শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ , ১৯ রমজান ১৪৪৫

ফিচার
  >
বিশেষ কলাম

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে

মো. কামরুল ইসলাম ২৮ আগস্ট , ২০২১, ২০:৩০:১২

3K
  • ছবি: নিউজজি২৪

শুধু স্বপ্ন দেখা নয়, প্রতিটি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। মাত্র সাত বছর অতিক্রম করেছে ইউএস-বাংলা। এই সময়ের মধ্যে প্রতিটি পথচলাই একেকটি স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যা বাংলাদেশের আকাশপথকেই সমৃদ্ধ করছে। দেশের এভিয়েশন শিল্পের উন্নতির সোপান বেয়ে এগিয়ে যাওয়ার গল্পই বুনে যাচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারী এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা।

বাংলাদেশে বেসরকারী এয়ারলাইন্সের যাত্রা প্রায় দু’যুগ হতে চললো। এ সময়ে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি বেসরকারী কোনো এয়ারলাইন্স ব্র্যান্ডনিউ এয়ারক্রাফট দিয়ে যাত্রীদের সেবা দিবে। ইউএস-বাংলার বহরে এখন ১৪টি এয়ারক্রাফটের মধ্যে ৮টি ব্র্যান্ডনিউ এটিআর ৭২-৬০০ রয়েছে। যা অন্যান্য যেকোনো প্রাইভেট এয়ারলাইন্স থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে নিজেকে পরিচিতি দিতে পেরেছে ইউএস-বাংলা। বর্তমানে পরিচালিত বেসরকারী এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে ইউএস-বাংলার এয়ারক্রাফটগুলোর গড় আয়ু সবচেয়ে কম।

২০১৪ সালের ১৭ জুলাই যাত্রা শুরু করার পর পরিকল্পনার প্রথম ধাপই ছিলো এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সকল চালু বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা করবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। সঠিক পরিকল্পনা আর দেশের আকাশপথের বিস্তৃতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে যাত্রা শুরুর এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢাকা থেকে ধারাবাহিকভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর, বরিশাল ও রাজশাহী রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে ইউএস-বাংলা। যা বিগত দিনে বাংলাদেশের কোনো এয়ারলাইন্স এর পক্ষেই সম্ভব হয়ে উঠেনি প্রথম বছরে দেশের সব চালু বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা করা।

দেশের এভিয়েশনের প্রচলিত নিয়মের মধ্যে রয়েছে সক্ষমতা যাচাইয়ের পর একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে প্রাইভেট এয়ারলাইন্স। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স যাত্রা শুরুর পর দু’বছরের মধ্যেই ১৫ মে ২০১৬ ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু রুটে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেছে। যা যেকোনো দেশীয় এয়ারলাইন্স এর জন্য একটি মাইলফলক হয়ে আছে। যার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এখন ৯টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা।

আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট শুরু পর থেকে একের পর এক নতুন নতুন গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। নতুন গন্তব্যের জন্য নতুন নতুন এয়ারক্রাফটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বর্তমানে ইউএস-বাংলার বিমান বহরে মোট ১৪টি এয়ারক্রাফট রয়েছে, যা বাংলাদেশের যেকোনো প্রাইভেট এয়ারলাইন্সের তুলনায় সর্বাধিক। ইউএস-বাংলার এয়ারক্রাফটের সংখ্যা জাতীয় বিমান সংস্থার পরের অবস্থান। এমনকি বন্ধ হয়ে যাওয়া বিমানসংস্থা জিএমজি এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কিংবা রিজেন্ট এয়ারওয়েজের চেয়েও বেশী সংখ্যক এয়ারক্রাফট নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে যাত্রী সাধারণকে।

স্বাধীনতার পর গত পঞ্চাশ বছরে জাতীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ বিভিন্ন বেসরকারী এয়ারলাইন্স চীনের বিভিন্ন প্রদেশে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্ত বাস্তব সত্য একমাত্র ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বাংলাদেশী কোনো ক্যারিয়ার হিসেবে প্রথম এবং একমাত্র এয়ারলাইন্স হিসেবে ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে চীনের গুয়াংজুতে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। অন্য এয়ারলাইন্সগুলো যেখানে এখনো স্বপ্ন দেখছে চীনে ফ্লাইট পরিচালনার সেখানে ইউএস-বাংলা গত প্রায় সাড়ে তিন বছর যাবৎ অবিরাম ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

দেশের একটি উল্লেখযোগ্য রোগী চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য ভারতের চেন্নাই ভ্রমণ করে থাকে। বাংলাদেশ থেকে কোনো দেশী কিংবা ভারতীয় কোন বিমান সংস্থা ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি চেন্নাইতে ইতিপূর্বে ফ্লাইট পরিচালনা করে নাই। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সই একমাত্র বিমান সংস্থা, যা প্রায় দু’বছরের অধিক সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম-চেন্নাই সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ফলে চেন্নাইতে চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য যারা যাচ্ছেন তাদের সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে।

অভ্যন্তরীণ রুটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সই প্রথম সিলেট, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী ও বরিশাল রুটে ডে-রিটার্ণ ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে। সাথে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে শহরে এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে রংপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরে যাত্রীদের সেবা দেয়ার জন্য শাটল সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। এছাড়া যশোর বিমানবন্দর থেকে খুলনায় ওয়াইফাইযুক্ত শাটল বাস সার্ভিসও রয়েছে।

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ক্রস কান্ট্রি ফ্লাইট শুরু করতে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। যা যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। যশোর থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং সৈয়দপুর থেকে চট্টগ্রাম রুটে ফ্লাইট শুরু করতে যাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ী ও পরযটকদের সময় ও অর্থ দু’টোই সাশ্রয় হবে। সাথে চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় যারা সড়কপথে চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য ভ্রমণ করে থাকেন, তাদের সকলের জন্য ক্রস কান্ট্রি ফ্লাইটগুলো খুবই উপযোগী হয়ে উঠবে বলেই ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ মনে করেন।

বাংলাদেশী কোনো বিমান সংস্থা হিসেবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স খুব শীঘ্রই শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বো ও মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে ফ্লাইট শুরুর পরিকল্পনা করছে। যা দেশীয় এয়ারলাইন্স হিসেবে সার্কভূক্ত দেশগুলোর আকাশ পথকে আরো সুদৃঢ় করবে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে বর্তমানে প্রায় ১৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। যা বাংলাদেশের বেকার সমস্যা দূরীকরনে, দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরীতেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে এবং সেই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে ইউএস-বাংলা। প্রাইভেট এয়ারলাইন্সের যাত্রা শুরুর পর থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাই সর্বাধিক।

সারাদেশের এভিয়েশন এন্ড ট্যুরিজম ব্যবসায়ের সাথে যারা যুক্ত তাদের নিয়ে বাংলাদেশের এভিয়েশনের ইতিহাসে প্রথমবার কক্সবাজারে ২০১৫ সালে কাস্টমার সাকসেস সামিট আয়োজন করেছিলো ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে একইরূপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ২০১৮ সালে দেশের এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজমের সাথে সংশ্লিষ্ট সহস্রাধিক ব্যবসায়িদের একই ছাদের নিচে মিলনমেলার আয়োজন করেছে ইউএস-বাংলা যা আজও ইউনিক প্রোগ্রাম হিসেবে অবস্থান করছে ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রিতে।

বিদেশ থেকে আগমনী যাত্রীদের জন্য দীর্ঘ সময় পরযন্ত এক বিভিষীকাময় ইতিহাস ছিলো বিমানবন্দরে লাগেজ ডেলিভারী পেতে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলো ফ্লাইট অবতরনের ১৫ মিনিটের মধ্যে প্রথম লাগেজ বেল্টে আসবে। যাত্রীরা লাগেজের জন্য অপেক্ষা করবে না, লাগেজ যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করবে। যা আজ অবধি একই ধারাবাহিকতা রয়েছে। ইউএস-বাংলার পথ অনুসরন করে অন্যান্য এয়ারলাইন্সও এখন স্বল্পতম সময়ে লাগেজ ডেলিভারী দেয়ার চেষ্টা করছে।

অন-টাইম ফ্লাইট পরিচালনা ইউএস-বাংলা শুধু বিশ্বাস করেনা, অনুসরনও করে। যাত্রীবান্ধব এয়ারলাইন্স হতে হলে সময়নাবর্তীতা মেনে চলতে হবে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পরযন্ত ৯০ শতাংশের অধিক ফ্লাইট রেকর্ড অন-টাইম। গত ২০১৯ সালে বাংলাদেশ মনিটর কর্তৃক বেস্ট অন-টাইম পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে সাফল্যকে সাথে করে অগ্রসর হচ্ছে ইউএস-বাংলা। দেশের একটি স্বনামধন্য এয়ারলাইন্স শুধু নয় এশিয়ার একটি অন্যতম সেরা এয়ারলাইন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে আকাশ সমান স্বপ্ন বুননের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

 

লেখক: মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন