বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ৯ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

দেশ
  >
জনপদ

‘ভাঙন আতঙ্ক: বিধ্বংসী রূপ দেখে দিশাহারা টংকাবতী খালপাড়ের মানুষ’

চট্টগ্রাম অফিস ১৭ অক্টোবর , ২০২৪, ১৩:৩০:৪৬

95
  • ‘ভাঙন আতঙ্ক: বিধ্বংসী রূপ দেখে দিশাহারা টংকাবতী খালপাড়ের মানুষ’

চট্টগ্রাম: লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে চলা টংকাবতী খাল আগ্রাসী হওয়ায় ভাঙনে বিলীন হয়েছে একটি গ্রামীণ সড়কসহ শতাধিক বসতবাড়ি। অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে আরও শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি। টংকাবতীর বিধ্বংসী রূপ দেখে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে টংকাবতী খালপাড়ের মানুষদের।

স্থানীয় বাসিন্দা শামসুন্নাহার বলেন, অতীতের তুলনায় এবারের বর্ষায় অনেক বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। চলতি বছর বর্ষা শুরু হতে না হতেই বসতবাড়ি গিলতে শুরু করে টংকাবতী। ইতোমধ্যে অনেক বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। সামনে আবারও ভারী বৃষ্টিপাত হলে অবশিষ্ট যে ঘরবাড়ি আছে সেগুলোও বিলীন হয়ে যাবে।

তিনি আরা বলেন, টংকাবতীর ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার পাশাপাশি আমাদের যাতায়াতের সড়কটিও ভেঙে গেছে। এ কারণে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমাদের সন্তানদের লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। তারা স্কুলে যেতে পারছে না। আগামী বর্ষার আগে সংস্কার না করা হলে এখানকার আরও অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে।

কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল হকের সঙ্গে। এ সময় তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, বিগত ২০ বছর ধরে এমপি থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যন্ত এ এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এক টাকার অনুদানও আসেনি। ভাঙনের কবলে পড়ে বিভিন্ন সময়ে এখানে বহু পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাদের অনেকেই এখান থেকে উচ্ছেদ হয়ে গেছে। ভাঙন প্রতিরোধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে আরও বহু পরিবার উচ্ছেদ হয়ে যাবে এখান থেকে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে টংকাবতীর ভাঙন বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

জানা যায়, কলাউজান-চরম্বা সংযোগ সড়কের রাজঘাটা মাঝের পাড়া অংশে প্রায় এক হাজার ফুট গ্রামীণ সড়ক খালের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে। উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নে টংকাবতী খালপাড়ের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টংকাবতীর ভাঙন নতুন কিছু নয়। প্রায় ২০ বছর আগে এই খালে প্রথম ভাঙন শুরু হয়। বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছে টংকাবতীর তাণ্ডব। তবে এ বছর টংকাবতী যে রুদ্র রূপ ধারণ করেছে তা রীতিমতো দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে। গত কয়েক দিনের অব্যাহত ভাঙনে ইতিমধ্যে খালের পেটে বিলীন হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক বেশি বসতবাড়ি। দিনকে দিন আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠছে টংকাবতী। ক্রমাগত বেড়েই চলেছে ভাঙন। এভাবে ভাঙন বাড়তে থাকার কারণে খালপাড়ের আরও শতাধিক পরিবার ভাঙন আতঙ্কে অস্থির সময় পার করছেন। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই খালের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভেঙে পড়তে থাকে টংকাবতীর পাড়। তবে চলতি বর্ষায় সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। ক্রমেই বাড়ছে ভাঙনের ব্যাপ্তি। অতীতে টংকাবতীর এমন আগ্রাসী রূপ কখনোই দেখেননি এলাকাবাসী।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মুহাম্মদ মনির উদ্দিন জানান, ক্রমাগত ভাঙনে চলতি বছর থেকে চলাচলের সড়কটি একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। বহু বছর ধরে ওই স্হানে ভাঙন সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যে শতাধিক বসতঘর বিলীন হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ থেকে সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু পানির স্রোতে সব বিলীন হয়ে গেছে।

 

পরিদর্শন শেষে ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)র উপসহকারী প্রকৌশলী সতেজ দেওয়ান।

দ্রুততম সময়ে ব্লক স্হাপনের মধ্য দিয়ে ভাঙন কবলিত এলাকার বসত বাড়ি  রক্ষাসহ চলাচলের পথ সুগম করতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবে এমনটাই আশা স্থানীয়দের।

নিউজজি/নাসি 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন