বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ , ২৬ রমজান ১৪৪৬

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব, হিংস্রতা

সামছুল আলম সাদ্দাম ১৭ আগস্ট , ২০২৩, ১২:১১:২০

778
  • জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব, হিংস্রতা

আবারও দেশের মানুষ দেখল জামায়াত-শিবিরের হিংস্রতা। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের চকরিয়ায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। সোমবার রাতভর শাহবাগ এলাকা অবরোধ করে অগ্নিসংযোগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভাঙচুর, দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। ধ্বংসাত্মক তাণ্ডবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা রোগীদের মধ্যে। পুলিশ বলছে, সাঈদীর জানাজার দাবি তোলা হলে দুবার তাদের জানাজা আদায় করতে বলা হয়।

এরপরও তারা জানাজার নামাজ না পড়ে পুলিশের ওপর হামলা করে, তাণ্ডব চালায়। হামলায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর ও দুটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জামায়াতের যে চরিত্র পাল্টায়নি, তাদের এমন আক্রমণে আবারও সেটি প্রমাণিত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার। ২০১২-১৩ সালে পুলিশকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা, হেলমেট দিয়ে পিটিয়ে পুলিশের মাথা থেঁতলিয়ে দেয়ার মতো চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ তারা আবারও করল। এর আগে গুজব ছড়ানো হয়েছে সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে। তেমনি সোমবার ভূমিকম্প নিয়ে সারাদেশে গুজব ছড়ানো হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত-শিবির নানাভাবে মাঠে নামার চেষ্টা করছে। অরাজকতা করে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত। নানা কারণেই এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রচণ্ড রাজনৈতিক চাপে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত এই দলটির প্রথম সারির প্রায় সব নেতা দণ্ডিত হয়েছেন। তাদের কারও কারও ফাঁসিতে ঝুলে জীবনাবসান হয়েছে। কেউ কেউ আজীবন দণ্ড নিয়ে কারাগারের প্রকোষ্ঠে। যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। সাঈদীর জানাজা কেন্দ্র করে সারাদেশে নৈরাজ্য করতে চেয়েছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। জানা গেছে, নিবন্ধন হারানো দলটি আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নানা কৌশলে মাঠে নামার চেষ্টা করছে। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর ২৮ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এত কিছুর পরও জামায়াত আছে। জামায়াত আছে, কারণ তাদের পেছনে বিএনপি আছে। দলের নিবন্ধন বাতিল হলেও তারা আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠছে।

সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যের পথে হাঁটা বিএনপিসহ রাজপথের বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে ‘যুগপৎ’ আন্দোলনে নিজেদের সক্রিয় করতেও প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী দলটি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর সারাদেশে জামায়াতের রাজনীতিতে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়। তাছাড়া প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রেও প্রশাসনিক বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এছাড়া ২০১৩ ও ২০১৫ সালে আগুন-সন্ত্রাসের মামলায় দলটির নেতাকর্মীদের নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে আদালতে। এরপরও তারা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। দলটিকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার মামলাটি ঝুলে আছে। জামায়াত সত্যি নিষিদ্ধ হবে কিনা, নিষিদ্ধ হলে জামায়াত কী কৌশল নেবে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচনে লড়াইয়ের অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনো লাভ নেই। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে নির্মূল করতে হবে।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন