সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১ , ১৭ রমজান ১৪৪৬

ফিচার

ভারতীয় বাঙালি চিত্রশিল্পী ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদার

নিউজজি ডেস্ক ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২৫, ১৬:৩৭:২৪

80
  • সংগৃহীত

ঢাকা: ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদার ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি চিত্রশিল্পী। শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় শিষ্যদের অন্যতম ছিলেন। তার শিল্পীস্বত্বায় ছিল খাঁটি ভারতীয়ত্বের বৈষ্ণবীয় প্রভাব।

ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদারের জন্ম ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ৩১ শে জুলাই (১২৯৮ সালের ১৫ শ্রাবণ বঙ্গাব্দে) বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জগতাই গ্রামে। অতি অল্প বয়সে তিনি মাতৃহারা হন। পিতা কেদারনাথ মজুমদার ছিলেন গ্রামের সহজ সরল মনের মানুষ, পেশায় সাব-রেজিস্ট্রার। কিন্তু বাড়িতে ছিল বৈষ্ণবীয় পরিবেশ। কীর্তনের আসরও বসত নিয়মিত । নিজে আগ্রহী ছিলেন সঙ্গীত ও নাটকে। পড়াশোনার সাথে নিজের তৈরি যাত্রাদলে ছোটবেলা থেকেই অংশগ্রহণ করতে দিতেন ক্ষিতিন্দ্রনাথকে। নিমতিতা মাইনর স্কুল থেকে পাশ করে তিনি দু’বছর পড়াশোনা করেন পাকুড় স্কুলে। তার শৈল্পিক গুণে মুগ্ধ হন স্থানীয় নিমতিতা গ্রামের জমিদার ‘নাট্যশিল্প ও সংস্কৃতি জগতের গুণগ্রাহী’ মহেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। তার আগ্রহে ও আনুকূল্যে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার আর্ট স্কুলে (বর্তমানে গভর্মেন্ট আর্ট কলেজ) ভর্তি হন। এবং ২০ টাকার মাসিক বৃত্তি লাভ করেন। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংস্পর্শে আসেন। নবগঠিত ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্টের সাথে যুক্ত হন।

১৯১২ খ্রিস্টাব্দে নন্দলাল বসুর সাথে শিক্ষকতার দায়িত্ব গ্রহণ করেন ইন্ডিয়ান স্কুল অব ওরিয়েন্টাল আর্টে। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন এবং ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু তার শিল্পকর্ম থেমে থাকেনি। তার অঙ্কিত রাধাকৃষ্ণের দেহ শীর্ণ এবং আভঙ্গ, ত্রিভঙ্গ ও বহু ভঙ্গ ঢঙের। তিনি বাল্যকাল পিতার যাত্রাদলের পৌরাণিক কাহিনীর বিষয়বস্তু গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল মনে, যার প্রতিফলন লক্ষ্য করা গেছে শিল্পকর্মে। বিশেষকরে বৈষ্ণবীয় বিষয়বস্তু তার অঙ্কন প্রেরণার প্রধানতম উৎস। সেই সাথে সূক্ষ্ম রূপরেখা, বিশিষ্ট অলংকরণ এবং উচ্চতর বিন্যাসযুক্ত অঙ্গভঙ্গি ও অভিব্যক্তি ছিল যেমন তার শিল্পকর্মের নিজস্বতা, তেমনি নান্দনিক আনন্দদানে ছিল সর্বজনীন আবেদন । শ্রীচৈতন্যের বৈষ্ণবধর্মের পাশাপাশি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুনজাগরণবাদী আন্দোলনে বহুলাংশে প্রভাবিত হয়েছিলেন।

১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ হতে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে তার অঙ্কিত চিত্রের প্রদর্শনী শুরু হয় এবং সুনাম অর্জন করেন। তার কাজে মুগ্ধ হয়েছেন বিলেতের রয়াল আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ উইলিয়াম রোথেনস্টাইন, মুসোলিনি কন্যা জাপানের প্রখ্যাত চিত্রসমালোচক ওকাকুরা, আর আমাদের প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। কাশীতে, কলকাতায় তার চিত্র প্রদর্শনী রসিক সমাজে সমাদৃত হয়েছে। দেশের দিল্লিতে ন্যাশনাল থিয়েটার অব আর্ট গ্যালারি সহ বিভিন্ন স্থানে বিদেশের বহু জায়গায় তার অঙ্কিত চিত্র সংরক্ষিত আছে। উল্লেখযোগ্য ছবির কয়েকটি হল - 'নৃত্যরত চৈতন্য','রামলীলা', 'রাধিকা', 'দি মুন', 'কচ ও দেবযানী' ইত্যাদি।

১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় বাংলা কংগ্রেস কমিটি তাঁকে মেরিট পুরস্কারের ভূষিত করে এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডি.লিট প্রদান করে।

ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদার ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ ই ফেব্রুয়ারি এলাহাবাদে ৮৩ বৎসর বয়সে পরলোক গমন করেন।

নিউজজি/পিএম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন