সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ , ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

যুক্তরাষ্ট্রের একপেশে রিপোর্ট ও বাংলাদেশের মানবাধিকার

ইউসুফ আলী বাচ্চু ২৬ এপ্রিল , ২০২৪, ১২:৩০:২১

786
  • যুক্তরাষ্ট্রের একপেশে রিপোর্ট ও বাংলাদেশের মানবাধিকার

জন্মের পর মানুষ সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার জন্য যা প্রয়োজন তাহার প্রাপ্যতাই মানবাধিকার। সার্বজনীন, সহজাত, হস্তান্তরযোগ্য নয় এবং অলঙ্ঘনীয়। মানুষমাত্রই এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না।

এ অধিকারগুলো কারও করুণা নয়, বরং যার যার প্রাপ্য। এগুলো লালন করার অনুমোদন সব মানুষেরই রয়েছে। কেউ কারও কাছ থেকে এ অধিকার কেড়ে নেয়ার ক্ষমতা কখনোই রাখে না। মূলত যা কিছু মানবসত্তা বা মর্যাদাকে সুরক্ষিত করে, বিকশিত করে এবং পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে, তাই মানবাধিকার।

কিন্তু আমরা কি দেখতে পাই সারা বিশ্বে হানাহানি লেগেই আছে। কেড়ে নেয়া হচ্ছে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার। আর এই কর্মের মাস্টারমাইন যে দেশে তারাই আবার আঙ্গুল তোলে বাংলাদেশের মতো একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ নিয়ে। আমাদেরও যে অর্জন আছে তা তারা স্বীকার করতে চায় না। বর্তমান সরকার তথা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মানবাধিকার পরিস্থিতির যে উন্নতি হয়েছে তা তারা এড়িয়ে গিয়ে একটি মনগড়া রির্পোট দিয়েছে। এতো উন্নতি ও অর্জন থাকার পরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে তা স্বীকার করেনি। আমরা যতই আশা করি না কেন বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। কারণ একটি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকে।

এর পরেও নাগরিকদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সময় বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে, তবে যেসব ক্ষেত্রগুলোতে আরও উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে সেগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা আসার পর থেকে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায় পরিবর্তন গুলো চোখে পড়ার মতো। এর মধ্যে রয়েছে, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিশুদের অধিকার, বয়স্ক ব্যক্তিদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক সমাবেশ করার স্বাধীনতা। এত অর্জন সত্ত্বেও দুঃখের বিষয় মার্কিন প্রতিবেদনে সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন স্বীকার করা হয়নি। এছাড়া কিছু বিচ্ছিন্ন এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রতিবেদনে স্পষ্ট যে, এটি পৃথক রিপোর্ট করা বা অভিযুক্ত ঘটনার রেফারেন্স দিয়ে পরিপূর্ণ নয়।

অথচ সারা বিশ্বের অশান্তির মুল কারণ এই মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র। ফিলিস্তিন যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হাড়িয়েছে, রক্ষা পায়নি সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীরা। ফিলিস্তিনীদের ভুমি দখল করে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনে সহয়তা করেছে এই বিশ্ব-মোড়ল। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে ফিলিস্তিনি জনগণকে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে খাদ্য তো দুরের কথা তাদেরকে পানিটুকু দেয়া হয়নি যা বিশ্ববাসী দেখেছে। পবিত্র রমজান মাসে ফিলিস্তিনির মানুষ সারাদিন রোজা রেখেছেন কিন্তু ইফতারির সময় ইফতারি তো দূরের কথা পানীয় জলও মেলেনি। অনেকে ঘাস, লতা-পাতা দিয়ে ইফতার করেছেন। এই সময় তাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল।

এবার আসি ১৯৭১ সালের সেই ভয়াবহ গণহত্যা প্রসঙ্গে। সেদিন মানবাধিকার কোথায় ছিল। ৩০ লাখ নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করল ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জৎ কেড়ে নিল। মায়ের বুকের দুধের সন্তানকে  বেনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করল। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে, বাবা মায়ের সামনে মেয়েকে ধর্ষণ করছে পাকিস্তানি বাহিনী। তখন তো তাদের বাহবা দিয়েছেন। এত কিছুর পরেও বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। বাঙালি পেল মুক্তির স্বাদ। কিন্তু আমরা কী দেখলাম, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়েছিল ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, জাতীয় ৪ নেতার হত্যা এবং এই হত্যাকাণ্ডের খুনিদের বিচারের আওতায় না আনার জন্য ইনডেমনিটি অ্যাক্ট পাস করা। কেউ যাতে খুনিদের বিচার করতে না পারে সেজন্য দায়মুক্তি অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে বিচার চাওয়ার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের আগে এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে মামলা করা সম্ভব হয়নি।

যে দেশগুলো মানবাধিকার রক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি কথা বলে বেড়ায়, যুক্তরাষ্ট্র তাদের মধ্যকার অন্যতম। এই যুক্তরাষ্ট্রেও রয়েছে সাদা-কালোর বৈষম্য। আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের হস্তক্ষেপ ও সামরিক আগ্রাসনও মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে ওয়ান-ইলেভেনের পর আফগানিস্তান ও ইরাকের মাটিতে সামরিক আগ্রাসন উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ভিয়েতনামের বেশ কিছু জায়গায় আজও অনেক বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হচ্ছে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলিদের আগ্রাসনকেও জোরালোভাবে সমর্থন দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অংশীদার হতে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রকে। ইয়েমেনে সৌদি জোটের সামরিক আগ্রাসনকেও বরাবরই সমর্থন করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদন নিয়ে ইতিমধ্যে নাগরিক সমাজের মাঝে ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে। তারা বিভিন্ন ভাবে এর প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছেন। আবু সাঈদ নামের একজ মন্তব্য করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে মানবাধিকারের কথা বললে কঠোর সমালোচনা করতে ইচ্ছে হয়। গোটা মধ্যে প্রাচ্যের মাটি রক্তে রঞ্জিত ক্ষতবিক্ষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থে অস্ত্রে প্রকাশ্যে সমর্থনে ইসরায়েলে নৃশংস বর্বরতা হাজারো হাজার নারী শিশু মানুষের মৃত্যু লাশের পাহাড় ফিলিস্তিনের গাজায়। কোথায় মানবাধিকার? পৃথিবীর একমাত্র সুবিধাবাদী কৌশল মিথ্যাবাদী আমেরিকা। চোরকে বলে চুরি কর আর গৃহস্থ বলবে ধর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চরিত্র বর্তমানে বুঝে গেছেন গোটা পৃথিবী। কিছু দালাল মিডিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোলামের মত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে কিছু বলার সাথে সাথেই বড় বড় অক্ষরে শিরোনাম করেন। সবকিছুই লিখেন গণহত্যাকারী দেশ। ফিলিস্তিনের হাজারো হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমান দায়ী। এদের মুখে মানবাধিকারের কথা মানায় না।

লেখক: সাংবাদিক

বি.দ্র.- (এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। নিউজজি২৪ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন