শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ , ২০ শাওয়াল ১৪৪৬

ফিচার
  >
ব্যক্তিত্ব

কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর জন্মদিন আজ

নিউজজি ডেস্ক ৮ ফেব্রুয়ারি , ২০২৫, ১৩:৩৮:৪৯

129
  • সংগৃহীত

ঢাকা: কোনো এক মা’কে- শিরোনামের কবিতাটি আজও বিশেষ দিবসে মানুষের মুখে মুখে ফেরে- “মাগো ওরা বলে/সবার কথা কেড়ে নেবে।/তোমার কোলে শুয়ে/গল্প শুনতে দেবে না।/বলো, মা/তাই কি হয়?/তাইতো আমার দেরি হচ্ছে।/তোমার জন্যে/কথার ঝুড়ি নিয়ে/তবেই না বাড়ি ফিরব।/লক্ষ্মী মা,/রাগ করো না,/মাত্রতো আর কটা দিন।”(আংশিক)

কিংবা, আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি- শিরোনামে কবিতাটাও সাহিত্যানুরাগীদের কাছে তো বটে, আবৃত্তিশিল্পীদের কাছে খুবই প্রিয় একটি কবিতা।

আমি উচ্চারিত সত্যের মতো/স্বপ্নের কথা বলছি।/উনুনের আগুনে আলোকিত/একটি উজ্জ্বল জানালার কথা বলছি।/আমি আমার মা’য়ের কথা বলছি/তিনি বলতেন প্রবহমান নদী/যে সাঁতার জানে না তাকেও ভাসিয়ে রাখে। (আংশিক)

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় এই কবিতা পড়ে বলেছিলেন, ‘মন্ত্রের মতো অমোঘ উচ্চারণ। এমন কবিতা বাংলা ভাষায় লেখা সম্ভব আমার জানা ছিল না।’

এই কবিতায় মন্ত্রোপম আরো কিছু উচ্চারণ, ‘‘যখন রাজশক্তি আমাদের আঘাত করল/ তখন আমরা প্রাচীন সংগীতের মতো/ ঋজু এবং সংহত হলাম।/পর্বতশৃঙ্গের মতো/মহাকাশকে স্পর্শ করলাম/ দিকচক্রবালের মতো/ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলাম;/ এবং শ্বেত সন্ত্রাসকে সমূলে উৎপাটিত করলাম।/ তখন আমরা নক্ষত্রপুঞ্জের মতো/ উজ্জ্বল এবং প্রশান্ত হলাম।’’

১৯৩৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালের বাবুগঞ্জের বাহেরচরের ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রতিভাধর এই কবি। এমন কবিতা বাংলা কবিতার শরীরে রুপালি পালক লাগানো কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর আজ জন্মদিন। তার জন্মদিন উদযাপনে সাহিত্য সংগঠনগুলো নিয়েছে নানা উদ্যোগ।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ছিলেন ভাষা আন্দোলন প্রজন্মের কবি। এ কারণে তাঁর কবিতায় সবসময় একজন স্পষ্ট বক্তার উপস্থিতি অনুভব করা যায়। তার দুটি দীর্ঘ কবিতা ‘আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি’ এবং ‘বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা’ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে অভূতপূর্ব সংযোজন। ১৯৭৯ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৮৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

তার প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- সাত নরী হার, কখনো রং কখনো সুর, কমলের চোখ, আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি, সহিষ্ণু প্রতীক্ষা, বৃষ্টি এবং সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা, আমার সময়, আমার সকল কথা ও খাঁচার ভিতর অচিন পাখি।

বাবা আবদুল জব্বার খান পাকিস্তানের আইন পরিষদের স্পিকার ছিলেন। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক, ১৯৫০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন তিনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে। ১৯৮২ সালে সচিব হিসেবে অবসর নেন এবং মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। কৃষি ও পানি সম্পদমন্ত্রী হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করে ১৯৮৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেন।

পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেন বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থায়। ১৯৯৭ সালে তিনি একই সংস্থা থেকে পরিচালক হিসেবে অবসর নেন। ২০০১ সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন মহান এই কবি।

নিউজজি/পি.এম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন