়া এলাকার রনজিনা বেগম এসেছেন আড়াই বছর বয়েসি নাতিকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পর শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাচ্চাটার কালকে থেকে সমস্যা তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছি। এখন দেখতেছি আমাদের এখানে কোন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। এখানে যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা এমবিবিএস ডাক্তার না।

অন্যদিকে হাসপাতালে শিশুদের পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ না থাকায় রোগীর স্বজনদের বাহিরে থেকে ওষুধ কিনে নিতে হচ্ছে। সুমাইয়া রিয়া নামে এক রোগীর স্বজন অভিযোগ করে বলেন, সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর বাচ্চাটাকে ডাক্তার দেখাতে পেরেছি। ডাক্তার যে ওষুধ লিখেছে তার একটাও হাসপাতালে নাই। সব নাকি বাহিরে থেকে কিনতে হবে। এর আগেও একবার এসেছিলাম তখনও হাসপাতালে ওষুধ পাই নি।

এদিকে হাসপাতালে ওষুধ সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত স্টোর কিপার নিয়ামত উল্লাহ বলেন, শিশুদের ওষুধের সংকট রয়েছে। আমরা ওষুধের যে চাহিদা দেই সেই অনুপাতে সরবরাহ পাই না। বগুড়ার সরকারি ওষুধ কারখানায় সাত লাখ প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের চাহিদা দিয়েছিলাম সেখানে আমরা পেয়েছি মাত্র এক লাখ। এছাড়া আমরা যদি পাঁচ হাজার সিরাপের চাহিদা দেই তাহলে আমরা পাই পাঁচশত। ঐ পাঁচশত সিরাপ এক মাসেই শেষ হয়ে যায়।

চিকিৎসক সংকটের বিষয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন ধর বলেন, আমাদের এখানে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে চিকিৎসক সংকট নিরসনে কাজ করছেন। আমরা স্বল্প জনবল দিয়ে যথা সম্ভব রোগীদের সেবা দিচ্ছি। মাঝে মাঝেই রোগী এবং রোগীর স্বজনদের সাথে কথা হয় তারা আমাদের সেবায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।

নিউজজি/নাসি

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন