রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১ , ২৬ রজব ১৪৪৬

দেশ

হত্যা-মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হয়েও বহাল তবিয়তে কলেজশিক্ষক

হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৮:১৯:৪৪

66
  • হত্যা-মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হয়েও বহাল তবিয়তে কলেজশিক্ষক

মানিকগঞ্জ: হত্যা মামলার চার্জশিটভূক্ত আসামি হয়েও নিয়মিত ক্লাসসহ কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিট্কা খাজা রহমত আলী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. লালমুদ্দিন। বিধি অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক গৃহিত অভিযোগপত্রভুক্ত (চার্জশিট) আসামি হলে অভিযুক্ত শিক্ষককে বরখাস্ত করার বিধান রয়েছে। তবে, আদালত কর্তৃক চার্জশিট গৃহিত হওয়ার তিন মাস পার হলেও তাকে সাময়িক বরখাস্ত বা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, গত ৯ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সিংগাইর উপজেলার ছোট বরুন্ডি গ্রামের মো. সোনামুদ্দিন বিশ্বাসের স্ত্রী তহুরা বেগমকে (৫০) হত্যার অভিযোগ ওঠে তার পুত্রবধু আইরিন আক্তারের (১৯) বিরুদ্ধে। পরদিন ১০ ডিসেম্বর তহুরা বেগমের ভাই মামুন হোসেন বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় আইরিন আক্তারকে ১নং আসামি এবং মো. লালমুদ্দিনকে ২নং আসামি করে মামলা করেন। মামলা নং-১৩/১৩। মামলায় লালমুদ্দিনকে আইরিনের পরকিয়া প্রেমিক উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে হত্যার প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়। মামলায় গত ৩০ জুন দুইজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন জেলা গোয়েন্দা শাখার উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) আজহারুল ইসলাম। যা গত ২৮ আগস্ট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত কর্তৃক গৃহিত হয়। মামলায় বর্তমানে লালমুদ্দিন জামিনে আছেন।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ফৌজদারি/নৈতিক স্থলন/দুর্নীতির মামলায় কোনো শিক্ষক-কর্মচারী অভিযুক্ত হয়ে আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহিত হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে। সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি বেতন-ভাতার অর্ধেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্ত হবেন।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন জানান, এক্ষেত্রে কলেজের গভর্নিং বডি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন এবং অধিদপ্তরে লিখিতভাবে অবহিত করবেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলি (রেগুলেশন) অনুযায়ী, নৈতিক স্থলনজনিত অপরাধের কারণে গভর্নিং বডি অভিযুক্ত অপরাধের গুরুত্বভেদে শিক্ষককে তিরস্কার, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বাতিল, চাকরি হতে অপসারণ বা বরখাস্ত করতে পারবে। তবে, এক্ষেত্রে গভর্নিং বডি বিধি মোতাবেক ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে এবং তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এস এম মাসুদ রানা আতাউর বলেন, কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে যদি এরকম মামলা বা অভিযোগ হয়ে থাকে সেটা কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের লিখিতভাবে জানাবে। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিব।

অভিযুক্ত শিক্ষকের বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিট্কা খাজা রহমত আলী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হামিদুর রহমান বলেন, এ রকম ঘটনার সম্মুখীন আমরা আগে কখনও হইনি। তাই এ বিষয়ে নীতিমালা কি সেটা জানা নেই। আমরা আলোচনা করে দেখি কী করা যায়।

কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি ডা. আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদের জানিয়েছেন মামলা হলেই তিনি বরখাস্ত হবেন না। মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি তখন বরখাস্ত হবেন। আর এডহক কমিটির কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার নেই।

নিউজজি/নাসি

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন