মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ , ২০ জুমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

ফ্লোটিলা অভিযান,মানুষ ধরবে মানুষের হাত

মাঈনুদ্দীন দুলাল ২ অক্টোবর , ২০২৫, ১৫:৪৬:১৮

386
  • ফ্লোটিলা অভিযান,মানুষ ধরবে মানুষের হাত

" মানুষ দাঁড়াবে মানুষের পাশে।
মানুষ ধরবে মানুষের হাত।
তোমার কান্নার ঝাঁঝে আমাদেরও
চোখ জ্বলে। 
তোমার হাসি ছোঁয়াছে ব্যাধি হয়ে
আমাদেরও ঠোঁটে"
 
সকল বাধা,ভয়,উপেক্ষা ঠেলে গাজার দুর্গত মানুষের সাহায্যে কিছু মানুষের এগিয়ে যাওয়া সাহস এ কথা মনে করে দেয়।
 
ফ্রিডম ফ্লোটিলা ফাউন্ডেশন, গ্লেবাল মুভমেন্ট টু গাজা, মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা এবং সুমুদ নুসানতারা—এই চার আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ঐক্যমঞ্চ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বন্দর থেকে খাদ্য ও ওষুধে নিয়ে ৪৩টি নৌযানের বহর গাজার উদ্দেশে রওনা দেয় গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। জাহাজগুলোতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আছেন ৪৪টি দেশের ৫০০ জন নাগরিক। এই নাগরিকদের কেউ পার্লামেন্টারিয়ান, কেউ আইনজীবী, কেউ রাজনৈতিক আন্দোলনকর্মী এবং কেউ বা স্বেচ্ছাসেবী। 
 
বুধবার ভূমধ্যসাগরের গাজা উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছিল গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নৌবহর। সেদিন সন্ধ্যার পর গাজা উপকূল থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় নৌবহরের চারপাশ ঘিরে ধরে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ বহরের ১৩টি নৌযান আটক করে। 
 
তবে ইসরায়েলি নৌবাহিনী ১৩টি নৌযান আটকে দিলেও বাকি ৩০টি নৌযান গাজার উপকূলের উদ্দেশে যাত্রা অব্যাহত রেখেছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। বুধবার ১৩টি জাহাজ আটকের পর এক বিবৃতিতে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মানবাধিকার কর্মীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “ইসরায়েলের এসব অবৈধ পদক্ষেপ আমাদের আটকে রাখতে পারবে না। আমরা আমাদের মিশন চালিয়ে যাব এবং গাজায় একটি মানবিক করিডর খুলব।”
 
গত ১৮ বছর ধরে গাজার সমুদ্র উপকূল অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েল। গাজায় কোনো সমুদ্রবন্দর নেই এবং ইসরায়েলের অবরোধের কারণে আন্তর্জাতিক কোনো জাহাজ বা নৌযান গাজা উপকূলের কাছাকাছি যেতে পারে না। ফ্লোটিলার নৌবহর সেখানে পৌঁছালে তা হবে ১৮ বছর গাজার উপকূলে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক নৌবহরের নোঙ্গর করা।
 
কিছুদিন আগে প্রকাশিত ইসরায়েলের হারেৎজ পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এটি এ উপত্যকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশের সমান। 
নিহত ফিলিস্তিনির এ সংখ্যা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি। এ মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজার  জনের বেশি নিহত হয়েছেন।
 
হারেৎজ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় সরাসরি নিহত হওয়ার পাশাপাশি বহু মানুষ পরোক্ষ কারণেও প্রাণ হারিয়েছেন। যেমন-অনাহার, ঠান্ডা ও রোগে ভুগে। যুদ্ধের কারণে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।
 
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ফ্লোটিলা নৌ বহরকে ইসরায়েলের বাধা "হতাশাজনক ও নির্লজ্জ কাজ"। দলটি অভিযোগ করেছে যে, ফ্লোটিলার মধ্যে থাকা একটি জাহাজকে ইচ্ছাকৃতভাবে সমূদ্রে ধাক্কা দেয়া হয়েছে,কয়েকটি নৌকা ডুবিয়ে দেয়ার জন্য জলকামান ছোঁড়া হয়েছে। 
 
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রান্সেসকো আলবানিজ ক্ষোভ নিয়ে বলেছেন, " ইসরায়েলের আরোপিত নৌ- অবরোধে বিধ্বস্ত গাজায় যখন সাধারণ মানুষের চালিত ছোট ছোট নৌকা পৌঁছাতে পারছে,তখন বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর সুসজ্জিত নৌবাহিনী কেন সেটি করতে পারছে না?"।
 
ফ্লোটিলা নৌবহর সংহতির প্রতীক। নিপীড়িত মানুষের পাশে মানুষ শেষ পর্যন্ত থাকবে। ফ্লোটিলা এই বার্তা দেয়।
 
লেখক: সাংবাদিক
 
বি.দ্র.- (এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। নিউজজি২৪ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)
 

 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন