শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ , ১৯ রমজান ১৪৪৫

ফিচার
  >
মানচিত্র

জিম্বাবুয়ে-ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত আর জারুল ফুলের দেশ

নিউজজি ডেস্ক ৩ জানুয়ারি , ২০১৯, ১১:৫৯:৩২

12K
  • জিম্বাবুয়ে-ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত আর জারুল ফুলের দেশ

পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম একটি ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাতের দেশ জিম্বাবুয়ে। আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে নিরাপদ ভূখণ্ড হিসেবে খ্যাত এই দেশ। দেশটির আয়তন ৩৯০,৭৫৭ বর্গ কিলোমিটার ।রাজধানী হারারে। 

১৯৮০ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতার লাভের পরই জিম্বাবুয়েতে রবার্ট মুগাবের শাসনকালের শুরু। এবং দীর্ঘ ৩৭ বছর পর সেই একনায়কতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটে। তারপর প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এমারসন নানগাগওয়া। তিনি রবার্ট মুগাবের স্থলাভিষিক্ত হন। এর আগে তিনি মুগাবে সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। 

জিম্বাবুয়ের অর্থনীতির হাল ভয়াবহ। মুদ্রাস্ফীতির হার তলানিতে ঠেকার দরুণ দেশটির প্রচলিত মুদ্রা ব্যবস্থা বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিল প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের সরকার। জিম্বাবুয়ের আর্থিক সংকট এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছিল যে ৩৫ লাখ কোটি জিম্বাবুয়ান ডলার দিয়ে মেলে মাত্র ১ মার্কিন ডলার! ২০০৮ সালে চরমতম অবস্থায় পৌঁছায় জিম্বাবুয়ের অর্থনীতি। মুদ্রাস্ফীতির হার দাঁড়ায় ৫০ কোটি শতাংশে, যার জেরে রোজের বাজার করতে যেতে প্লাস্টিক ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে বেরোতেন বাসিন্দারা। দিনে দুইবার করে দাম বাড়ার রেওয়াজ ছিল জিনিসপত্রের। 

পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি হল এই ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত। রহস্যঘন আফ্রিকা মহাদেশের দুটি দেশ জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের সীমানায় অবস্থিত এই জলপ্রপাত যা কিনা পৃথিবীর দীর্ঘতম জলপ্রপাত। জিম্বাবুয়ে ও জাম্বিয়ার সীমানাবর্তী যৌথ নদী জাম্বেজি থেকেই এই জলপ্রপাতের উৎপত্তি হয়েছে। উচ্চতা প্রায় ১০৮ মিটার চওড়ায় প্রায় ১,৭০৩ মিটার। অবাক করা বিষয় হল! প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৯৩৫ ঘনমিটার পানি পতিত হয় এই জলপ্রপাত থেকে যা সত্যিই বিস্ময়কর। যখন জল পড়ে তখন সেই সময় প্রচণ্ড আওয়াজ সৃষ্টি করে বলে স্থানীয় ভাষায় এর নাম ‘মোজি-ওয়া-তুনিয়া’। এর অর্থ ‘বজের ধোয়া’। তাই তারা এই জলপ্রপাত এর কাছে আসতে  ভয় পেতো।

ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত থেকে জল পড়ার সময় জলীয়বাষ্পের মেঘ তৈরি হয় যা প্রায় ৪০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত চলে যায়  এবং প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও যা দেখা যায়। অনিন্দ্য সুন্দর এই প্রাকৃতিক নিদর্শনের অন্যতম আকর্ষণীয় দৃশ্য এখানকার জলীয়বাষ্পে আলো পড়ে রংধনুর সৃষ্টি হওয়া। শুধু দিনেই নয়, পূর্ণিমার রাতেও এই রংধনু দেখা যায়, যা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। ব্রিটিশ অভিযাত্রী ডেভিড লিভিংস্টোন ১৮৫৫ সালে এই জলপ্রপাত দেখে এর নামকরণ করেন রাণী ভিক্টোরিয়ার নামে, সেই সময় তিনি ছিলেন ব্রিটিশ রাণী (এত সুন্দর একটা জিনিসের নাম অমন খারাপ এবং সাম্রাজ্যবাদী রাণীর নামে নামকরণ না করলেও হত) সেই থেকে এটি ভিক্টোরিয়া ফলস নামে পরিচিত হলেও বর্তমানে জিম্বাবুয়ে সরকার এর নামকরণ করেছে ‘মোজি-ওয়া-তুনিয়া’ফলস। 

উপনিবেশ আমলে খ্রিস্টধর্ম ছিল জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রীয় ধর্ম। কিন্তু স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মনিপেক্ষতার ঘোষণা দেওয়া হয়। সে সূত্রে জিম্বাবুয়ের মুসলমানরা কোনো প্রকার বিঘ্নতা ছাড়া ধর্মচর্চা ও দ্বীনের প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে ব্যাপক স্বাধীনতা লাভ করে। মোট তিন ধরনের জাতিগত মুসলিম রয়েছে বর্তমান জিম্বাবুয়েতে। এক. এশিয়ান বংশোদ্ভুত মুসলিম। দুই. মালাবি ও মোজাম্বিক বংশোদ্ভুত মুসলিম। তিন. ওয়ারিম্বা ও অন্যান্য গোত্রের স্থানীয় মুসলমান। সত্তরের দশকে আরব দেশগুলোর বিভিন্ন মুসলিম ধর্ম প্রচারকরা ওয়ারিম্বা জাতি সম্মন্ধে জানতে পারে। ফলে তারা এ গোত্রের পেছনে অনেক সময় ব্যয় করে পুনরায় তাদের সঠিক ইসলাম ধর্ম নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ইসলাম জিম্বাবুয়েতে আগমন করে উপনিবেশবাদের মাধ্যমে। তখন ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ থেকে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে আসে, যাদের সিংহভাগ ছিল মুসলিম। এছাড়াও কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য তারা পার্শ্ববর্তী মোজাম্বিক ও মালাবি থেকে অনেক লোক নিয়ে আসে। তাদেরও অধিকাংশ ছিল মুসলিম। 

রোডেশিয়া যুদ্ধকালীন সময়ে এবং ১৯৪৬ সাল থেকে পুনরায় দক্ষিণ আফ্রিকান টুর্নামেন্ট, কারি কাপে অংশ নেয়। স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৮০ সালে দেশটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় অংশ নিতে শুরু করে। ২১ জুলাই, ১৯৮১ সালে জিম্বাবুয়ে আইসিসি'র সহযোগী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে তারা বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেয়। ৯ম টেস্টখেলুড়ে দেশ হিসেবে জিম্বাবুয়ে ১৯৯২ সালে প্রথম টেস্ট খেলে। হারারেতে অনুষ্ঠিত ভারতের বিরুদ্ধে এ খেলাটি ড্র হয়েছিল। শুরু থেকেই জিম্বাবুয়ে দলটি টেস্ট খেলায় বেশ দূর্বল ছিল। অভিজ্ঞজনদের ধারণা, তাদেরকে অপরিপক্ক অবস্থায় টেস্টের মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু একদিনের ক্রিকেট খেলায় দলটি বেশ প্রতিযোগিতামূখী ভাব বজায় রাখে; যদিও সর্বদিক দিয়ে শক্তিশালী ছিল না। কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটাঙ্গনে তাদের ফিল্ডিংয়ের দক্ষতা বেশ নজর কেড়েছিল। বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড়দের পদত্যাগজনিত কারণে কয়েকটি টেস্ট সিরিজে বেশ দূর্বল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় ২০০৫ সালের শেষ দিকে আইসিসি'র সমর্থনে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড স্বেচ্ছায় টেস্ট ক্রিকেট থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। আগস্ট, ২০১১ সালে প্রায় ছয় বছর স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে ফিরে এসে টেস্টভূক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামে। 

ছবি ও তথ্য – ইন্টারনেট 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন