শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ , ৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

দেশ

‘উত্তরাঞ্চলের জন্য সরকারের ন্যায্যতা এবং সুষম বণ্টনের অভাব রয়েছে’

নিউজজি প্রতিবেদক ২১ মে, ২০১৮, ১৬:৩২:২০

849
  • ‘উত্তরাঞ্চলের জন্য সরকারের ন্যায্যতা এবং সুষম বণ্টনের অভাব রয়েছে’

বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। এই প্রাকৃতিক পরিবেশই আমাদের এ দেশকে এক বৈচিত্র্যময় দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে তুলে ধরেছে।। নদীমাতৃক এই দেশে সোনার মাটিতে সোনা ফলে। ষড় ঋতুর প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের সাথে পরিবর্তিত রূপ, রস ও গন্ধে বাঙালি জনগোষ্ঠীর জীবনধারা চলমান। কিন্তু বৈশ্বিক আবহাওয়ার উষ্ণায়ন এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের এমন চিত্র এখন শুধু গল্পের বই বা পাঠ্যপুস্তকেই খুঁজে পাওয়া যায়।

পুরো বিশ্বই আজ আবহাওয়ার উষ্ণায়ন এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের শিকার। বাংলাদেশও এর বাহিরে নয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া-জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে। ফলে প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট দুর্যোগ।  জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষরা বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জনজীবন সম্মুখীন হচ্ছে নানা প্রতিকূলতার। জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে যে সব অঞ্চলের মানুষেরা বন্যা শব্দের অর্থ ভুলতে বসেছিলো তারা মুখোমুখি হচ্ছে ভয়াবহ বন্যার। আবার অন্যদিকে ভয়াবহ খরার মুখোমুখিও হচ্ছে সে সব অঞ্চলের মানুষেরা।

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খরা-প্রবণ ও বন্যা-প্রবণ অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের ধরণ ও তার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে আসছে নেটজ বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ (বিসিএএস)।  দীর্ঘ গবেষণার পর তারা এক সমীক্ষায় উপনীত হয়েছে। সে সমীক্ষা নিয়ে ২১ মে, সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে নেটজ বাংলাদেশ এবং বিসিএএস।

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী এবং রংপুর অঞ্চলের প্রায় ১০টি উপজেলায় ৭টি প্রকল্প নিয়ে গবেষণা করেছে নেটিজ বাংলাদেশ এবং বিসিএএস। এসব অঞ্চলগুলোতে বন্যা ও নদী ভাঙ্গন, খরা, তাপমাত্রাবৃদ্ধি, শৈত্য প্রবাহ, বৃষ্টিপাতের তারতম্য, বজ্রপাতসহ নানান দুর্যোগের পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সে সব অঞ্চলের কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও মানুষের জীবন যাপনে নেতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়গুলো উঠে এসেছে তাদের গবেষণায়। এমনকি সে সব অঞ্চলের মানুষেরা তিনবেলা খেতেও পারছে না বলে জানায় নেটজ বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ (বিসিএএস) এর নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান বলেন, “আপনার জানের এ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দুটো বড় সমস্যা আমরা দেখতে পাই। প্রথমটি হলো খরা এবং আরেকটি হলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বন্যা। এ সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের অভিযোজন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তা না হলে এসব অঞ্চলের মানুষদের জীবনযাপনের দুর্ভোগের কোনো পরিবর্তন আসবে না।”

এছাড়া, গবেষণা নিয়ে ড. দ্বিজেন লাল বলেন, “রাজশাহী ও রংপুরে জলবায়ুর প্রভাব তীব্র। শুষ্ক মৌসুমে এসব অঞ্চলের মানুষের খাওয়ার এবং গোসলের পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলগুলোর কোনো কোনো এলাকায় অত্যাধিক বন্যা হয় আবার কোনো কোনো জায়গায় খরার ভয়াবহতা প্রকট। এসব অঞ্চলের ১৯৮১-২০১৬ সাল পর্যন্ত সকল তথ্য আমাদের কাছে আছে। যদি এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে ভবিষ্যতে আরো কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা হতে হবে।”

গবেষণায় উঠে আসা সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য সেই সব অঞ্চলের লোকেরা কিছু অভিনব কৌশল এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের উপায় সনাক্ত করেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় জ্ঞানের এবং দক্ষতার অভাবের পাশাপাশি জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে সেগুলোর বাস্তবায়ন হয়ে উঠেছে দুর্বিসহ।

বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে নানান উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকার মানুষদের জীবন-জীবিকার উন্নয়নে নানান সীমাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে নানান তথ্য থাকলেও উত্তরাঞ্চল নিয়ে তেমন কোনো পরিসংখ্যান নেই বলে জানায় উপস্থিত বক্তারা।

সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরা, বন্যা, নদী ভাঙ্গন এবং চর সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে উত্তরাঞ্চলের মানুষের যে দুর্ভোগ সে বিষয় নিয়ে সরকারকে আরো বেশি আগ্রহী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এ গবেষণার নীতি বিশ্লেষক মিজানুর রহমান বিজয় এ বিষয়ে বলেন, “এখনো উত্তরাঞ্চল রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার। উত্তরবঙ্গের বিশেষকরে কুড়িগ্রামে দারিদ্রটা তীব্র হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সরকার তুলনামূলক কম মনোযোগে দিচ্ছে এ সব অঞ্চলে। যেখানে উত্তরের মানুষদের বেশি সাহায্য প্রয়োজন সেই জায়গায় সে সব অঞ্চলের মানুষেরা মাত্র ২-৩ শতাংশ তহবিল পাচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের জন্য সরকারের ন্যায্যতা এবং সুষম বণ্টনের অভাব রয়েছে। তাই আমার অনুরোধ পক্ষপাতিত্ব না করে দায়িত্বরতদের উচিত সমান ভাবে সব জায়গায় খেয়াল রাখা।”

এছাড়াও, সরকারকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আঞ্চলিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনকে বিবেচনায় নেয়া, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় ঝুঁকি ও বিপদাপন্নতাকে বিবেচনায় নিয়ে অঞ্চল ভিত্তিক দরিদ্রদেরও অভিযোজন চাহিদার প্রাধান্য দেয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে জনগোষ্ঠীর আরো দক্ষতা বৃদ্ধি কার্যক্রম হাতে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিসিএএস এবং নেটজ বাংলাদেশ।

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দরিদ্রতা হ্রাস নিয়ে অনেক বছর ধরেই কাজ করে আসছে নেটজ বাংলাদেশ। কিন্তু তাদের নানান উদ্যোগ এবং কার্যক্রম জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ বিশেষ করে বন্যা ও নদী ভাঙ্গন, খরা, তাপমাত্রাবৃদ্ধি, শৈত্য প্রবাহ ও ঘনকুয়াশাসহ আরো বিভিন্ন কারণে তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাচ্ছে না বলে জানায়  নেটজ।

স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের ওপর ম্যাগাজিন প্রকাশের মাধ্যমে জার্মানির ‘নেটজ’ বাংলাদেশে কাজ করা শুরু করে। এরপর বিভিন্ন কর্মসূচীর সঙ্গে জড়িত থাকলেও ২০০০ সালের দিকে বাংলাদেশে বৃহৎ আকারে বাংলাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত এবং দুঃস্থদের নিয়ে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।

উল্লেখ্য, বিসিএএস এর নির্বাহী পরিচালক ড.আতিক রহমান এর সভাপতিত্বে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে ড.দ্বিজেন মল্লিক ও মিজানুর রহমান বিজয়সহ আরো বক্তব্য রাখেন নেটজ বাংলাদেশের উপ-পরিচালক জনাব শহীদুল এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং এফইজেবি’র প্রেসিডেন্ট কামরুল ইসলাম চৌধুরী।

 

নিউজজি/এক্স

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন