শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ , ২০ শাওয়াল ১৪৪৬

ফিচার
  >
ব্যক্তিত্ব

ঢাকা বেতার কেন্দ্রের প্রথম মুসলিম মহিলা কণ্ঠশিল্পী লায়লা আর্জুমান্দ বানু

নিউজজি ডেস্ক ১০ ফেব্রুয়ারি , ২০২৫, ১৫:০২:২৮

149
  • সংগৃহীত

অসামান্য ও বিরল প্রতিভার অধিকারী সঙ্গীতশিল্পী লায়লা আর্জুমান্দ বানু ১৯২৯ সালের ৫ জানুয়ারি ঢাকায় একটি ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সৈয়দ মোহাম্মদ তৈফুর ছিলেন লেখক, প্রাচীন নিদর্শনাদির সংগ্রাহক ও ইতিহাস গবেষক। মাতা সারা তৈফুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট মেম্বার ও পাকিস্তান ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের মেম্বার ছিলেন এবং বাবা-মা দুজনেই বেতার ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

৯ বছর বয়সে তিনি ওস্তাদ গুল মোহম্মদ খানের কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতচর্চা শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে ১০ বছর বয়সে সর্বপ্রথম অল ইন্ডিয়া রেডিও’র ঢাকা বেতার কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিশুশিল্পী হিসেবে গান পরিবেশন করেন এবং ১৯৬৭ সালে টেলিভিশনে গান পরিবেশন শুরু করেন। লায়লা আর্জুমান্দ বানু মূলত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী। পরে এই প্রখ্যাত শিল্পী রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, আধুনিক গান, পল্লীগীতি, গজল ও লোকসঙ্গীতের ক্ষেত্রে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি অর্জন করেন।

দেশ-বিদেশে তাকে ডাকা হতো ‘নাইটইঙ্গল দি ইস্ট’ এবং ‘বুলবুলে পাকিস্তান’ নামে। তিনি একমাত্র সঙ্গীতশিল্পী যিনি বাংলা, উর্দু, পারসি, তুরকি, রুশ ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীত পরিবেশনে পারদর্শী ছিলেন। বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রেও তিনি নেপথ্য কণ্ঠ দিয়েছেন। তিনি ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ বিশেষ করে নজরুল সঙ্গীতের। নজরুল সঙ্গীতের বাণী ও সুরের বিকৃতি রোধের জন্য আজীবন পরিশ্রম করে গেছেন।

লায়লা আর্জুমান্দ বানু ইরানে পারসি গান পরিবেশনের জন্য ইরান শাহের দেয়া ‘করনেশন স্বর্ণপদক’ এবং ১৯৬৯ সালে তদানীন্তন পাকিস্তান প্রেসিডেন্টের সম্মানজনক ‘প্রাইড অব পারফরমেন্স’ পদক লাভ করেন। সঙ্গীতের পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রেও তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় তিনি অষ্টম স্থান অধিকার করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারসি ও দর্শন শাস্ত্রে পড়াশোনা করেন।

তিনি ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অবৈতনিক প্রিন্সিপাল, ১৯৯১ সাল পর্যন্ত নজরুল স্বরলিপি সত্যায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয় সাংস্কৃতিক কমিশনের সদস্য ও জাদুঘরের ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার স্বামী সাবেক স্পিকার শামসুল হুদা চৌধুরী। তাদের একমাত্র কন্যা শাহনাজ হুদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং এমএলবি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

তার দুই বোন লুলু বিলকিস বানু ও মালকা বানুও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। উপমহাদেশের অবিস্মরণীয় এই সঙ্গীত প্রতিভা ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ সালে মাত্র ৬৫ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।

নিউজজি/পিএম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন