মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ , ১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার
  >
মানচিত্র

আজ ফিলিপাইনের স্বাধীনতা দিবস

নিউজজি ডেস্ক ১২ জুন , ২০২১, ১২:২৮:১৬

6K
  • ছবি: ইন্টারনেট

ঢাকা: এদেশে ঘুরতে আসো, তোমাকে দেব বিয়াল্লিশ কুমারী উপঢৌকন। এভাবেই পর্যটক টানতে রাজধানী ম্যানিলা থেকে ঘোষণা দিয়েছিলেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট দুতার্তে। ফিলিপাইনে নারীদের দেখা হয় কেবল যৌনসঙ্গী হিসেবে। আসলে দেশটা কেমন? ইতিহাসে কী আছে তাদের? 

ফিলিপাইন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের এক দ্বীপমালা, যা ৭১০৭ টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত, ফিলিপাইনের রয়েছে বিশ্বের অন্যতম এক দীর্ঘ উপকূলরেখা। দেশটি তিনটি প্রধান দ্বীপপুঞ্জে বিভক্তঃ লুজান, যেখানে রাজধানী ম্যানিলার অবস্থান; ভিসাইয়াস (সেবু, ভিসাইয়াস-এর কেন্দ্রে অবস্থিত); এবং মিন্দানাও, দক্ষিণের দ্বীপ এবং এখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।

ফিলিপাইনের আদি অধিবাসী নেগ্রিতো জাতির লোকেরা প্রায় ৩০ হাজার বছর আগে বোর্নিও ও সুমাত্রা দ্বীপ থেকে এখানে এসেছিল। এরপর দক্ষিণ থেকে মালয় জাতির লোকেরাও এখানে আসা শুরু করে। মালয়রা এখানে বারাংগে নামে পরিচিত। ৯ম শতকে চীনা ব্যবসায়ীরা এখানে আসে ও বসতি স্থাপন করে। কখনও কখনও আরবদের জাহাজও এখানে ভিড়ত এবং ফিলিপাইনের দক্ষিণে এরাই ইসলামের প্রচলন করে।

তবে ১৬শ শতকে স্পেনীয়দের আগমনের আগে মালয়রাই ছিল ফিলিপাইনের প্রধান জাতি। স্পেনীয় পর্ব পর্তুগিজ অভিযাত্রী ফের্দিনান্দ মাগেলান ১৫২১ সালে ফিলিপাইনে পৌঁছান এবং স্পেনের হয়ে দ্বীপটি দাবী করেন। কিন্তু তিনি এখানে বেশিদিন ছিলেন না। পরবর্তীতে স্পেনীয় শক্তি এখানে ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে এবং খ্রিস্টধর্মের পত্তন ঘটায়। ১৮১০ সালে মেক্সিকো স্পেন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার আগ পর্যন্ত ফিলিপাইনের দ্বীপগুলি স্পেনীয় উত্তর আমেরিকার অধীনে ছিল এবং ফিলিপাইন ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে যাতায়াত বিদ্যমান ছিল।

লুসন দ্বীপের ম্যানিলা শহরকে কেন্দ্র করে স্পেনীয় ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং লোকজন গণহারে রোমান ক্যাথলিক ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে শুরু করে। তবে কেন্দ্রীয় ফিলিপাইন ও লুসনের বাইরে, যেমন মিন্দানাও দ্বীপে স্পেনীয় প্রভাব ছিল কম। দীর্ঘ স্পেনীয় শাসনের সময় বহু বিপ্লব ঘটে। ১৯শ শতকের শেষের দিকে ইউরোপে শিক্ষিত ফিলিপিনোরা স্পেনীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকে এবং ফিলিপিনোদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। ১৮৯৮ সালে স্পেনীয়-মার্কিন যুদ্ধে মার্কিনীরা ম্যানিলা উপসাগরে স্পেনীয় নৌবহরকে পরাজিত করে। চীনা-বংশোদ্ভূত ফিলিপিনো নেতা এমিলিও আগিনালদো ঐ বছরের ১২ই জুন ফিলিপাইনকে স্পেন থেকে স্বাধীন ঘোষণা করেন।

স্পেনীয়দের পরাজিত করার পর মার্কিনীরা ফিলিপাইনের দখল নেয়। স্পেন প্যারিস শান্তি চুক্তিতে দ্বীপগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে দেয়। কিন্তু ১৮৯৯ সালেই মার্কিন শাসনের বিরুদ্ধে ফিলিপিনোরা বিদ্রোহ শুরু করে দেয়। তিন বছর বিক্ষিপ্ত মার্কিন-ফিলিপিনো যুদ্ধে বহু হাজার ফিলিপিনো ও মার্কিন সেনা নিহত হয়। ১৯০২ নাগাদ শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রবাসীদের আয় ও বহির্মুখী ব্যবসার বড় ধরনের উত্থানে আগামী দশকে ফিলিপাইনের অর্থনীতি দ্বিগুণের বেশি বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক-ট্যাংক আইএইচএস এমন পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ, অনেক দিন ধরে পেছনে পড়ে থাকা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিনটি রাষ্ট্র ২০৩০ সাল নাগাদ এ অঞ্চলের শীর্ষ বড় অর্থনীতিতে পরিণত হবে। ফিলিপাইনের অর্থনীতি আগামী দশকে বিড়াল ছানা থেকে একটি বাঘে রূপ নেবে। দেশটির দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সক্ষমতা অর্জন করেছে।

২০১৬ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটি প্রতি বছর ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। বর্তমানে দেশটির অর্থনীতির আকার ২৮ হাজার কোটি ডলার, যা ২০২৪ সাল নাগাদ ৬৮ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে দেশজ গড় উৎপাদনের প্রক্ষেপণ ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। দেশটির এক কোটির বেশি প্রবাসী নাগরিক থেকে প্রাপ্ত আয় ও স্থানীয় বহিমুর্খী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হচ্ছে উল্লেখযোগ্যভাবে, যা শুরু হয়েছে গত দশকে।

রাজধানী ম্যানিলায় প্রতি বছর ১০ লাখ পর্যটনের আগমন ঘটে। ১ কোটি ২০ লাখ অধিবাসীর এই জনবহুল নগরী এবং বোরাকেইয়ের মতো প্রতিবেশী নগরী সমূহের চমৎকার সমুদ্র সৈকত ও রিসোর্ট বিশ্বের সকল দেশের পর্যটক ও দর্শনার্থীদের কাছে জনপ্রিয়।

ম্যানিলার উপসাগর এবং বে ওয়াক পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। সাগরের উপকূলবর্তী দীর্ঘ প্রাকৃতিক পোতাশ্রয় থেকে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য অবলোকন যে কোন দর্শনার্থীর জীবনে একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকার কথা। ম্যানিলা উপসাগরের বুকে গোলাপী ও কমলা রংয়ের খেলা প্রকৃতির এক অনন্য ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

মাকাতি হচ্ছে আরেকটি দর্শনীয় স্থান। এটা ফিলিপাইনের একটি ব্যবসা ও আর্থিক জেলা যেখানে চমৎকার হোটেল, বিপনী বিতান, বুটিক ও মল এক সারিতে রয়েছে। এখানে পাওয়া যায় চমৎকার স্থানীয় কিংবা আন্তর্জাতিক খাবার। গ্রীন বেল্ট মল হচ্ছে ফিলিপাইনের সর্ববৃহৎ বিলাসবহুল মল যেখানে পাওয়া যায় আন্তর্জাতিক মানের ব্রান্ড সামগ্রী, যা বিশ্বমানের আবাসন ট্রাম্প টাওয়ারের নিকটে অবস্থিত।

ম্যানিলার জনপ্রিয় বিনোদন পার্ক স্টার সিটিতে রয়েছে উপভোগ্য রোলার কোস্টারসহ অনেক রাইড। মেট্রো ম্যানিলার ম্যানিলা ওশেন পার্কে রয়েছে জলজ ও সামুদ্রিক প্রাণীর মেলা। এছাড়া ডাউভিং এবং হাঙ্গর স্নোর্কেলিং ইত্যাদির সাথে সাঁতার কাটার মজাও উপভোগ করতে পারেন পর্যটকেরা। ম্যানিলার ‘মল অব এশিয়া’ এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম। এটা শুধু কেনাকাটার জায়গা নয়, এখানে রয়েছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক রেস্তোরাঁ ও কফি শপ।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ দ্বীপ হলো ফিলিপাইনের পালাওয়ান। এই দ্বীপের সৌন্দর্য যে কাওকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। গ্রামীণ, শান্ত, স্নিগ্ধ ও সাশ্রয়ী পরিবেশই মূলত পর্যটকদের আরও বেশি আকর্ষণ করে। পালাওয়ান দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত রয়েছে পালাওয়ান নামেই একটি প্রধান দ্বীপ ও এর আশপাশে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে প্রায় ১৮০০ ছোট দ্বীপ। দ্বীপটির চারপাশে সবুজে ঘেরা পাহাড় ও ৫ মাইল ধরে বিস্তৃত ভূগর্ভস্থ নদীর নীলাভ পানি, সব মিলিয়ে এক অনন্য নৈসর্গিক রূপ সৃষ্টি করেছে এই স্থানটির। পালাওয়ান দ্বীপের নীলাভ পানি ও সবুজ প্রকৃতির সৌন্দর্য যে কোনো সৌন্দর্যের কাছে হার মানবে তাতে সন্দেহ নেই।

একনজরে রাষ্ট্রীয় নাম : রিপাবলিক অব দ্য ফিলিপাইন।

রাজধানী : ম্যানিলা।

বৃহত্তম শহর : কুইজন সিটি

সরকারি ভাষা : ফিলিপিনো, ইংরেজি

স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা : ১৯টি, স্প্যানিশ ও আরবিও স্বীকৃত

জাতিগোষ্ঠী : বিসায়ান (৩৩.৮ শতাংশ), তাগালোগ (২৪.৪ শতাংশ), ইলোকানো (৯.৮ শতাংশ), মারো (৫.১ শতাংশ), বিকোলানো (৬.৮ শতাংশ), চায়নিজ (১.২ শতাংশ), অন্যান্য (১৯.৫ শতাংশ)

সরকার পদ্ধতি : রাষ্ট্রপতিশাসিত সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র

আইনসভা : কংগ্রেস

উচ্চকক্ষ : সিনেট

নিম্নকক্ষ : হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস

স্বাধীনতা ঘোষণা : ১২ জুন ১৮৯৮

আয়তন : তিন লাখ বর্গকিলোমিটার

জনসংখ্যা : ১০ কোটি ১৬ লাখ ৪২ হাজার ৮০০ জন (২০১৫ সালের হিসাব)

ঘনত্ব : ৩৩৮.৮১ (প্রতি বর্গকিলোমিটার)

জিডিপি : মোট ৭৫১.৭৭০ বিলিয়ন ডলার

মাথাপিছু আয় : সাত হাজার ৪১২ ডলার

মুদ্রা : পেসো

ছবি ও তথ্য – ইন্টারনেট

নিউজজি/এস দত্ত

 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন