বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ , ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার
  >
প্রাণী ও পরিবেশ

নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ঘেরা প্রাচীন জলাবন ‘লক্ষ্মীবাওর’

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ৩ ডিসেম্বর , ২০২০, ১৬:১৪:১৩

3K
  • ছবি: ফেসবুক থেকে

হবিগঞ্জ: বর্ষাকালে অথৈ জলরাশি। শরৎকালে তার ওপরের আকাশটাতে উড়ে মেঘের ভেলা। জলরাশির ধারে বসে পাখিদের মেলা। নীল জলের বুকে ভেসে থাকা হিজল আর করচের বাগানের এক অপরূপ সৌন্দর্য। বর্ষার জল নেমে গেলেও কমতি নেই সেই সুন্দরের। ঝাঁকে ঝাঁকে আসা অতিথি পাখির কিচির মিচির শব্দে আকর্ষণ আরো বেড়ে যায় বহুগুণ।

স্থানটির নাম লক্ষ্মীবাওর জলাবন। এমন একটি নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জায়গা অযত্ন আর অবহেলায় লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গেছে দিনের পর দিন। আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় এই জলাবনকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি দীর্ঘদিনের হলেও এতদিনেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কেউ।

তবে সম্প্রতি সময়ে নতুন আশার সৃষ্টি করেছে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসন। জেলার ব্র্যান্ডিং পর্যটন হওয়ায় লক্ষ্মীবাওরকে ঘিরে নতুন পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, লক্ষ্মীবাওরকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার জন্য প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে থাকবে ওয়াচ টাওয়ার, ওয়াশ ব্লক, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নসহ একটি পর্যটন কেন্দ্রের মৌলিক বিষয়গুলোর উন্নয়ন ও অবকাঠামো গড়ে তোলা। স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে অংশীদারি ভিত্তিতে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় লোকজনের সাথে আলোচনা হয়েছে। তারাও এ ব্যাপারে ইতিবাচক। এখানে এসে পর্যটকরা সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। পাশাপাশি জীবজন্তু ও পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে এটি গড়ে উঠবে।

তিনি আরো জানান, এই শীতে কেউ যেন অতিথি পাখি শিকার করতে না পারে সেজন্য প্রশাসন তৎপর রয়েছে। এটি হবিগঞ্জের সম্পদ। সকলে মিলেই এ সম্পদ রক্ষা করতে হবে। ইজারাদাররা যেন সম্পূর্ণ সেচ না করেন সেজন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কয়েকদিন পূর্বে লক্ষ্মীবাওর জলাবন পরিদর্শন করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. নূর-উর-রহমান।

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার প্রান্তসীমানায় খড়তি নদীর দক্ষিণে বিশাল হাওরের মধ্যে লক্ষ্মীবাওর জলাবনের অবস্থান। এর দক্ষিণ দিকে লোহাচুড়া, উত্তরে খড়তি আর পশ্চিমে নলাই নদী। তার পূর্ব পাশে আবার রয়েছে গঙ্গাজলের হাওর। কয়েকশ’ বছর আগে প্রকৃতিগতভাবেই এর সৃষ্টি বলে স্থানীয় লোকজন জানান। স্থানীয়দের কাছে লক্ষ্মীবাওর কিংবা খড়তির জঙ্গল নামে পরিচিত। হবিগঞ্জ শহর থেকে ১২ মাইল পর বানিয়াচঙ্গ আদর্শবাজার থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটারের পথ লক্ষ্মীবাওর জলাবনের। জলের মধ্যে বনের অনাবিল সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে বর্ষায় নৌকা, হেমন্তে মোটরসাইকেল, ট্রলি কিংবা পায়ে হেঁটে যেতে হয়। হেমন্তে ভোগান্তি একটু বেশি। বর্ষায় স্বচ্ছ জলেই বনটি বেশি উপভোগ্য।

এই বনের মোট আয়তন ২০৬ একর। এর মাঝে বানিয়াচং উপজেলায় ১৫৬ একর এবং আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ৫০ একর। আয়তনে ও বয়সে এটি সিলেটের রাতারগুলের ছেয়েও বড় এবং প্রাচীন। হিজল, করচ, বরুণ, কাকুরা, বউল্লা, খাগড়া, চাউল্লা, নলসহ অসংখ্য গাছ ও গুল্মে পরিপূর্ণ এই জলাবন এতদিন অনাবিষ্কৃতই ছিল। এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী জীবজন্তু। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেছোবাঘ, শিয়াল, গুইসাপ, কেউটে, লাড্ডুকা, দারাইশসহ অনেক বিষধর সাপ। বর্ষায় বিভিন্ন জাতের বক, পানকৌড়ি ও বালিহাঁস দেখা গেলেও শীতকালে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে নির্জন এই জলাবন। এছাড়া বনটিকে দেশি ও অতিথি পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

লক্ষ্মীবাওর জলাবনের মালিকানা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন আছে সেখানে। সৈদরটুলা সাত মহল্লার ধর্মীয়-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও অতি দরিদ্রদের কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয় এর আয় থেকে। প্রতি বছর মাছ ও ধানসহ কোটি টাকার ওপরে আয় আসে এই বন থেকে।

সাবেক ইউনিয়ন পরষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আয়ামী লীগ সদস্য হায়দারুজ্জামান ধন মিয়া জানান, লক্ষ্মীবাওরের জমি মুরুব্বিরা কিনে রেখেছেন। এটি এলাকার সম্পদ। এর আয় সাত মহল্লা বণ্টন করে নেয়। বছরে কোটি টাকার ওপর আয় হয় সেখান থেকে। বনের গাছের ডালপালা বিক্রি এবং জলাশয় ইজারা দিয়ে যে আয় হয় তা এলাকার ধর্মীয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠনের এবং জনহিতকর কাজে ব্যয়  করা হয় । এজন্য রয়েছে  ৯ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি।

নিউজজি/ এসআই

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন