মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ , ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার
  >
মানচিত্র

রঙধনু নদীর দেশ কলম্বিয়া

নিউজজি ডেস্ক ৫ জুলাই , ২০২২, ১৪:১৩:৪৪

493
  • ছবি: সংগৃহীত

কানো ক্রিস্টালেস নামের এক নদী আছে পৃথিবীতে। সে নদীর জলের রঙ লাল, নীল, কালো, সবুজ আর হলুদ। এই নদী বয়ে গেছে যে দেশের উপর দিয়ে, সে দেশের নাম কলম্বিয়া। অবাক বিস্ময়ের এই নদীটিকে পৃথিবী নাম দিয়েছে রঙধনু নদী বলে।

কলম্বিয়া দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। কলম্বিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে আছে নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত, পর্বতমালা এবং নিবিড় সবুজ অতিবৃষ্টি অরণ্য। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং শক্তিশালী মাদক চোরাকারবারী চক্রের প্রভাবে দেশটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কুখ্যাতি অর্জন করেছে।

যদিও দেশটির গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার ইতিহাস পুরনো, তা সত্ত্বেও দেশটিতে লাতিন আমেরিকার দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রেণীবৈষম্যমূলক একটি সমাজ বিদ্যমান।

কলম্বিয়া দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র দেশ যার ক্যারিবীয় সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর উভয় জলভাগেই তটরেখা আছে। কলম্বিয়ার পূর্বে ভেনেজুয়েলা ও ব্রাজিল, দক্ষিণে ইকুয়েডর ও পেরু, এবং উত্তর-পশ্চিমে পানামা। বোগোতা দেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।

আমেরিকা মহাদেশদ্বয়ে ইউরোপীয়দের আগমনের আগে বর্তমান কলম্বিয়া যেখানে অবস্থিত, সেই অঞ্চলটিতে বেশ কিছু আদিবাসী আমেরিকান জাতি বাস করত। এদের মধ্যে চিবচা জাতি অন্যতম। ১৬শ শতক থেকে ১৯শ শতক পর্যন্ত কলম্বিয়া স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৮১৯ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে।

স্বাধীনতার পরে এটি একটি নির্বাচিত সরকার-শাসিত প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। কলম্বীয় সমাজ উচ্চ ও নিম্ন শ্রেণীতে বিভক্ত এবং এদের মধ্যে বর্ধমান শ্রেণীবৈষম্য বিদ্যমান। ২০শ শতকে দেশটির কফিভিত্তিক অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত ভূমিগুলির মালিকানা সম্প্রসারণের ফলে একটি উল্লেখযোগ্য মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে।

১৬শ শতকের স্পেনীয় সমাজব্যবস্থা থেকে কলম্বিয়ার প্রকট শ্রেণীবৈষম্যের বীজ বপিত হয় এবং ঔপনিবেশিক আমলে এটি কলম্বীয় সমাজের সাথে অঙ্গীভূত হয়ে যায়। পারিবারিক বংশপরম্পরা, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ, এবং জাতিগত পটভূমি কলম্বিয়াতে কোন ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা নিয়ন্ত্রণ করে।

বিগত ১০০ বছরে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটলেও রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা একটি ক্ষুদ্র বিত্তশালী শ্রেণীর হাতে কুক্ষিগত। ২০শ শতকের মধ্যভাগে গৃহযুদ্ধ কলম্বিয়ার সমাজব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বামপন্থী গেরিলা ও আধা-সামরিক বাহিনী এবং কলম্বিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যে দেশের গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য ধনী শিল্পোন্নত দেশগুলিতে মাদকদ্রব্যের, বিশেষত কোকেনের চাহিদার ফলে কলম্বিয়াতে অবৈধ মাদক চোরাচালান ব্যবসা প্রসার লাভ করে। কলম্বীয় সরকার মাদক উৎপাদন সীমিত করার এবং বিরোধী গেরিলা বাহিনীর সাথে শান্তিপূর্ণ সমঝোতার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ২১শ শতকের শুরুতে এসেও সহিংসতা কলম্বীয় নাগরিকদের জীবনের নিত্যনৈমিত্যিক ঘটনা ছিল।

আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় কলম্বিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী ফুটবল দল। কলম্বিয়ান ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃক এ দলটি পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।

কনমেবলের অন্যতম সদস্য কলম্বিয়া বিশ্বকাপে চমকের পর চমক দেখাতে যেমন বিখ্যাত, তেমনই আত্মঘাতী গোলের কারণে খুন হতে হয়েছিল এদেশের মেধাবী খেলোয়াড় আন্দ্রেস এসকোবার সালদারিয়াগা। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে কোচের বাছাই করা ২৩ জনের দলে ঠাঁই মিলে গিয়েছিল এসকোবারের।গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন কলম্বিয়ার ফুটবলার এসকোবারের দেহ। আকস্মিক এই ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল পুরো বিশ্ব।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া বরাবরই শক্তিশালী ফুটবল দল। তাদের দেশেরই এক ছিমছাম খেলোয়াড়কে আত্মঘাতী গোলের জন্য ক্ষমা করেনি পেশাদার খুনিরা। ১৯৯৪ সালের যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপ তখনও চলছিল। তারিখটা ছিল, ২রা জুলাই। কলম্বিয়ার মেডেলিন শহরে একটি রেস্তোঁরায় প্রকাশ্যেই খুব কাছ থেকে ৬টি গুলি করা হয় ডিফেন্ডার আন্দ্রেস এসকোবারকে।

ছবি ও তথ্য – ইন্টারনেট

নিউজজি/এস দত্ত

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন