শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ , ২৬ জিলকদ ১৪৪৬

শিক্ষা

‘বাংলাদেশে গবেষকদের অবস্থা কাজের লোকের মতো’

নিউজজি ডেস্ক ১৪ জানুয়ারি , ২০২৫, ১৯:১১:০৮

314
  • ‘বাংলাদেশে গবেষকদের অবস্থা কাজের লোকের মতো’

ঢাকা: বাংলাশে গবেষণা করে সাথে কাজের লোকের মতো ব্যবহার করা হয়। দরদাম করা হয় সর্বনিম্ন মজুরি দেয়ার বিষয়ে। গবেষণার ক্ষেত্রে এত কম খরচ করলে ফলাফল ভালো আশা করা যায় না। এখানে রিসার্চাররের নাম নেয়া হয় না। গবেষকদের অবস্থা এখানে কাজের লোকের মতো।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর লালমাটিয়ায় বাংলাশে ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ (বিআইএসআর) ট্রাস্টের অফিসে আয়োজিত ‘মানসম্পন্ন প্রকাশকরে সাথে গবেষণা প্রকাশনা: সুযোগ, চ্যালেঞ্জ এবং অগ্রগতির পথ’ শীর্ষক বিশেষ সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম রেজাউল ইসলাম এই মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নন-ওয়েস্টার্ন হিসেবে আমাদের দেশের গবেষকরা অনেক ক্ষেত্রেই

প্রান্তিক (মার্জিনালাইজড) গবেষক হিসেবে গণ্য হন। এই গণ্য করাটা জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে, দেশের ওপর ভিত্তি করে মার্জিনালাইজড।

তিনি বাস্তবতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, দেশ থেকে অনেকেই বিদেশে যান গবেষণার কাজ করতে। যেমন: বুয়েট, ঢাবির অনেক গবেষককে জাপান নিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের কম খরচে নেয়া যায়। এরপর সারা জাপানি ল্যাবে থেকে তাঁরা কাজ করেন। তাঁরে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় এভাবেই শেষ হয়ে যায়। লেখা বা প্রকাশনার সময় থাকে না। পশ্চিমা দেশের কাউকে আনুক দেখি!

কেন বাংলাদেশির পেপার প্রকাশিত হয় না?

প্রকাশনার ক্ষেত্রে কোনো দেশের লেখককে কম গুরুত্ব দেয়া (কান্টি বায়াস), জিয়োগ্রাফিকাল বায়াসনেসও দেখা যায়। আবার অনেক রিভিউয়ারের বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানের ওপর কাজ না থাকার

কারণে তাঁরা রিভিউ করার ক্ষেত্রে মানা করে দেন (ডিক্লাইন)। এক্ষেত্রেও অনেক পেপার পড়ে থাকে, জানান ড. রেজাউল।

আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, পশ্চিমা জার্নাগুলোর আসলেই বাংলাদেশি অথরের প্রতি কম গুরুত্ব দেয়ার বিষয় আছে। তাছাড়া, দুর্ভাগ্যবশত অনেক মানসম্পন্ন (কোয়ালিটি) পেপারও ছাপা হয় না। এক্ষেত্রে দেখা যায় রিভিউয়ার বৈষম্য করেন। পেপার প্রকাশের বিষয়ে ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকতে হবে। বিষয়টি বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের মতো বলেও মন্তব্য করেন, ঢাবি’র প্রাতিষ্ঠানিক গুণগতমান নিশ্চিতকরণ সেল বা ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) - এর পরিচালক ড. রেজাউল ইসলাম।

পেশাগত জীবন উজ্জ্বল (ক্যারিয়ার শাইন) করবে এমন কোন কিউ-ওয়ান জার্নালে প্রকাশনা করতে গেলে, অন্তত ৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশ থেকে টাকা দিয়ে পাবলিলেশনের প্রয়োজন মনে করি না। এগুলোর বাইরে অনেক ভালো ভালো জার্নাল আছে বলেও মনে করেন তিনি।

৩ প্লাটফর্মে রেজিস্টার্ড না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নয় আইকিউএসি’র উদ্যোগে ঢাবির ৯৬ টি বিভাগে (১৪ টি ইনস্টিটিউট সহ) শিক্ষার্থীরে শেখানো হচ্ছে যে কীভাবে একটি লেখাকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা যায়।

এছাড়াও গবেষণায় আগ্রহীরে প্রাথমিক অবস্থাতেই অর্কিড আইডি খোলা, গুগল স্কলার এবং সবচেয়ে বড় ইন্ডেক্সিং এর প্লাটফর্ম স্কোপাস-এ রেজিস্ট্রেশন করার পরামর্শ নে ড. রেজাউল। ঢাবি আইকিউএসি’র পরিচালক আরও জানান, এই তিনটি প্লাটফর্মে রেজিস্টার্ড না থাকলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে না বলেও ঢাকা বিশ্বব্যিালয়সহ অন্য সব বিশ্বব্যিালয়গুলোর নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলাপ চলছে। আমি জোর দিয়ে বলেছি এটি বাস্তবায়ন করার বিষয়ে।

 

গবেষণায় উদাসীনতা:

গবেষণার বিষয়ে বাংলাদেশের বিশ্বব্যিালয় শিক্ষকের উাসীনতার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এখনি যদি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, স্কোপাস রেটিং না থাকলে পদোন্নতি হবে না, শিক্ষকরা ক্লাস নেয়া বন্ধ করে দেবে। ঢাবির উচিত প্রতি বিভাগে একজন সিনিয়র শিক্ষক বাইরে থেকে নিয়োগ দেয়া। তাতে গবেষণার ক্ষেত্রে পরামর্শ পেতে পারে নতুনরা। সেমিনারের মডারেটর বিআইএসআর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. এম. খুরশিদ আলম বলেন, লেখালেখির ক্ষেত্রে আমাদের অনেকেরই উাসীনতা আছে। পত্রিকায় লেখার ক্ষেত্রেও অনেক বলার পরও লিখে উঠতে পারছেন না তারা। আর্টিকুলেশন শিখতে চাচ্ছেন না। মনে করছেন একেবারেই বিদেশি কোনো বিশ্বব্যিালয়ে চলে যাবে সেখানে গিয়ে লিখবে। পৃথিবীবিখ্যাত জার্নালে লেখার ক্ষেত্রেও তো একটা অনুশীলন দরকার। তেত্রিশ পেয়ে পাশের মানসিকতার বিষটি সমাজের সকল স্তরের মানুষকে নৈতিকভাবে অধঃপতনের দিকে নিয়ে গেছে।

জার্নালের সাইটেশনের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। অনেক জার্নালে সহজে এক্সেস পাওয়া যায় না। এছাড়াও আমাদের লেখকদের সাইট করার ক্ষেত্রেও  কার্পণ্য করেন অন্য অনেক লেখক। ড. আলম ঢাবি জানান ঢাকা বিশ্বব্যিালয়ের গ্রন্থাগারে যেন বিশ্বব্যিালয়ের শিক্ষকরে প্রকাশিত লেখার বইগুলো সংরক্ষণ করা হয়।

অ্যাবস্ট্রাক লেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ

বাংলাশে উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) -এর রিসার্চ ফেলো ড. আজরীন করিমের মতে একটি গবেষণা পত্রের সারাংশ (অ্যাবস্ট্রাক্ট) খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা এখনও পেপার পাবলিশ করেননি তাদের জন্যে শুরুটা গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাবস্ট্রাক্ট লিখতে হবে খুবই আকর্ষনীয়ভাবে, যেটা শুরুতেই আকর্ষণ করবে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতে করতে এগুলো আয়ত্ত করতে হবে। রিসার্চ পেপার শেষ করে সেখান থেকে সংক্ষেপে অ্যাবস্ট্রাক্ট লেখার অভ্যাস করতে হবে।

গ্রীন ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন গবেষণার বিষয়ে নমুনা সংগ্রহ (স্যাম্পলিং) ও সেই বিষয়ে আর্টিকেল প্রকাশের সময় গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও জগন্নাথ বিশ্বব্যিালয়ের সহকারী অধ্যাপক এ.বি.এম শাহিনুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বব্যিালয়, গোপালগঞ্জের সহকারী অধ্যাপক সানজিদা পারভিন, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির প্রভাষক ড. খান শরীফুজ্জামান, সোনারগাঁও বিশ্বব্যিালয়ের প্রভাষক ইন্দার কুমার জিদুয়ার, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্বব্যিালয়ের প্রভাষক জামিমা জাহান মীম, খুলনার সরকারি হাজী মোহাম্ম মুহসিন কলেজের প্রভাষক মো. শাকিলুর রহমানসহ গবেষণায় আগ্রহী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র- শিক্ষক ও অন্যান্য গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।

নিউজজি/নাসি 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন