মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ , ১২ মুহররম ১৪৪৭

শিল্প-সংস্কৃতি

ভারতীয় বাঙালি চিত্রকর ও শিল্পী ঈশা মহম্মদ

নিউজজি ডেস্ক ১১ মে, ২০২৫, ১৪:৪০:১১

139
  • সংগৃহীত

ঢাকা: অধ্যাপক ঈশা মহম্মদ ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি চিত্রকর ও শিল্পী। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই চিত্রশিল্পী কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফটের প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়াও, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক চেতনা সম্পন্ন এই মানুষটি পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের সাথেও যুক্ত ছিলেন।

ঈশা মহম্মদের জন্ম ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ১১ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরে। পুরুষানুক্রমিক ভাবেই তাদের বসবাস কোন্নগরে এবং যৎসামান্য বিষয়সম্পত্তি ছিল তার পিতার। তার প্রপিতামহের নামেই এখানে একটা রাস্তাও আছে। ঈশা উদারপন্থী পিতামাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান ছিলেন। পিতা কাজ করতেন কোন্নগরে ভারতে প্রথম শুরু হওয়া বাটা কোম্পানিতে ডিজাইনার হিসাবে, যদিও তিনি আর্ট স্কুলের পড়াশোনা তখনও শেষ করেন নি। কোন্নগর হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় তার পিতা মারা যান। সুতরাং দারিদ্র আর সেইসময়কার দাঙ্গাসহ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দুটি বৎসর নষ্ট করে ঈশা ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে স্কুল ফাইনাল পাশ করেন। ছোটবেলা থেকে তার ছবি আঁকতে ভাল লাগত। ফুল, ফল, পাখি, রাস্তায় দেখা মিলিটারি পুলিশ আঁকতেন। তার ইচ্ছা ছিল আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়ে আর্ট শেখার। কিন্তু মায়ের ইচ্ছায় উত্তরপাড়া কলেজে ভর্তি হন বিজ্ঞান বিভাগে।

১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি আইএসসি পাশ করেন। এই সময় কোন্নগরে জে পি গঙ্গোপাধ্যায়, রথীন মৈত্র, সুধীর খাস্তগীর, কিশোরী রায়, বীরেন দে প্রমুখের দেশীয় শিল্পীদের প্রদর্শিত চিত্র প্রদর্শনীর ছবি দেখে ঈশা উদ্বুদ্ধ হন। কলেজে যাওয়ার নাম করে গঙ্গার ঘাটে বসে স্কেচ করতে থাকেন এবং দূরসম্পর্কের এক কাকা মহিউদ্দিনের বাড়িতে সে শিল্পকর্ম রেখে দিতেন। সেখানে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের আনাগোনা ছিল। বিধানচন্দ্র রায়ের বন্ধু ডা কালীকিঙ্কর সেনগুপ্ত কাকার বাড়িতে ঈশার শিল্পকর্ম দেখেন। তারই সূত্রে ঈশা ওয়েস্টার্ন পেন্টিং-এ ফাইন আর্টস বিষয়ে ভর্তি হন কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফটে। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে ডিপ্লোমা লাভ করেন। এখানে তিনি চিন্তামণি কর, গোপাল ঘোষ প্রমুখ খ্যাতনামা শিল্পীদের সান্নিধ্য ও সাহচর্য লাভ করেন। কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফটে অধ্যাপনাকালে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে জার্মান সরকারের ভ্রমণ স্কলারশিপ নিয়ে ডুসেলডর্ফ যান। সেখানকার আকাদেমি হতে গ্রাফিক আর্টে প্রশিক্ষণ নেন।

১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ডিপ্লোমা লাভের পর ঈশা মহম্মদ চিন্তামণি করের কথায় গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফটে দেবকুমার রায়চৌধুরী ছুটিতে গেলে, তার জায়গায় ছয় মাস কাজ করেন। এর পর তিনি বহুজাতিক বিজ্ঞাপন সংস্থা জে ওয়াল্টার থমসন-এ রণেন আয়ণ দত্তের অধীনে কয়েকদিন এবং পরে সরকারের প্রচার বিভাগে কিছু দিন কাজ করে শেষে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে স্থায়ী ভাবে গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফটে ‘লেকচারার ইন ড্রইং অ্যাণ্ড পেন্টিং’ পদে যোগ দেন। এখানেই ছ’বছর পর অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হন। শেষে অফিসার ইনটচার্জ হিসাবে প্রায় চোদ্দ বছর কাজ করে, ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের অবসর নেওয়ার এক বছর পূর্বে অধ্যক্ষ হন।

খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী ঈশা মহম্মদ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সুস্থ হওয়ার পর পরবর্তীতে স্বল্প সময়ের শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ১১ মে কলকাতায় পরলোক গমন করেন।

নিউজজি/পিএম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন