বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ , ২৬ রমজান ১৪৪৬

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

ঝুঁকিতে মানসিক স্বাস্থ্য

শ্যামা সরকার ৩১ মার্চ , ২০২৪, ২৩:৪৫:৩৬

3K
  • ঝুঁকিতে মানসিক স্বাস্থ্য

বুদ্ধি এবং বিবেকবোধের সমষ্টিগত রূপ মন। যা প্রতিক্ষণে পরিবর্তনশীল। চিন্তা, অনুভূতি, আবেগ, ইচ্ছা এবং কল্পনা- মানসিক ক্রিয়াকলাপ। এটি শারীরিক ভিত্তি নয়, বরং মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত। মন আর মানসিক স্বাস্থ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের মন অভ্যন্তরীণ আচরণ এবং আবেগের সমষ্টি। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বারোপ অত্যন্ত জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র মতে, স্বাস্থ্য হল ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক- এই তিন অবস্থার একটি সুস্থ সমন্বয়। বর্তমান সময়ে নৈতিক অবক্ষয়ের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের অবক্ষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা বিভিন্ন মিডিয়ায় উঠে এসেছে।

 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঘোর অমানিশার মধ্যে জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ আলোর দ্যুতি ছড়ানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বৃথা চেষ্টা (কলঙ্ক চাপা থাকে না)। কলুষিত শিক্ষক সমাজ। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পাঠদান করেন তাদের অধিকাংশই নৈতিক স্খলন, অদক্ষ, সাম্প্রদায়িক মন-মানসিকতা ও অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় বহন করেন (এরকমও দেখা যায়, যারা কোন দিনও শিক্ষকতা পেশায় জড়িত ছিলেন না অথচ ক্ষমতাবলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক)। শিক্ষকের দ্বারা লাঞ্ছিত ও লালসার শিকার শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থী দ্বারা শিক্ষক খুন, শিক্ষার্থীদের ভয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরতে না পারা, সংস্কৃতিতে নগ্নভাবে আঘাত, ধর্মীয় উন্মাদনাÑ এ শিক্ষা কে দিচ্ছে এবং কে পাচ্ছে? এই দেয়া-নেয়ার মধ্যে কারা জড়িত? সকল বলয়ের মধ্যে শিক্ষক সমাজ জড়িত। তারা মূল্যবোধের চর্চা করেন না ফলে শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছে অনৈতিক কার্যকলাপে।

 

তবে বাস্তবতা হলোÑ একটি আদর্শ পরিবার যেমন একজন শিক্ষকের দরকার তেমনি একজন শিক্ষার্থীরও দরকার। নৈতিক শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার, শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, আত্মসম্মানবোধ-এগুলো পারিবারিক শিক্ষা। এই মানবীয় পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা একটি শিশুকে বা শিক্ষার্থীকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন একজন শিক্ষক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একজন তথাকথিত শিক্ষকের চাইতে একজন শিক্ষার্থী অনেক মানবিক গুণসম্পন্ন। একজন মানসিক সুস্থসপন্ন ব্যক্তি অনেক বেশি সার্থক। তাই বলা যায়, মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ থাকা জরুরি। 

 

ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতিÑ একটি জাতির সূচক। একজন আদর্শবান শিক্ষককে এটি ধারণ করতে হবে। অনেকে তো বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে আসেন। কাড়ি কাড়ি বই ও দামি বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ে ‘বোধে’র জায়গা তৈরি হয়নি। যার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়ে মানবীয় গুণাবলীর ধস। কথাবার্তা, আচার-আচরণে নেই ভারসাম্য। 

 

ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এটাই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এ ঐশ^র্য ও মাধুর্য হারাচ্ছে বাংলাদেশ। রংহীন ও শ্রীহীন। গ্রাস করছে উগ্রবাদীরা। ধর্মকে আশ্রয় করে বিভিন্ন ফতোয়া জারি। ধর্মীয় আচরণের মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা অন্যান্য আচরণ থেকে পৃথক। 

 

ধর্ম কীভাবে মানুষের জীবনে এতো গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ করলো এবং ধর্মীয় আবেগ ধীরে ধীরে পরবর্তীকালে ব্যাপকরূপে ধর্মীয় চেতনায় উত্তরিত হলো। পৃথিবীর সকল ধর্মেই অতীন্দ্রিয়, রহস্যময় শক্তিতে বিশ্বাস এবং তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। এর উদ্দেশ্য হলো এসব রহস্যময় শক্তিকে সন্তুষ্ট রাখা এবং তার দ্বারা নিজেদের ব্যবহারিক জীবনকে অবিঘ্নিত ও নিশ্চিন্ত রাখা এবং ক্ষতিকারক অশুভ শক্তিসমূহের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা- প্রাচীনকালে ধর্মকে এভাবে ব্যাখ্যা করা হতো। ধর্ম মানে ধারণ করা। যা কিছু শুভ তাই ধারণ করতে হবে। অন্যায় ও অধর্ম থেকে বিরত থাকাই হলো ধর্ম। কিন্তু ধর্ম ব্যাখ্যা ভূলুণ্ঠিত। ধৈর্য, সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও সহমত পোষণ- এসব হারিয়ে ফেলছে মানুষ। ধর্মীয় উন্মাদনা দেখে ঔপন্যাসিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের কথা বারবার মনে পড়ছে। আজকের দিনে এসে কতটা যৌক্তিক এ উপন্যাস। কুসংস্কার, অন্ধবিশ^াস ও ধর্মীয় ভয়ভীতি এখনকার সময়ের উপজীব্য বিষয়। এখানেও দেখা যায়, মানসিক বিকৃতি। মানসিক ভারসাম্য না হারালে এগুলো করা সম্ভব নয়।

 

মানবিক মূল্যবোধ হারাচ্ছি প্রতি পদে পদে। বড় পদ, মোটা অংকের বেতন- গর্ব করে বলা হয়, ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে দীর্ঘকাল কাজ করছি। কোথায়, কখন কী বলা উচিত বা অনুচিত, স্থান, কাল, পাত্র- এ জ্ঞান যার মধ্যে ডেভেলপ হয়নি তাদের কী বলা যায়? মানসিক ভারসাম্যহীন!! মানসিক স্বাস্থ্যের ঘাটতি।

 

কর্মপরিবেশ সুস্থ ও সুন্দর হবে- এটি দাবি নয়, এটি অধিকার। কারণ সুস্থ পরিবেশ তৈরি করে উৎপাদনশীল জনশক্তি। এই জনশক্তি শারীরিক ও মানসিক শক্তি ও স্বাস্থ্য হারিয়ে ফেললে অনিবার্যভাবে নেমে আসে দুর্যোগ। বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সর্বজনবিদিত উক্তিটি উল্লেখ না করে পারছি না :

বিদ্যা সহজ

শিক্ষা কঠিন

বিদ্যা আবরণে আর 

শিক্ষা আচরণে। 

 

দেশের সকল সেক্টরেই চলছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও অরাজকতা। বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বের বিষয়টি। তাই সচেতনতার বিকল্প নেই, সকল স্তরে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রয়োগ ঘটাতে হবে। সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। বাড়বে মানসিক স্বাস্থ্যের উৎকর্ষতা।

 

লেখক:

অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ও প্রধান

কমিউনিকেশন, পাবলিকেশন অ্যান্ড রিসার্চ

উদ্দীপন।

 

 

 

 

 

 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন