মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১ , ১৮ রমজান ১৪৪৬

ফিচার

কবি আল মাহমুদের জন্মদিন আজ

নিউজজি ডেস্ক ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০২৫, ১৪:২২:০০

160
  • ছবি: ইন্টারনেট

ঢাকা: আবহমান বাংলা ও বাঙালি ঐতিহ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আল মাহমুদের ৮৯তম জন্মদিন আজ। ১৯৩৬ সালের এই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মৌড়াইলের মোল্লা বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী আল মাহমুদ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এক ও অবিভাজ্য সত্ত্বা।

তুমুল আলোচিত কবি আল মাহমুদ তিন দশক ধরে আধুনিক বাংলা কবিতার শহরমুখী প্রবণতার মধ্যেই ভাটি বাংলার জনজীবন, গ্রামীণ আবহ, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের জীবনপ্রবাহ এবং নর-নারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহকে পরম আন্তরিকতার সঙ্গে তুলে এনেছেন তার কবিতায়। বাংলা কবিতাকে সমৃদ্ধ করেছেন নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাকভঙ্গির সমন্বয়ে। বাংলা কবিতায় লোকজ ও গ্রামীণ শব্দের বুননশিল্পী কবি আল মাহমুদ নির্মাণ করেছেন এক মহিমান্বিত ঐশ্বর্যের মিনার। তিনি বেড়ে উঠেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে।

কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাই স্কুল ও পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ১৮ বছর বয়স থেকে প্রকাশিত হতে থাকে তার কবিতা। সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে ১৯৫৪ সালে কবি ঢাকায় আসেন। সমকালীন বাংলা সাপ্তাহিক পত্র-পত্রিকার মধ্যে কবি আবদুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক কাফেলায় লেখালেখি শুরু করেন। আর কর্মজীবনের শুরু হয় দৈনিক মিল্লাতে যোগ দেয়ার মাধ্যমে। ১৯৫৫ সালে কবি আবদুর রশীদ ওয়াসেকপুরী কাফেলার চাকরি ছেড়ে দিলে তিনি সেখানে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।

আল মাহমুদ একজন সংগ্রামী কবি। তিনি জীবনকে নাড়িয়ে দেখেছেন নানাভাবে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত ও কবি সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল, কলকাতার নতুন সাহিত্য, চতুষ্কোণ, ময়ূখ, কৃত্তিবাস ও কবি বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত বিখ্যাত ‘কবিতা’ পত্রিকায় লেখালেখির সুবাদে ঢাকা-কলকাতার পাঠকদের কাছে সুপরিচিত হয়ে ওঠে তার নাম।

১৯৬৩ সালে প্রকাশিত ‘লোক লোকান্তর’, ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত ‘কালের কলস’ ও ‘সোনালি কাবিন’ কবিতাগ্রন্থ বাংলা কবিতার প্রথম সারির একজন কবি হিসেবে তাকে প্রতিষ্ঠিত করে। কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও বাংলা গল্পের এক আশ্চর্য সাহসী রূপকার আল মাহমুদ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত আল মাহমুদ ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের বিশ্বাসীদের মুখপত্র এবং সরকারবিরোধী একমাত্র রেডিক্যাল পত্রিকা ‘গণকণ্ঠ’ বের হলে তিনি এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। গণকণ্ঠ ওই সময় ব্যাপক আলোচনায় আসে। গণকণ্ঠ পত্রিকা সম্পাদনা করতে গিয়ে তিনি এক বছর কারাভোগ করেন। পরে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু তাকে শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহ-পরিচালক পদে নিয়োগ দেন। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ সালে অবসর নেন।

বাংলা কবিতায় উজ্জ্বল অবদানের জন্য ১৯৮৬ সালে নন্দিত এ কবি কবিতায় রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার, জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি পুরস্কার, কলকাতা থেকে কবিতার জন্য কাফেলা সাহিত্য পুরস্কার এবং ছোটগল্পের জন্য বাংলাদেশে হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

আল মাহমুদের উল্লেখযোগ্য কবিতাগ্রন্থ হচ্ছে- লোক লোকান্তর; কালের কলস; সোনালি কাবিন; মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো; আরব্য রজনীর রাজহাঁস; বখতিয়ারের ঘোড়া; অদৃশ্যবাদীদের রান্নাবান্না; দিনযাপন; দ্বিতীয় ভাঙ্গন; নদীর ভেতরের নদী; না কোনো শূন্যতা মানি না; ময়ুরীর মুখ; প্রেম প্রকৃতি দ্রোহ আর প্রার্থনা কবিতা এবং উড়াল কাব্য।

তার গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-পানকৌড়ির রক্ত; সৌরভের কাছে পরাজিত; গন্ধবণিক; আল মাহমুদের গল্প; গল্পসমগ্র; প্রেমের গল্প। এছাড়া তিনি উপন্যাস- কবি ও কোলাহল;  কাবিলের বোন ও উপমহাদেশসহ বহু প্রবন্ধ ও শিশুতোষ গ্রন্থ রচনা করেছেন।

নিউজজি/পিএম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন