শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ , ১৯ রমজান ১৪৪৫

দেশ

ডিসির হস্তক্ষেপে মায়ের কোল ফিরে পেল বিক্রি হওয়া শিশু

নাটোর প্রতিনিধি ৩ মার্চ, ২০২১, ১৭:৫৩:০২

582
  • ছবি : সংগৃহীত।

নাটোর: দাদন ব্যবসায়ীর টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়ে বিক্রি করে দেয়া শিশুকন্যাকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিলেন নাটোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. শাহরিয়াজ। পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারটিকে সরকারি ঘর দেয়ার সুখবর দিলেন তিনি।

বুধবার (৩ মার্চ) দুপুরে বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ডেকে শিশুটিকে তার মা ফুলজান বেগমের কোলে তুলে দেন ডিসি। একই সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দরিদ্র পরিবারটিকে নগদ অর্থ, ফল-খাবার ও শিশুর বাবাকে একটি ভ্যান কিনে দেয়া হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহাঙ্গীর আলম, বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম ও নগন ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান নিলুফার ইয়াসমিন ডালু।

২২ দিনের শিশুসন্তান বিক্রি করে ভ্যান কিনলেন বাবা শিরোনামে মঙ্গলবার (০২ মার্চ) ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি নজরে আসে জেলা প্রশাসনের। এরপরই দরিদ্র পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেন ডিসি মো. শাহরিয়াজ।

সোমবার (১ মার্চ) ২২ দিনের শিশুকন্যাকে বিক্রি করে দেন বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের কয়েন গ্রামের ভ্যানচালক রেজাউল করিম। এক লাখ ১০ হাজার টাকায় শিশুটি বিক্রি করেন তিনি। পরে ওই টাকা ভাগাভাগি করে নেন দাদন ব্যবসায়ীরা। বাকি টাকায় ভ্যান কিনেন শিশুটির বাবা।

স্থানীয়রা জানায়, কয়েক মাস আগে রেজাউল তার প্রতিবেশী সুদি কারবারি কালাম হোসেন এবং আব্দুস সামাদ ও তার ভাই সানোয়ার হোসেনের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নেন। এর মধ্যে কিছু সুদ পরিশোধ করলেও চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে তার ঋণের পরিমাণ ৮০ হাজারে দাঁড়ায়। এসব টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন দাদন ব্যবসায়ীরা।

এমনকি তার আয়ের একমাত্র উৎস ভ্যানটিও কয়েক দিন আগে কালাম হোসেন জোর করে নিয়ে যান। তারপরও টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিলে ২২ দিনের শিশুকন্যাকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু স্ত্রী ফুলজান বেগম এতে বাধা দিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঘরের বেড়া কুপিয়ে কাটার পাশাপাশি নিজের পায়ে কোপ দেন রেজাউল। সেই সঙ্গে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দেন।

এতে বাধ্য হয়ে শিশুটিকে স্বামীর হাতে তুলে দেন ফুলজান। পরে দাদন ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদের আত্মীয় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সরাইকান্দি কারিগরপাড়ার রফিকুল ইসলামের কাছে এক লাখ ১০ হাজার টাকায় শিশুটিকে বিক্রি করেন রেজাউল। বিক্রির পর আব্দুস সামাদসহ অন্যান্য সুদি কারবারিরা পাওনা টাকা ভাগাভাগি করে নেন। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে রেজাউলকে ভ্যান কিনে দেন।

খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মঙ্গলবার রাতেই ভ্যানচালকের বাড়িতে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম। পরে বিক্রি করা শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন।

বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অভাবের তাড়নায় শিশুটিকে বিক্রি করে দেন বাবা। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাকে একটি ভ্যান কিনে দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে জমিসহ ওই পরিবারকে একটি ঘর তৈরি করে দেয়া হবে।

নিউজজি/ এসআই

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন