বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ৩ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

ফিচার
  >
ফেসবুক কর্ণার

চিঠির যুগের প্রতিটি মানুষকে নাড়া দিবে ‘ইতি চিত্রা’

নিথর মাহবুব ২৪ অক্টোবর , ২০২৩, ১৬:৪১:৩৫

629
  • ছবি: সংগৃহীত

নায়ক-নায়িকারা পরিচিত মুখ না হলেও নৈপুণ্য দিয়ে মানুষকে যে হলে ধরে রাখা যায়; তার প্রমাণ ‘ইতি চিত্রা’ সিনেমা। নব্বইয়ের দশকের প্রেমের এ গল্প নাইনটিজদেরতো বিশেষভাবে নাড়া দিবেই; নাড়া দিবে চিঠির যুগের প্রতিটি মানুষকে। আর নতুন শতকে ডিজিটাল যুগের তরুণ-তরুণী যারা স্মার্ট ফোন আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে পাইপ লাইনে রাখতে পারে একাধিক প্রেমিক-প্রেমিকা, যাদের ব্রেকাপ হয় কথায় কথায়; তারা উপলব্ধি করতে পারবে নব্বইয়ের দশকে একটা ছেলে আর একটা মেয়ের প্রেমের গভীরতা কতটা ছিল, কতটা তীব্র থাকত তখনকার প্রেমিক-প্রেমিকাদের পরস্পরের প্রতি টান।

এই প্রজন্ম যারা আধুনিক সুযোগ সুবিধা আর ফ্লাটের চার দেয়ালে বেড়ে উঠা; তারা এই সিনেমাটি দেখে আন্দাজ করতে পারবে কেমন ছিল তাদের মা-বাবাদের তারুণ্যের সময়টা, কেমন ছিল তখন ঢাকা শহর আর মফস্বল শহরের চিত্র এবং মানুষের জীবনধারা।

‘ইতি চিত্রা’ সিনেমাটির পরিচালক রাইসুল ইসলাম অনিকের বয়স যতটা মনে হলো; তাতে নব্বইয়ের দশক সম্পর্কে তার এতটা ধারণা থাকার কথা না যতটা তিনি তুলে এনেছেন পর্দায়। কাজটি করতে গিয়ে তিনি যে পঙ্খানুপঙ্খ ধারণা পেতে যথেষ্ট শ্রম দিয়ে গবেষণা করেছেন তা স্পষ্ট হয়েছে পর্দায়।

একটা ছোট্ট বিষয় বলি- আমার চোখ বার বার আটকে যাচ্ছিল নায়কের হাতে কালো প্লাস্টিকের কেসিও ঘড়িটার দিকে। এখনকার মোবাইল ফোনের মতোই তখন তরুণদের হাতে হাতে জড়ানো থাকত এমন ঘড়ি। নায়িকার টেবিলের সামনে দেয়ালে লাগানো পোস্টার কাগজ দেখে খুব মনে পড়ছিল নিজের পড়ার টেবিলের কথা। এককথায় ভালো লেগেছে সিনেমাটির শিল্প নির্দেশনার কাজ।

পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সিনেমায় নায়ক-নায়িকার যখন দীর্ঘদিন দেখা হচ্ছিল না, দর্শকদের যেন তর সইছিল না, দর্শক অপেক্ষা করছিল কখন তাদের দেখা হবে, আর যখন দেখা হল তখন করতালিতে মুখর মিলনায়তন, বুঝতে বাকি থাকে না যে সিনেমার গল্প দর্শকদের নিয়ন্ত্রণ করছে, দর্শকের মনোযোগ আটকে আছে সিনেমার পর্দায়।

সিনেমার বেশিরভাগটা জুড়ে একটা মৌন কষ্টের স্রোত প্রবহমান থাকলেও, এর ভিতরে আছে কিছু ম্যাজিক মোমেন্টও। তার মধ্যে যেমন আছে হাস্যরসাত্মক ঘটনা, আছে নায়ক-নায়িকার কাপড় খোলার কাণ্ড-ও, তবে সেটা ছিল পরিমিত এবং নান্দনিক উপস্থাপনায়। ক্যামেরায় ধারণকৃত বেশকিছু দৃশ্য আছে মনোমুগ্ধকর এবং মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো চমৎকার কিছু প্রাকৃতিক লোকেশনে ধারণ করা হয়েছে সিনেমার বেশকিছু দৃশ্য।

সিনেমার নায়ক রাকিব হোসেন ইভন এবং নায়িকা জান্নাতুল ফেরদৌস ঋতু। দর্শকদের একটি সুন্দর সিনেমা উপহার দিতে এই জুটি যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন। তারা দুজনই যেহেতু সিনেমায় নতুন, তাই বলব—হয় তারা অধ্যবসায়ের মাধ্যমে দুজনই গল্পের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন অথবা পরিচালক তার দক্ষতা ও কৌশল খাটিয়ে নিজের চাহিদাটা নায়ক-নায়িকার কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছেন।

ইভন-ঋতু ছাড়া এই সিনেমায় নরেশ ভূঁইয়া, ফরহাদ লিমন, মনিরুজ্জামান মনি, সোহানা শারমীন, আনোয়ার শাহী, শেখ স্বপ্না, শাহীন মৃধা তাদের যার যার চরিত্রে ভালো অভিনয় করেছেন।

এবার সিনেমাটির দুই একটি দুর্বলতার কথা বলি, সিনেমার শুরুতে নায়ক-নায়িকার প্রেমটা আরেকটু জমিয়ে তুললে গল্পটা আরো ইমোশন তৈরি করতে পারত। কলেজের দুই-একটা দৃশ্য থাকলে আরেকটু প্রাণবন্ত হত গল্পটা। পরীক্ষা শুরুর কথা বলে ওই রিলেটেড কোন দৃশ্য না দেখিয়ে দ্রুত সংলাপের মাধ্যমে পরীক্ষা শেষ করানোর কৌশলটায় একটা ধাক্কা লাগে। মনে হচ্ছিল লেখক দ্রুত গল্পের কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন। হতে পারে সময় বাঁচাতে গিয়ে পরিচালক শুরুর দিকটাকে সংক্ষেপ করেছেন। তবে এতে গল্পের ভারসাম্য কিছুটা হলেও ক্ষুন্ন হয়েছে।

অপরদিকে সিনেমার গানের বিষয়ে আরেকটু যত্নবান হওয়া দরকার ছিল। প্রথম দুটি গান গল্পের সঙ্গে মানিয়ে গেলেও, পরের দুটি গানের কণ্ঠ সুর লয় মনে হচ্ছিল নব্বইয়ের দশকের সঙ্গে খুব একটা যাচ্ছিল না।

‘মুজিব’ সিনেমার চাপের মুখেও ‘ইতি চিত্রা’ সিনেমাটি বর্তমানে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টারে, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের স্টার সিনেপ্লেক্সে, কেরানিগঞ্জের লায়ন সিনেমায়, চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের সিলভার স্ক্রিনে, উত্তরার ম্যাজিক মুভি থিয়েটারে চলছে। আমার মনে হয় সিনেমাটি দ্বিতীয় সপ্তাহে আরো বেশি হলে চলা উচিত।

যতদূর জানলাম সিনেমার নায়ক রাকিব হোসেন ইভন এর আগে সিনেমায় অভিনয় করলেও এবারই প্রথম নায়ক হিসেবে পর্দায় হাজির হয়েছেন। অপরদিকে বরিশালের মেয়ে জান্নাতুল ঋতু এবারই প্রথম দাঁড়িয়েছেন ক্যামেরার সামনে।

সত্য ঘটনা অবলম্বনে নব্বইয়ের দশকে মফস্বলের কলেজপড়ুয়া একজোড়া তরুণ-তরুণীর প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত ‘ইতি চিত্রা’ নির্মাতা অনিকের প্রথম সিনেমা। বড় পর্দায় কাজে নামার আগে বিজ্ঞাপনচিত্র ও টেলিভিশন নাটক নির্মাণ করে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন তিনি। সিনেমার জন্য গল্পটা ঠিক করেছিলেন ২০১০ সালে। এক যুগ পর সিনেমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তার।

আশা করছি, নতুন তরুণ এই গুণী নির্মাতার হাত ধরে সামনে ভালো ভালো আরো সিনেমা পাবে দর্শক। অনেক শুভকামনা রইল ‘ইতি চিত্রা’ সিনেমার সাথে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

নিউজজি/রুআ

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন