মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১ , ১৮ রমজান ১৪৪৬

ফিচার
  >
মানচিত্র

ভৌগলিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ দেশ স্পেন

নিউজজি ডেস্ক ১৩ অক্টোবর , ২০২২, ১৩:৩০:১৮

885
  • ছবি: National Geographic kids

ঢাকা: স্পেন শুনলেই দেশটির বিখ্যাত উৎসব `সান ফারমিন` এর কথা মনে আসে। এই উৎসবটি ‘রানিং অব বুলস’ বা ‘বুলফাইট’ নামেও পরিচিত। প্রতি বছর বিভিন্ন দেশের ১০ থেকে ১২ লাখ মানুষ এ উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। তবে এই সামান্য জানার বাইরেও রয়েছে স্পেনের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির দীর্ঘ ইতিহাস।

ইউরোপ মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের দেশ স্পেন । শাসন ব্যবস্থার ধরন অনুযায়ী দেশটিতে সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বিরাজমান। এটি ইবেরীয় উপদ্বীপের প্রায় ৮৫ শতাংশ এলাকা জুড়ে অবস্থিত। স্পেনের উত্তরে বিস্কায়া উপসাগর এবং উত্তর-পূর্বে পিরিনীয় পর্বতমালা দেশটির সঙ্গে ফ্রান্স এবং অতিক্ষুদ্র রাষ্ট্র অ্যান্ডোরার একটি প্রাকৃতিক সীমানা গঠন করেছে। এছাড়া পূর্ব দিকে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর এবং পশ্চিমে পর্তুগাল ও আটলান্টিক মহাসাগর স্পেনের বাকী সীমানা নির্ধারণ করেছে।

স্পেনের আয়তন ৫ লাখ ৫ হাজার ৯৯০ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের বিচারে রাশিয়া, ইউক্রেন ও ফ্রান্সের পরে স্পেন ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম এবং দক্ষিণ ইউরোপের বৃহত্তম দেশ। দেশটিতে ৮ কোটি ২৭ লাখের অধিক মানুষ বসবাস করে। মাদ্রিদ স্পেনের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। এছাড়া বার্সেলোনা, বালেন্সিয়া, সেবিইয়া, বিলবাও এবং মালাগা অন্যান্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর।

স্পেনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ লোকের মাতৃভাষা স্পেনীয়। এটি স্পেনের সরকারি ভাষা। এখানে বাস্ক, আস্তুরীয়, কাতালান ও গালিসীয় ভাষাভাষীও রয়েছে। আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে দেশটির মানুষ স্পেনীয়, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষা ব্যবহার করে। দেশটিতে ৯৬ শতাংশ নাগরিক ক্যাথলিক খ্রিস্টান। এছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মানুষও এখানে বসবাস করে।

স্পেনের ইতিহাস ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভিন্ন। 

প্রাচীনকালে ফিনিসীয়, কার্থেজীয় ও সবশেষে রোমানরা অঞ্চলটি দখল করে। পঞ্চম শতকে উত্তর ইউরোপ থেকে আগত ভিজিগথ জাতির লোকেরা দেশটিকে শাসন করা শুরু করে। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক সাংগঠনিক দুর্বলতার সুযোগে অষ্টম শতকে উত্তর আফ্রিকা থেকে আগত আরবি ভাষী মুর জাতির লোকেরা ইবেরীয় উপদ্বীপের অধিকাংশ দখলে নিতে সক্ষম হয়। মধ্যযুগের প্রায় পুরোটা জুড়েই মুরেরা স্পেনের মূল শাসক ছিল। নবম ও দশম শতকে শিক্ষা, গণিত, ভূগোল, স্থাপত্য, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও কাব্যচর্চায় কর্ডোভা ছিল গোটা ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় শহর।

১৫ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এসে উত্তর স্পেনের খ্রিস্টান রাজ্যগুলো একত্র হয়ে মুরদের কাছ থেকে হৃত ইবেরীয় উপদ্বীপ ফেরত নেবার জন্য যুদ্ধ করে এবং মুর গোত্রীয় শাসনকর্তাকে বিতাড়িত করে। ওই বছর নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাসের নেতৃত্বে স্পেনের রাজার জাহাজের বহর আমেরিকা মহাদেশে পদার্পণ করে। এরপরে প্রায় ৩০০ বছর ধরে স্পেনীয় অভিযাত্রী এবং যোদ্ধারা বিশ্বের আনাচে কানাচে ভ্রমণ করে এবং স্পেনীয় রাজার জন্য বিশাল আয়তনের ভূখণ্ড দখল করে। সেসময় আমেরিকা মহাদেশ থেকে লুটকৃত ধনসম্পদের জন্য স্পেন ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষমতাধর শক্তিতে পরিণত হয়।

১৭ শতকে স্পেনের অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দেয়। ১৮ ও ১৯ শতকে ইউরোপ মহাদেশ এবং সারা বিশ্বজুড়ে স্পেনের ক্ষমতা বিরতিহীন ভাবে হ্রাস পেতে থাকে। বিংশ শতাব্দীতে এসে গৃহযুদ্ধ দেশটিকে আবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কেন্দ্রে ফেরত নিয়ে আসে। যুদ্ধশেষে স্বৈরশাসক ফ্রানসিস্কো ফ্রাংকোর চার দশকব্যাপী শাসন স্পেনকে অন্যান্য দেশ থেকে আরও আলাদা করে দেয়। ১৯৭৫ সালে ফ্রাংকোর মৃত্যুর পর হুয়ান কার্লোস নামক বুর্বন বংশের রাজা আবার সিংহাসনে ফেরত আসেন এবং দেশটিতে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে দেশটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অনেকগুলো সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে।

ভৌগলিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ দেশ স্পেন। দেশটি পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল। স্পেনে আকর্ষণীয় সব দুর্গবেষ্টিত প্রাসাদ, বরফাবৃত পর্বতমালা, প্রাচীন জল সরবরাহের নালা, বিশালাকার সৌধ এবং প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের বিভিন্ন গল্প মানুষের মুখে মুখে ঘোরে। তবে এর শহরগুলো অত্যন্ত আধুনিক। 

আন্দালুসিয়া অঞ্চলের রাজধানী সেবিইয়া তাঁর সঙ্গীতের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যবাহী জীবনযাপনের জন্য বিখ্যাত। কাতালুনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা তার ধর্মনিরপেক্ষ স্থাপত্য এবং নৌপরিবহন শিল্পের জন্য সুবিদিত। আর জাতীয় রাজধানী মাদ্রিদের আঁকাবাঁকা সরু রাস্তা, জাদুঘর, গ্রন্থালয় এবং দিন-রাত ধরে সক্রিয় জীবনধারার কথাও সবার জানা। মাদ্রিদ স্পেনের বৃহত্তম শহর এবং বহু শতাব্দী ধরে দেশটির আর্থিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে স্পেনে অনেক দেরিতে আধুনিকতার আগমন ঘটে। ১৯৬০ সালের আগ পর্যন্ত স্পেনের সমস্ত শিল্পকারখানাগুলো উত্তরের কাতালুনিয়া ও বাস্ক অঞ্চলগুলোতে সীমাবদ্ধ ছিল। তখন থেকে স্পেনের অর্থনীতি দ্রুত প্রবৃদ্ধি লাভ করেছে। বিশেষ করে হালকা শিল্পগুলো স্পেনকে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া সেবা খাত, বিশেষ করে পর্যটন খাতও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে।

স্পেনের শিল্প-সংস্কৃতির দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। 

দেশটিতে সংস্কৃতির দুইটি মূল ক্ষেত্র চিত্রকর্ম ও সাহিত্য। সাম্প্রতিককালে ঐ দুই ক্ষেত্রে নিজের উপস্থিতি বজায় রেখে স্পেন চলচ্চিত্র নির্মাণ, স্থাপত্য এবং সঙ্গীতে অনেক বড় মাপের শিল্পী ও শিল্পকলা বিশ্বকে উপহার দিয়েছে। এছাড়া ষাঁড়ের লড়াই এবং ফিয়েস্তা উৎসব স্পেনের সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

ফুটবল স্পেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। রিয়েল মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা দেশটির দুটি জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত। একবার ফিফা বিশ্বকাপ জয়লাভের সুনাম অর্জন করেছে স্পেন। এছাড়া দেশটির মানুষ বাস্কেটবল টেনিস, হ্যান্ডবল খেলতে এবং সাইকেল ও মটর সাইকেল চালাতে পছন্দ করে। 

নিউজজি/এস দত্ত

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন