মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১ , ১৮ রমজান ১৪৪৬

ফিচার
  >
মানচিত্র

ক্রোয়েশিয়া সম্পর্কে আপনি কতটা জানেন?

নিউজজি ডেস্ক ২২ জুন , ২০২২, ১১:১৩:২০

9K
  • ছবি :ইন্টারনেট

ঢাকা: ক্রোয়েশিয়া নামের দেশটি সম্পর্কে এশিয়া মহাদেশের মানুষের তেমন কোনো ধারণা নেই। তাদের এমন কোনো ঐতিহ্য বা ইতিহাস নেই যা মানুষকে মনে রাখতে সহযোগিতা করবে। তবে রাশিয়ায় ফুটবল বিশ্বকাপে রীতিমতো রূপকথার গল্প রচনা করল ক্রোয়েশিয়া। অপ্রত্যাশিত হলেও সত্য, টুর্নামেন্টজুড়ে উপহার দিল নান্দনিক ফুটবল। লুকা মড্রিচ-ইভান রাকিটিচদের পায়ে ফুটল শৈল্পিক ফুল। যার বদৌলতে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়াটরা। ফ্রান্সের বিপক্ষে শিরোপা জিতুক আর না জিতুক বিজয়মাল্য তাদের প্রাপ্য! কিন্তু এ দেশ সম্পর্কে কতটা জানেন আপনি? চলুন সে দেশ সম্পর্কে কিছুটা জেনে আসি।

ক্রোয়েশিয়ার ভূগোল

ক্রোয়েশিয়া ইউরোপ মহাদেশের একটি রাষ্ট্র। এর সরকারি নাম প্রজাতন্ত্রী ক্রোয়েশিয়া। এটির রাজধানী জাগরেব। ক্রোয়েশিয়া দক্ষিণপূর্ব ইউরোপের কেন্দ্রে অবস্থিত। এর উত্তর পূর্ব সীমান্তে হাঙ্গেরি, পূর্বে সার্বিয়া, দক্ষিণ পূর্বে বসনিয়া, হার্জেগোভিনা ও মন্টিনিগ্রো। এটি ৪২ ° এবং ৪৭ ° উত্তর ও ১৩ ° এবং ২০ ° পূর্ব অক্ষাংশে অবস্থিত। দেশটি দেখতে ফালি চাঁদের মত। কেন্দ্রীয় মহাদেশীয় ক্রোয়েশিয়া ও স্লাভোনিয়াতে সমভূমি, হ্রদ ও পাহাড় অবস্থিত। পশ্চিমে রয়েছে দিনারীয় আল্পস পর্বতমালার বৃক্ষ আচ্ছাদিত অংশ। আর রয়েছে আড্রিয়াটিক সাগরের পর্বতসঙ্কুল তটরেখা। এই উপকূলে আরও আছে প্রায় হাজার খানেকের মত বিভিন্ন আকৃতির দ্বীপ। এটি ৫৬.৫৯৪ বর্গ কিলোমিটার (২১,৮৫১ বর্গ মাইল) জুড়ে বিস্তৃত। এর মধ্যে ৫৬.৪১৪ বর্গ কিলোমিটার ভুমি (২১,৭৮২ বর্গ মাইল) এবং ১২৮ বর্গ কিলোমিটার জল ভাগ (৪৯ বর্গ মাইল) রয়েছে।

ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাস

১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট হন তুদজম্যান। স্বাধীনতা ঘোষণা করে ১৯৯১ সালে যুদ্ধে জড়িয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। তখন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন, দেশের ক্রীড়াবিদরা হলেন দেশের রাষ্ট্রদূত। বলকান রাজনীতি ও ক্রীড়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ দারিও ব্রেনতিন বলেন, তুদজম্যানের স্পষ্ট দর্শন ছিল, ফুটবল ও ক্রীড়া একটি জাতির গড়ন ঠিক করে। ১৯৯৮ সালে যেদিন বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে উন্নীত হয় ক্রোয়েশিয়া, সেদিন প্রেসিডেন্ট একে স্রেফ ফুটবল দক্ষতা নয় বরং ‘ক্রোয়েশিয়ান চেতনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।

ক্রোয়েশিয়ার জনসংখ্যা মাত্র ৪০ লাখ। ১৯৫০ সালে উরুগুয়ের বিশ্বকাপ জয়ের পর, এত কম জনসংখ্যার কোনো দেশ বিশ্বকাপ জেতেনি। কোনো ক্রীড়া পদক জয়ের অর্থনৈতিক প্রভাব কী হবে, তার হিসাব করাটা সহজ কাজ নয়। তবে এটা বলা যায় যে, ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ জিতলে দেশটি বিশ্বজুড়ে যেই ইতিবাচক প্রচারণা পাবে, তা বছরের পর বছর ধরে চালানো জনসংযোগ প্রচারণার চেয়েও অনেক বেশি মূল্যবান হবে। ১২ জুলাই দেশের পুরো মন্ত্রীসভা যে ফুটবল দলের জার্সি গায়ে বৈঠক করলেন, সেটা তাই খুব বিস্ময়কর কোনো খবর নয়।

ক্রোয়েশীয় ভাষা

'হ্‌র্‌ভাৎস্কি য়েজ়িক্‌' একটি দক্ষিণ স্লাভীয় ভাষা। এটি মূলত ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ক্রোয়াট সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে প্রচলিত। ভাষাবিজ্ঞানীরা অনেক সময় এটিকে বৃহত্তর সার্বো-ক্রোয়েশীয় ভাষার অন্তর্গত বলে গণ্য করেন।

ক্রোয়েশিয়ার রাজনীতি

ক্রোয়েশিয়ার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোতে পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী একটি বহুদলীয় ব্যবস্থাতে সরকার প্রধান। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে এবং আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ক্রোয়েশীয় সংসদ বা সাবর-এর হাতে ন্যস্ত। বিচার ভাগ নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন বিভাগ হতে স্বাধীন। ক্রোয়েশিয়ার বর্তমান সংবিধান ১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর গৃহীত হয়। দেশটি ১৯৯১ সালের ২৫ জুন প্রাক্তন ইউগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।

ক্রোয়েশিয়া জাতীয় ফুটবল দল

 

স্বাধীন ক্রোয়েশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঞ্জো তুদজম্যান, যিনি নব্বইয়ের দশকে যুগোস্লাভিয়া তিক্ত ভাঙ্গন ও যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ফুটবলে বিজয় একটি দেশের আত্মপরিচয়কে ততটাই রূপায়ন করে, যতটা করে যুদ্ধ’।এটা প্রায়ই বলা হয় যে, ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ১৯৯০ সালের মে মাসের একটি দিন থেকে, যেদিন স্থানীয় ফুটবল ক্লাব জাগরেব ও সার্বিয়ার বেলগ্রেডের ভক্তরা সহিংস সংঘাতে লিপ্ত হন।

১৯৯৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশ নেয় দলটি। প্রতিযোগিতায় তারা তৃতীয় স্থান লাভ করে বিশ্ব ফুটবলে সাড়া জাগায়। দলের পক্ষে ডাভর শুকের শীর্ষ গোলদাতার ভূমিকায় অধিষ্ঠিত হন ও বিশ্বকাপের সোনার বুট লাভ করেন।পরে ২০১৮ রাশিয়া ফুটবল বিশ্বকাপে ফাইনালে ফ্রান্সের মুখোমুখি হয় ক্রোয়েশিয়া।

এক নজরে ক্রোয়েশিয়া:

সরকারি নাম: ক্রোয়েশিয়া প্রজাতন্ত্র।

রাজধানী: জাগ্রেব।

স্বাধীনতা ঘোষণা: ১৯৯১ সালে।

সরকার পদ্ধতি: ইউনিটারি পার্লামেন্টারি কনস্টিটিউশনাল রিপাবলিক।

আইনসভা: সাবুর।

আয়তন: ৫৬ হাজার ৫৯৪ বর্গকিলোমিটার।

জনসংখ্যা: ৪২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৯ জন।

ঘনত্ব: প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৭৫.৮ জন।

মুদ্রা: কুনা।

মাথাপিছু আয়: ২১ হাজার ৭৯১ ডলার।

ভাষা: ক্রোয়েশীয়।

প্রধান ধর্ম: খ্রিস্টধর্ম।

জাতিসংঘে যোগদান: ১৯৯২ সালে।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন