বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ৩ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

ফিচার
  >
মানচিত্র

রক্তপাতের দেশ এল সালভাদর

নিউজজি ডেস্ক ৪ ডিসেম্বর , ২০২৩, ১৩:০২:০১

519
  • ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: প্রশান্ত মহাসাগরের নীল জল আছড়ে পড়ছে উপকূলে। সবুজ ঝাউবনে ঘেরা অপূর্ব বালিয়াড়ি। নারকেল বীথিকায় ঝলমলে সূর্যের যাওয়া আসা। প্রকৃতির সব সুন্দর যেন উপচে পড়েছে এইখানে, এই মানচিত্রের পুরোটায়। অথচ এই এক বিপন্ন জনপদ। প্রতি ঘণ্টায় এখানে খুন হয়। রক্তপাতের চিহ্ন লেগে থাকে প্রতিদিন, যা শুকাবার আগেই ফের রক্তপাতের নতুন মিছিল। আমাদের মানচিত্র বিভাগের আজকের আয়োজন এল সালভাদর।

ষোড়শ শতকে এল সালভাদোর স্প্যানিশ শাসনের অধীনে ছিল। মধ্য আমেরিকার দেশ হিসেবে ১৮২১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে। দেশ হিসেবে ১৮৯৮ সালে আত্মপ্রকাশ করে।

এল সালভাদর মধ্য আমেরিকাতে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। জনসংখ্যার বিচারে মধ আমেরিকার দেশগুলির মধ্যে গুয়াতেমালার পরেই এর অবস্থান। দুই আমেরিকার মহাদেশের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে এটি দ্বিতীয়। মূলত একটি গ্রামীন দেশ হলেও বিংশ শতাব্দীতে এখানে ব্যাপক নগরায়ন ঘটে। দেশের জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সান সালভাদর মেট্রোপলিটান এলাকায় বসবাস করেন। সান সালভাদর দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। এল সালভাদর একটি স্পেনীয় শব্দগুচ্ছ, যার অর্থ "ত্রাতা"। যিশুখ্রিস্টের সম্মানে দেশটির এই নামকরণ করা হয়।

দেশটির ভূপ্রকৃতির অধিকাংশই আগ্নেয় পর্বতসারি নিয়ে গঠিত। ফলে এখানে কফি চাষ খুবই সুবিধাজনক। বিগত এক শতাব্দী কফি রপ্তানি করে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা দেশটির অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। কফি-ভিত্তিক অর্থনীতির ফলে দেশে একটি ক্ষুদ্র, ধনী শাসক শ্রেণী এবং বৃহত্তর, দরিদ্র, শ্রমিক শ্রেণীর সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৮০-র দশকের পুরোটা জুড়ে দেশটিতে একটি গৃহযুদ্ধ চলে এবং দেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিন্তু ১৯৯০-এর দশকে দেশটি ধীরে ধীরে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শুরু করে।

ঘনবসতিপূর্ণ ছোট এই দেশটির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়া যেকোনো স্থানের চেয়ে অনেক বেশি খুনের ঘটনা ঘটে এখানে। এল সালভাদরে সরকার ও অপরাধীদের মধ্যে সংঘটিত ২০১২ সালের অস্ত্রবিরতি চুক্তি ভেঙে গেছে। ২০১৫ সালে সেখানে ৩ হাজার ৮৩০টির বেশি খুন হয়েছে। পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে তিন শর বেশি সন্ত্রাসী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও মারা গেছেন অর্ধশতাধিক।

এখনও মাসে গড়ে প্রতি ঘণ্টায় একটি খুন হয়।  দেশটির সরকারের সঙ্গে অপরাধীদের ১৯৯২ সালের চুক্তির পর এখনই সবচেয়ে প্রাণঘাতী অবস্থা বিরাজ করছে। বর্তমান অবস্থা যদি অব্যাহত থাকে, তবে  বছর প্রতি এক লাখে ৯০ জন হত্যার শিকার হয়। সে কারণে হলে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী দেশ হন্ডুরাসের সঙ্গেও রয়েছে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রতিযোগিতা।

ধারণা করা হয়, দেশটিতে সন্ত্রাসীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। এদের মধ্যে ১০ হাজারের বেশিই কারাগারে। দেশটির জনসংখ্যার প্রতি ১০ জনে একজন সন্ত্রাসী দলের ওপর নির্ভরশীল। আর বিচার হয় না ৯৫ শতাংশ অপরাধেরই। সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দেওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, সন্ত্রাসীরা প্রধানত দুটি দলে বিভক্ত। একটির নাম মারা সালভাচুরা (এম এস-১৩ নামে পরিচিত)। আরেকটি বারিও-১৮। প্রায়ই দুটি দলের মধ্যে সংঘর্ষ ও প্রতিশোধমূলক হত্যার ঘটনা ঘটে। এই ‘মারা সালভাচুরা’ হলো লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক একটি সন্ত্রাসী দল। ১৯৯২ সালে এল সালভাদরের গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত দেশটির অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করা হয়। এই নির্বাসিতরাই গত দুই দশকে দেশটির দুর্বল সরকার কাঠামোতে সন্ত্রাসবাদের আমদানি করে।

তবে কলম্বিয়া ও মেক্সিকোর মাফিয়া চক্রের মতো সংগঠিত নয় এল সালভাদরের সন্ত্রাসী দলগুলো। এমনকি এই দেশটি দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কোকেন পাচার হলেও তাতেও জড়িত নয় এখানকার সন্ত্রাসীরা। তাদের আয়ের মাধ্যম হলো ডাকাতি ও ছিনতাই। আর তাদের সন্ত্রাসের আশঙ্কা থেকে বাদ নেই একজন নাগরিকও। সবচেয়ে হুমকির মুখে দরিদ্র পরিবারগুলো।

এল সালভাদর “আগ্নেয়গিরির ভূমি” নামে পরিচিত। ২০টির বেশি আগ্নেয়গিরির কারণে এমন নাম দেয়া হয়েছে। এই আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে বর্তমানে দুটি সক্রিয় রয়েছে। তবে দেখার মতো দেশ বলতে গেলে পুরোটাই। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু জায়গা যেমন - সাচিতোতো । এল সালভাদোরের কেন্দ্রস্থল কাস্কাতলান ডিপার্টমেন্টের নিয়ন্ত্রণাধীন পৌর এলাকা। রাজধানী স্যান সালভাদোর থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে এর অবস্থান। দক্ষিণ-পূর্বাংশে পর্বতময় হলেও উত্তর-পশ্চিমাংশে সমতলভূমি রয়েছে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এটি ৩৯১ মিটার উঁচুতে অবস্থিত।  ঔপনিবেশিক শাসনামলে শহরের প্রধান চত্ত্বরটি গঠিত হয়। ১৮শ শতাব্দীতে স্পেনীয়রা গীর্জা নির্মাণ করে। এল সালভাদোরের মাধ্যমে বহিঃবিশ্বে সাচিতোতো পরিচিতি পেয়েছে মূলতঃ এর গীর্জা ও ছোট ধরনের গোলাকৃতি শক্ত পাথরে গড়া রাস্তার জন্যে।

দর্শনীয় স্থান হিসেবে আরও রয়েছে লেম্পা নদীতে কৃত্রিমভাবে গড়ে উঠা সাচিতলান হ্রদ। এছাড়াও রয়েছে সেরন গ্রান্দে বাঁধ। সালভাদোরীয়দের কাছে সাপ্তাহিক ছুটি কাটানোর জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় স্থান এটি। শিল্পকলা গ্যালারী, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও হস্তশিল্পজাতদ্রব্যের ন্যায় সুবিস্তৃত কর্মকাণ্ড এখানে পরিচালিত হয়। আরিজোনার প্রেসকট সাচিতোতো’র ভগিনী নগরী। এরফলে উভয় শহরই তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিনিময় করে থাকে।

একনজরে -

পুরো নাম : রিপাবলিক অব এল সালভাদর।

রাজধানী ও সর্ববৃহৎ শহর : সান সালভাদর।

ভাষা : স্প্যানিশ।

জাতিগোষ্ঠী : মেস্টিজো (৮৬.৩%), শ্বেতাঙ্গ (১২.৭%), আদিবাসী (০.২৩%), কৃষ্ণাঙ্গ (০.১৩%), অন্যান্য (০.৬৪%)।

সরকার পদ্ধতি : ইউনিটারি প্রেসিডেন্সিয়াল কনস্টিটিউশনাল রিপাবলিক।

আইনসভা : লেজিসলেটিভ অ্যাসেমিব্ল।

স্বাধীনতা : ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৪১।

আয়তন : ২১ হাজার ৪১ বর্গকিলোমিটার।

জনসংখ্যা : ৬৩ লাখ ৭৭ হাজার ১৯৫।

ঘনত্ব : প্রতিবর্গকিলোমিটারে ৩০৩।

জিডিপি : মোট ৫২.৬৬৬ বিলিয়ন ডলার।

মাথাপিছু : চার হাজার ৭৭৬ ডলার।

মুদ্রা : মার্কিন ডলার।

জাতিসংঘে যোগদান : ১৯৪৫ সাল।

ছবি ও তথ্য – ইন্টারনেট

নিউজজি/এস দত্ত

 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন