শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ , ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থ ও বাণিজ্য

চামড়ার দামে হ্যাটট্রিক বিপর্যয়

নিউজজি প্রতিবেদক ২১ জুলাই , ২০২১, ১৫:১৯:২৫

932
  • ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: আবারো মন্দা পরিস্থিতি কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে। মাত্র একশ থেকে দুইশ টাকায় গরুর চামড়া কিনছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় মাদ্রাসা ও এতিমখানায় চামড়া দান করছেন অনেকে। কোরবানি পশুর চামড়ার ক্রেতা পাচ্ছেন না কেউ। নেই তেমন হাকডাক। আবার ক্রেতা পেলেও মিলছে না ন্যায্য দাম।

করোনাকালের আগের বছর, ২০১৯ সালে দেশে কোরবানি পশুর চামড়া নিয়ে হযবরল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। দাম না পেয়ে ১০-১৫ শতাংশ গরুর চামড়া সড়কে ফেলে এবং মাটিতে পুঁতে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। আবার সময়মতো লবণ না দেয়া, বৃষ্টি ও গরমের কারণেও ২০ শতাংশ গরুর চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। নষ্ট হওয়া চামড়ার আর্থিক মূল্য ছিল কমপক্ষে ২৪২ কোটি টাকা।

ওই বছর ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৫-৫০ টাকা। অথচ ঈদের দিন বিকালে ঢাকায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় গরুর চামড়া বিক্রি হয়। আবার পরদিন পুরান ঢাকার পোস্তার চামড়ার আড়তে বিক্রি হয় ১৫০-২০০ টাকায়। ঢাকার বাইরের চিত্র ছিল আরো ভয়াবহ।

গতবারও কোরবানির পশুর চামড়ার দামে বিপর্যয় নামে। ঈদের দিন পুরান ঢাকার চামড়া আড়ত পোস্তায় গরুর চামড়া আকারভেদে ১৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছাগলের চামড়ার দাম ছিল ২ থেকে ১০ টাকা। বিনা পয়সায়ও ছাগলের চামড়া আড়তে রেখেও গেছেন কেউ কেউ। চট্টগ্রামে গরুর চামড়া আকারভেদে ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা বিক্রি হয়। সব মিলিয়ে অনেকটা পানির দরেই বিক্রি হয়েছে কোরবানির পশুর চামড়া। দাম না পেয়ে চামড়া নষ্টের ঘটনাও ঘটেছে।

রাজধানীর পল্টন এলাকার বাসিন্দা মারুফ সকাল ১০টায় স্থানীয় মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ে এসেই গরু জবাই করেন। দেড় লাখ টাকায় কেনা গরুটি কাটাকাটির জন্য আগে থেকেই পরিচিত কসাই ঠিক করে রেখেছিলেন তিনি।

সকাল ১০টার মধ্যেই কসাই গরু বানানোর কাজ শেষ করেন। এ সময় রফিকুল ইসলাম গরুর চামড়া বিক্রির জন্য ক্রেতাদের খোঁজ করেন। তাদের কাউকে না পেয়ে মাদ্রাসায় দান করার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতে বলেন। তার ছেলেরা এক ঘণ্টা খোঁজাখুঁজি করেও চামড়ার ব্যাপারী কিংবা মাদরাসার কাউকে খুঁজে পাননি।

আনোয়ার মজুমদার বলেন, একসময় গরু জবাইয়ের আগে থেকে চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনার জন্য এসে ধরনা দিতো। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা এসে চামড়া দান করার জন্য অনুরোধ জানাতেন। কিন্তু আজ এক ঘণ্টার বেশি সময় হয়ে গেছে, চামড়ার ব্যাপারী মাদ্রাসার ছাত্ররা কেউ এলো না।সরেজমিন দেখা গেছে, বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় কোরবানির পশু জবাইয়ের পর বাসার সামনে রাস্তায় পড়ে আছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে আগের মতো চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কেউ তা কিনতে আসছেন না। কেউ কেউ এটাকে চামড়া ব্যবসায়ীদের কম দামে কেনার কৌশল বলে মনে করছেন।এ বছর রাজধানীর জন্য লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা, বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে, অন্যান্য বছরের মতো সায়েন্সল্যাব বা হাতিরপুল এলাকায় পশুর চামড়া নিয়ে বসতে দিচ্ছেনা পুলিশ। নিরাপত্তার ইস্যুতে তাদেরকে বসতে দেয়া হচ্ছেনা বলে জানান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশে বছরজুড়ে যে পরিমাণ চামড়া পাওয়া যায় তার অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির পশু থেকে। তাই এ সময়ের অপেক্ষায় থাকেন ট্যানারি মালিকরা।

নিউজজি/এস দত্ত

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন