শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ , ১৯ রমজান ১৪৪৫

ফিচার
  >
প্রাণী ও পরিবেশ

কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী বটবৃক্ষ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি ৭ ডিসেম্বর , ২০২১, ১২:০৮:২৭

762
  • ছবি : নিউজজি

সিরাজগঞ্জ : বট বাংলা অঞ্চলের আদিমতম বৃক্ষ। বটগাছকে ঘিরে বাংলা অঞ্চলের রয়েছে শত-সহস্র বছরের ইতিাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন। বটগাছ নিয়ে বাংলা সাহিত্য ও রচনা লেখা হয়েছে।

উষ্ণ আবহাওয়ায় বিশাল আয়তনের এই ছায়াবৃক্ষটি অনেক উপকারে আসে। প্রাচীনকাল থেকেই বটবৃক্ষের ছায়ায় হাট-বাজার বসে, মেলা হয়, লোকগানের আসর বসে, জনসভা হয়। কারণ হিসেবে বলা যায়, বাংলার গ্রামাঞ্চলে বড় বড় সুশীতল হলরুম নেই। আর তাই বড় বড় অনুষ্ঠান ও জনসভাগুলো ছায়াসুনিবিড় বটতলায় অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

সিরাজগঞ্জে তিন বিঘা জমিতে ছড়িয়ে আছে তিন শত বর্ষের বটগাছ৷ অসংখ্য শাখা প্রশাখা বিস্তৃত বটগাছটি দেখতে ভীড় জমাচ্ছে দর্শনার্থীরা।

ঢকা-বগুড়া মহাসড়কে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ভূঞাগাঁতী বাস্ট্যান্ড থেকে উত্তর দিকে একটু সামনে গেলে একটি ইটভাটা। ইটভাটার সামনে থেকে একটি মাটির রাস্তা সোজা পশ্চিম দিকে চলে গেছে। প্রায় দুই কিলোমিটার গেলে চোখে পড়বে বিশাল এক বটগাছ। স্থানীয়দের দাবী, প্রায় তিনশ বছরের পুরানো বটগাছটি। এ গাছকে কেন্দ্র করে দূরদুরান্তের মানুষ আসে মানত করতে। স্থানীয়রা গাছটির নিচে বার্ষিক মেলার আয়োজন করে অনেক বছর ধরে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, করতোয়া খালের ওপর প্রায় তিন বিঘা জমির ওপর বটগাছটি ছড়িয়ে আছে। বটগাছের সবুজ পাতায় ছেয়ে আছে চারদিক। ঝুলে পড়েছে এর শাখা-প্রশাখা। গাছে বসে থাকা নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে চারদিক মুখর থাকে। গাছের তলায় বসলে সহজে উঠতে মন চায় না। স্থানীয় মানুষ প্রায় সারা বছরই এ গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেন। তবে গরমের সময় ভিড় বাড়ে সব বয়সী মানুষের। আশেপাশের মানুষও আসেন এ গাছের ছায়ায় আরাম করতে।

সরাইদহ গ্রামের বরাত আলী সরকার (৭৫) বলেন, আমার দাদা ৯৫ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি বলেছেন, গাছটি এভাবেই তারা দেথেছেন। তখন নানা কারণে ভয়ের কারণ ছিল এ গাছটা। বটতলায় অনেক সাধু-সন্ন্যাসী ধ্যানে মগ্ন হতেন। এখন সাধু-সন্ন্যাসীদের দেখা না মিললেও হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষই গাছটি দেখতে আসেন। অনেকে মানত পূরণ করার জন্য আসেন। প্রতি বছরের জ্যৈষ্ঠ মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার বটগাছের নিচে মেলা বসে। করোনার কারণে গত দুই বছর মেলা হয়নি। আশা করছি, আগামী জ্যৈষ্ঠ মাসে মেলা হবে।

টাঙ্গাইল থেকে আসা আত্মীয়দের গাছটি দেখাতে নিয়ে  এসেছেন স্থানীয় রেনু রানী দাস। কালের স্বাক্ষী কয়েক শত বছরের পুরানো বটগাছটি নিচে প্রতি বছর নির্দিষ্ট তিথিতে সনাতন ধর্মের লোকজন পূজা করেন জানিয়ে তিনি বলেন, এ বটগাছটি এলাকার সম্প্রীতির চিহ্ন হয়ে আছে। হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মের লোকজনই সমান গুরুত্ব দেয় গাছটিকে। নানা রকমের সংস্কারের কারণে এ বটগাছের পাতা ও ডাল কেউ ব্যবহার করে না। তাই বছরের পর বছর ধরে শুধু গাছটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।

সিরাজগঞ্জ শহর থেকে প্রদীপ সাহা তার মেয়ে প্রনিমা সাহাকে নিয়ে বটগাছটি দেখতে এসেছেন। তিনি  বলেন, অনেক কথা শুনেছি বটগাছটি নিয়ে। আজ এখানে এসে যা দেখলাম তা শোনার চেয়ে অনেক বেশি। বটগাছটিকে ঘিরে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে পদক্ষেপ নিলে পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠবে।

চান্দাইকোনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউনিয়ন) চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান খাঁন বলেন, কয়েক শত বছরের পুরাতন বটগাছটি ঘিরে এলাকায় নানামুখী উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে।

নিউজজি/হামা

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন