শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ , ১৯ রমজান ১৪৪৫

বিনোদন

ফকির আলমগীরের আদ্যোপান্ত

রুহুল আমিন ভূঁইয়া  জুলাই ২৪, ২০২১, ০২:২৯:৩৬

406
  • ফকির আলমগীর। ছবি: ইন্টারনেট

আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনা যাদের দ্বারা প্রভাবিত তাদের মধ্যে অন্যতম বীর মুক্তিযোদ্ধা, একুশে প্রদকপ্রাপ্ত গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর । 

প্রখ্যাত এই শিল্পী ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রয়ারি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ফকির আলমগীর কালামৃধা গোবিন্দ হাই স্কুল থেকে ১৯৬৬ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন।

জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ পাস করেন। ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। 

এরই ধারাবাহিকতায় ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সঙ্গীত বলয়ে প্রবেশ করেন। তিনি ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে এই শিল্পী একজন শব্দ সৈনিক হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন।

স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রাখেন ৭১ বছর বয়সী এই শিল্পী। তার বজ্র কণ্ঠস্বরে ধরা পড়েছ নিপীড়িত মানুষের যন্ত্রণা আর সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গ। 

ছয় দশক ধরে তিনি বহন করেছেন সুর সঙ্গীতের এক ভিন্ন ধারা, যা থেকে বিচ্যুত হননি আমৃত্যু। বাংলাদেশের সব ঐতিহাসিক আন্দোলনে তিনি তার গান দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠে বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। তার মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

১৯৮২ সালে বিটিভির আনন্দমেলা অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পর দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলে। গানটি লিখেছেন আলতাফ আলী হাসু। কণ্ঠ দেয়ার পাশাপাশি গানটির সুরও করেছেন ফকির আলমগীর। 

গানে গানে জীবনের বেশির ভাগ সময় পার করেছেন তিনি। ফকির আলমগীর সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীত চর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীতশিল্পী পরিষদের সাবেক সভাপতি।

ফকির আলমগীর গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখিও করতেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয় পটে’-সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে তার।

সংগীতের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এ পর্যন্ত পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় ‘একুশে পদক’, ‘শেরেবাংলা পদক’, ‘ভাসানী পদক’, ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার’, ‘তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক’, ‘জসীমউদ্‌দীন স্বর্ণপদক’, ‘কান্তকবি পদক’, ‘গণনাট্য পুরস্কার’, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক মহাসম্মাননা’, ‘ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় পুরস্কার’, ‘ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড যুক্তরাষ্ট্র’, ‘জনসংযোগ সমিতি বিশেষ সম্মাননা’, ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড বিশেষ সম্মাননা’ ও ‘বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ’সহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।

গত ১৪ জুলাই ফকির আলমগীরের শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এজন্য তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।

কিন্তু দুর্ধর্ষ করোনার কাছে হেরে গেলেন এই প্রথীতযশা শিল্পী। শুক্রবার (২৩ জুলাই) রাতে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি এই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। 

তার মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যর মধ্যে দিয়ে থেমে গেল বাংলাদেশের গণসংগীতের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ফকির আলমগীরের দরদভরা কণ্ঠ। দরাজ গলায় আর গাইবেন না তিনি।

নিউজজি/রুআ

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন