শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ , ১৯ রমজান ১৪৪৫

ফিচার
  >
ফেসবুক কর্ণার

মিতা হককে নিয়ে আবেগঘন স্মৃতিচারণ লুৎফর রহমান রিটনের

নিউজজি ডেস্ক ১২ এপ্রিল , ২০২১, ০০:০৭:০৮

642
  • সংগৃহীত

ঢাকা: ১৯৭৪ সালে বার্লিনে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন্স ফেস্টিভ্যালে ফ্যাস্টিভ্যাল কর্মকর্তা ও ইন্টারপ্রেটারের সঙ্গে বাংলাদেশ শিশুপ্রতিনিধি দলের পান্না কায়সার, মিতা হক, শুক্লা রায়, তাহমিন সুলতানা স্বাতী, ইশরাত নিগাহ বোখারী এবং লুৎফর রহমান রিটন।

একুশে পদকপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী মিতা হকের মৃত্যুতে গভীর শোক নেমে এসেছে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে। বিশিষ্টজনেরা স্মরণ করছেন তাকে শ্রদ্ধাভরে। লেখক লুৎফর রহমান রিটন কানাডার অটোয়া থেকে এক আবেগঘন ফেইসবুক পোস্ট দিয়েছেন। যেখানে তিনি তুলে ধরেছেন মিতা হকের জীবনের নানান দিক। একটি দুর্লভ ছবিও রিটন সংযুক্ত করেছেন তার পোস্টে।

লুৎফর রহমান রিটনের ফেইসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

''আর তো নিতে পারছি না! প্রিয় প্রিয় মানুষরা চলে গেছেন একে একে। চলে যাচ্ছেন একে একে। করোনা কেড়ে নিচ্ছে কাছের মানুষদের। প্রিয় এবং কাছের মানুষরা আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতিদিন। আমরা একা হয়ে যাচ্ছি। আমি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছি। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। একটা শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই আরেকটা শোক এসে কড়া নাড়ছে। কয়জনের কথা বলবো!

প্রতিটা দিন এখন আতঙ্কের। সকালে মোবাইল ফোনে চোখ রাখি ভয়ে ভয়ে। এই বুঝি কোনো দুঃসংবাদ তেড়ে এলো। বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলে চোখ রাখি ভয়ে ভয়ে। স্ক্রলের দিকে তাকাতে ভয় পাই। এই বুঝি ভেসে উঠলো কোনো প্রিয়জনের মৃত্যুসংবাদ।

এই তো সেদিন, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী চলে গেলেন। আহারে প্রিয় দাদা আমার! সাত বছর পরে দেশে ফিরে ২০০৮ সালে চ্যানেল আই কার্যালয়ে দেখা হলে পর আমাকে জড়িয়ে ধরে কতো আবেগঘন কথাই না বলেছেন--তুমি দেশে ফিরা আসছো এইটা দেখে বড় শান্তি পাইলাম রিটন। তোমার জন্যে দোয়া করছি কতো! জানতাম তুমি একদিন আসবাই। কতোদিন তোমারে আটকাইয়া রাখবো! বাংলাদেশ আমাদের। এইদেশে আমরা থাকবো না তো কে থাকবে কও!

দাদার কথায় চোখে আমার জল চলে এসেছিলো।

সর্বশেষ মাস দেড়েক আগে কানাডা থেকে টেলিফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা বলার এক পর্যায়ে আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন--তুমি তো জাপানে ছিলা, জানো তো আমার মেয়েও থাকে ওইদেশে!

এতো বড় শিল্পী হয়েও মাটির মানুষ ছিলেন আমার এই দাদা। ভীষণ ভক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর। আমার লেখা 'বঙ্গবন্ধু সমগ্র' বইটা পেতে চেয়েছিলেন। জাতির পিতাকে নিয়ে কয়েকটা গান করতে চেয়েছিলেন আমার ছড়া থেকে। প্রকাশকের হদিস চেয়েছিলেন। কোনো গান কি করতে পেরেছিলেন দাদা! জানাই হলো না...।

০২

কানাডায় আমার খুব প্রিয় এবং কাছের মানুষ, বন্ধুসুহৃদ বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী তপন চৌধুরী ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে গেছেন মহা উৎসাহে। জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে অংশ নিতে। কিন্তু তাঁকে মূল উৎসবের কোনো আয়োজনেই দেখা গেলো না। কয়েকটা টিভি চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে গান গাইতে দেখা গেলো যদিও। কোভিদ ভ্যাকসিনের ফার্স্ট ডোজ নিয়েছেন। আগামী মাসে দ্বিতীয় ডোজটি পাবেন। কিন্তু এরই মধ্যে, গেলো পরশু ঢাকা থেকে কল করলেন তপন চৌধুরী--'দাদা আমি অসুস্থ। আজকে করোনা টেস্টের রিপোর্ট পেলাম। আমি পজিটিভ। দোয়া করবেন আমার জন্যে।'

তপনদার কথায় ভীষণ একটা ধাক্কা খেলাম বুকে!

কানাডায় আমরা কথা বলি রোজ প্রতিদিন দীর্ঘ সময়ব্যাপি।

তপনদার জন্যে মনটা খুব উতলা ছিলো দু'দিন ধরেই।

০৩

কানাডায় আজ রাত ন'টার দিকে আমার মোবাইল ফোনে একটা মেসেজ এলো। কোনো সম্বোধন ছাড়াই বার্তাটা ছিলো সরাসরি--'মিতা হক আর নেই...সকাল ৫টায় লাইফ সাপোর্ট খুলে দিয়েছে। এনাম। মিতাপার মামাতো ভাই।'

সে আরো লিখেছে--'আপনাদের বার্লিন সফরের কথা বলতেন আমাকে।'

হ্যাঁ। ১৯৭৪ সালে আমরা একসঙ্গে বাংলাদেশ থেকে বার্লিন গিয়েছিলাম ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন্স ফেস্টিভ্যালে অংশ নিতে। কচি-কাঁচার মেলা এবং খেলাঘরের পাঁচজনের একটি শিশুপ্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলাম আমরা। মিতার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বটা সেই থেকেই। তারপর মেঘে মেঘে বেলা গড়িয়েছে। আমরা বড় হয়েছি। আমি হয়েছি লেখক আর আমার বন্ধুটি হয়েছে বাংলাদেশের সেরা একজন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী! আহারে কতো মধুময় ছিলো আমাদের ছেলেবেলাটি! কতো গৌরবদীপ্ত ছিলো আমাদের যৌবনের স্বর্ণালি দিনগুলো!

অনেকদিন দেখা না হলেও আমরা দু'জন পরস্পরের বন্ধুই থেকেছি সারাটা জীবন। আমার সাফল্যে মিতার এবং মিতার সাফল্যে আমারই যেনো গৌরবপ্রাপ্তি ঘটতো।

আজকে আমার ছেলেবেলার বিখ্যাত বন্ধুটিও চলে গেলো!

ঝাপসা চোখে বিদায় জানাই বন্ধু তোমায়।

তোমার অনন্তযাত্রা শান্তিময় হোক বন্ধু..।''

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন