মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ , ২০ জুমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ফিচার

বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার জন্মদিন আজ

নিউজজি ডেস্ক  অক্টোবর ৬, ২০২৫, ১৪:৫২:৪৮

204
  • বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার জন্মদিন আজ

ঢাকা: নিদারুণ দারিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াই করে যে মানুষটি জীবনে সফলতা অর্জন করেছিলেন তিনি হলেন মেঘনাদ সাহা। বিশ্ব বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর অবদান আজও আমাদের বিস্মিত করে। কৃষ্ণনক্ষত্রের রহস্য সন্ধান থেকে শুরু করে নদীমাতৃক ভারতবর্ষের সেচ পরিকল্পনা অথবা আয়নমন্ডল সংক্রান্ত অনুসন্ধান প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে মেঘনাদ সাহা তাঁর কৃতিত্বের পরিচয় রেখে গেছেন।

১৮৯৩ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশের অন্তর্গত ঢাকা জেলার শেওড়াতলি গ্রামে মেঘনাদ সাহা জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জগন্নাথ সাহা এবং মাতা ভুবনেশ্বরী।

ছোটো থেকেই তাকে লড়াই করে যেতে হয়েছে নিদারুণ দারিদ্রতার সঙ্গে। মিডল স্কুল থেকে পাশ করে ১৯০৬ সালে ভর্তি হলেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে। মাসে বারো টাকা বৃত্তি পেলেন। শুরু হলো জীবনের এক নতুন অধ্যায়। ১৯০৯ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ভর্তি হলেন ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে। বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা শুরু করলেন। এরপর কলকাতায় এসে ভর্তি হলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। এখানে সহপাঠী হিসেবে পেয়েছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ এবং জ্ঞানেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় এর মত বিজ্ঞানীদের।

গণিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে বি.এস.সি. পাস করলেন। ভর্তি হলেন এম.এস.সি. ক্লাসে। অবশেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.এস.সি. উপাধি লাভ করলেন।১৯১৮ সালে পেলেন প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি ও গুরুপ্রসন্ন ঘোষ ফেলোশিপ।

শশীমোহন রায়ের কন্যা রাধারানী দেবী কে বিবাহ করেছিলেন মেঘনাদ সাহা। তখন রাধা রানীর বয়স মাত্র চোদ্দো বছর। সংসার জীবনে রাধারানী সাতটি সন্তানের জননী হয়েছিলেন।

১৯১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মেঘনাদ ইউরোপ অভিমুখে যাত্রা করলেন। ১৯২০সালে নভোবস্তু বিজ্ঞান সংক্রান্ত তার একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। এই গবেষণা পত্রটি বিজ্ঞান মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।

 ১৯২০ সালের লন্ডনের ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিনে মেঘনাদের কয়েকটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হল তারকা সংক্রান্ত গবেষণার বারোটি আবিষ্কারের বিষয়ে গবেষণা পত্র। এই গবেষণাপত্র গুলিকে বিজ্ঞানের যুগান্তকারী অবদান স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞানী হিসেবে মেঘনাদ সাহার সবথেকে বড় কৃতিত্ব সূর্যের বর্ণালী বিশ্লেষণ করা। তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে পার্থিব সব জিনিস গুলি আছে সূর্যদেহে। সর্বসমক্ষে হিসাব কষে দেখিয়ে ছিলেন সূর্য দেহের প্রতি ১০০ ভাগের মধ্যে হাইড্রোজেন আছে ৮১ ভাগ, বাকি ১৮ ভাগ হিলিয়াম, ০.৭ ভাগ কার্বন, অবশিষ্ট ০.৩ ভাগ নাইট্রোজেন, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, সিলিকন, সিসা, লোহা, অক্সিজেন ইত্যাদি। পরীক্ষার সাহায্যে আরো প্রমাণ করলেন শুধু সূর্য নয়, যে কোন নক্ষত্রপৃষ্ঠে এ ধরনের তাপ থাকলে সব কটি মৌলিক পদার্থ গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে।

১৯২০ সালের শেষের দিকে মেঘনাদ  কলকাতায় ফিরে এলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আশুতোষ এর অনুরোধে পদার্থবিদ্যা বিভাগে খয়রা অধ্যাপক পদে যোগ দিলেন। "ইউ পি অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স" একাডেমির প্রথম সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক মেঘনাদ সাহা।

১৯৩০সালে এলাহাবাদে বিজ্ঞান পরিষদ স্থাপন করেন। ১৯৩৪ সালে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের মূল সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন মেঘনাদ সাহা। ১৯৩৮সালে কলকাতায় এসে তিনি গঠন করলেন "ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স"। এখানেই প্রথম সাইক্লোট্রন যন্ত্র স্থাপন করলেন।

গবেষণার পাশাপাশি মেঘনাদ সাহা কে আমরা মনে রাখবো একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবে। ১৯১৪ সালে বন্যাত্রানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন। ১৯২৩সালে বেঙ্গল রিলিফ কমিটিতে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের সহযোগী ছিলেন। স্বাধীনতার পর মানুষের দুঃখ দারিদ্রের আন্দোলনে নিজেকে সামিল করেছিলেন তিনি।

আমরা বলতে পারি মেঘনাদ সাহা গবেষকের পাশাপাশি একজন উন্নত মানের লেখক ছিলেন। ১৯৪৫ সালে রাশিয়া ভ্রমণ করে তিনি এই সংক্রান্ত একটি বই লিখেছিলেন "রাশিয়ায় আমার অভিজ্ঞতা" নামে। তাঁর লেখা অপবিজ্ঞানের বই উচ্চ শিক্ষাস্তরে দীর্ঘকাল ধরে সমাদৃত হয়ে আসছে। তাঁর লেখা অন্যান্য বই গুলির মধ্যে আছে "দি প্রিন্সিপাল অফ রিলেটিভিটি"(The Principle of Relativity), "ট্রিটিজ অন হিট"( Treatise on Heat) ,"ট্রিটিজ অন মডার্ন ফিজিক্স"(Treatise on Modern Physics) ।

১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি তাঁর কর্মস্থল ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ভবনের পরিকল্পনা কমিশনের দিকে যাচ্ছিলেন, এমন সময় পড়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর ১০টা ১৫মিনিটে মারা যান। রিপোর্টে বলা হয় তিনি মারা যাওয়ার ১০মাস আগে থেকে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তাকে পরের দিন কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে দাহ করা হয়।

ভারতের বিজ্ঞানের অগ্রগতির ক্ষেত্রে ড: মেঘনাদ সাহার অবদান কে আমরা কখনোই ভুলতে পারবো না। শিক্ষক এবং গবেষক হিসেবে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। বিজ্ঞানের প্রত্যক্ষ প্রয়োগে বিশ্বাস করতেন। তার সম্পর্কে আইনস্টাইন মন্তব্য করেছিলেন- "Dr. M. N. Saha has was an honoured man".  তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউটটি আজও তাঁর নামে এগিয়ে চলেছে- "সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স" নামে। সর্বোপরি আমরা বলতে পারি ভারতের বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে ড: মেঘনাদ সাহা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

নিউজজি/হাআ

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন