সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২ , ১৯ জিলহজ ১৪৪৬

দেশ

৫ বছরেও শেষ হয়নি ব্রীজের নির্মাণ কাজ, লাখো মানুষের দুর্ভোগ

আব্দুল্লাহ আল নোমান, আমতলী (বরগুনা) ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১৭:৩১:৪৮

76
  • ছবি : নিউজজি

বরগুনা: আড়পাঙ্গাশিয়া নদীতে পাঁচ কোটি ৭৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৪৮ টাকার ব্রীজের নির্মাণ কাজ ৫ বছরেও শেষ হয়নি। এতে আমতলী ও তালতলী উপজেলার লাখো মানুষ চরম ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। দ্রুত এ ব্রীজের নির্মাণ কাজ সমাপ্তের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, আমতলী থেকে তালতলী উপজেলা সড়ক পথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম তালতলী সড়ক। ৪০ কিলোমিটার এই সড়কটির আড়পাঙ্গাশিয়া নদীর উপর ১৯৮৫ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ বেইলি ব্রীজ নির্মাণ করে। এ ব্রীজ দিয়ে দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পারাপার হয়। দুই উপজেলার সেতুবন্ধন ওই ব্রীজটি দিয়ে প্রতিদিন ঢাকা ও তালতলীগামী পরিবহন বাস, আইসোটেক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাভার ভ্যান, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মাহেন্দ্র, ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলসহ কয়েক সহস্রাধীক গাড়ী চলাচল করে। ওই ব্রীজটি ২০১০ সালে নরবরে হয়ে পড়ে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বেশ কয়েকবার সংস্কার করেছে।

২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ওই নদীতে গাডার ব্রীজ নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিপ্তর ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য আরসিসি গাডার ব্রীজ নির্মাণের প্রস্তাব পাশ করেন। ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর দরপত্র আহ্বান করে। ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৩৭ হাজার ২৪৮ টাকা বরাদ্দ হয়। পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার টিএনএএসআই জেডি নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই কাজ পায়।

দরপত্রে উল্লেখ আছে ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল কাজ শুরু করে ২০২১ সালের ৩০ মার্চ কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু ঠিকাদারী কোম্পানী ওই ব্রীজের কাজ বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ সাবেক সদস্য বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. সগির হোসেনের কাছে বিক্রি করে। অভিযোগ রয়েছে সাব-ঠিকাদার মো. সগির হোসেন তৎকালিক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর প্রভাব খাটিয়ে ব্রীজের নির্মাণ কাজ না করে ফেলে রাখেন। প্রথম দফায় কাজের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর তিনি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শুরু করেন। নদীর দুই কিনারে দুইটি গাডার কাজ অসমাপ্ত রেখেই কাজ বন্ধ করে দেয়। কাজ না করেই তিনি প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। এরপর ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি ব্রীজের নির্মাণ কাজ করেনি। গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন ফ্যাসিস্ট শেষ হাসিনা পালিয়ে গেলে সাব-ঠিকাদার মো. সগির হোসেন আত্মগোপনে যান। গত ৫ বছর ধরে ব্রীজ নির্মাণ কাজ না করায় আমতলী-তালতলী দুই উপজেলার লক্ষাধীক মানুষ চরম ভোগান্তিতে পরেছে। পাশের নরবরে বেইলি ব্রীজ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করছে।

গত বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আড়পাঙ্গাশিয়া নদীর দুই পাড়ে ২টি গাডার নির্মাণ করা আছে। ওই গাডার দুটিতে ময়লা আর্বজনায় একাকার হয়ে আছে।   

আড়পাঙ্গাশিয়া গ্রামের মো. হুমায়ূন কবির হাওলাদার বলেন, ঠিকাদার ব্রীজের কাজ না করে বছরের পর বছর ফেলে রেখেছে। এতে দুর্ভোগে পরেছে দুই উপজেলার অন্তত লক্ষাধীক মানুষ। দ্রুত ব্রীজ নির্মাণ কাজ সমাপ্তির দাবি জানান তিনি।

ছোটবগী গ্রামের মো. নজরুল বিশ্বাস বলেন, কয়েক বছর ধরেই ব্রীজের ২টি গাডার নির্মাণ করে ফেলে রেখেছে। ব্রীজ নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে নরবরে বেইলি ব্রীজ দিয়ে চলাচল করছে।

বাস গাড়ী চালক মো. মজিবুর রহমান বলেন, ব্রীজ নির্মাণ না করায় খুবই ভোগান্তির মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। দ্রুত ব্রীজ নির্মাণ কাজ সমাপ্তির দাবি জানান তিনি। 

সাব-ঠিকাদার মো. সগির হোসেন বলেন, ব্রীজ নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।

আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ঠিকাদার সগির হোসেনকে দ্রুত ব্রীজ নির্মাণের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। দ্রুত কাজ না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, ঠিকাদার ব্রীজ নির্মাণ কাজের বেশ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। তবে কত টাকা নিয়েছেন তা আমি জানি না। বরগুনা নির্বাহী প্রকেীশল অফিস ভালো জানেন। 

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্রীজ নির্মাণ কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বরগুনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান বলেন, দীর্ঘদিন আড়পাঙ্গাশিয়া নদীর গাডার ব্রীজের কাজ বন্ধ আছে তা ঠিক কিন্তু বর্তমানে ঠিকাদার কাজ শুরু করেছেন। আশা করি এবার ব্রীজের কাজ শেষ হবে।

 

নিউজজি/এসএম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন