বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ , ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

ফিচার
  >
ব্যক্তিত্ব

শ্রীদেবী: রূপের রানী কিংবা বলিউডের প্রথম নারী সুপারস্টার

নিউজজি ডেস্ক ২৪ ফেব্রুয়ারি , ২০২৫, ১৩:৫৩:১৪

131
  • শ্রীদেবী: রূপের রানী কিংবা বলিউডের প্রথম নারী সুপারস্টার

ডাগর চোখের চাহনী, মন ভোলানো হাসি, হৃদয় উজাড় করা কণ্ঠস্বর; বিধাতার এমন যাদুকরি সৃষ্টি তিনি। সেই সঙ্গে তার সুনিপুণ অভিনয়; সব মিলে তিনি সেরাদেরও সেরা। এজন্য তাকে বলা হয় রূপের রানী। আবার বলিউড সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির প্রথম নারী সুপারস্টার হিসেবেও খ্যাত তিনি।

এতক্ষণে পাঠক নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন কার কথা বলছি। হ্যাঁ, তিনি শ্রীদেবী। সুন্দরের দেবী। বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী। অভিনেত্রী হয়েও যে সিনেমা জগতে দাপট তৈরি করা যায়, দেখিয়েছেন তিনি। আজ কালজয়ী এই সিনে তারকার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন শ্রীদেবী।

১৯৬৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের তামিলনাডুতে জন্মগ্রহণ করেন শ্রীদেবী। তার আসল নাম শ্রী আম্মা ইয়াঙ্গার আয়াপান। খুব ছোট বেলা থেকেই অভিনয় শুরু করেন তিনি। ১৯৬৭ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে মাত্র ৪ বছর বয়সেই তিনি তামিল সিনেমা ‘কান্দান কারুনাই’তে অভিনয় করেন।

১৯৭০ সালে শ্রীদেবী তেলেগু সিনেমায়া আত্মপ্রকাশ করেন একজন শিশুশিল্পী হিসেবে। সেখানে তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ছিল ‘মা নান্না নির্দোষী’। এরপরের বছর ‘পুমপাত্তা’ সিনেমায় অভিনয় করে সেরা শিশুশিল্পী হিসেবে কেরালা রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন শ্রী। বলিউডেও শ্রীদেবীর আত্মপ্রকাশ হয় শিশুশিল্পী হিসেবে। ১৯৭২ সালে তিনি ‘রানি মেরা নাম’ সিনেমায় অভিনয় করেন। 

প্রধান চরিত্রে শ্রীদেবীর পথচলা শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। কে. বালাচান্দারের নির্মাণে ‘মুন্ড্রু মুডিচু’ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। এরপর ধীরে ধীরে ভারতের দক্ষিণী সিনেমায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন শ্রীদেবী। তামিল, তেলেগুর পাশাপাশি কন্নড়, মালায়লাম সিনেমাতেও নিয়মিত অভিনয় করেছেন তিনি। সবখানেও সাফল্যের খাতায় নিজের নাম লিখিয়েছেন এই অভিনেত্রী।

বলিউডে শ্রীদেবীর নায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় ১৯৭৯ সালের ‘সলভা সাওয়ান’ সিনেমা দিয়ে। তবে সিনেমাটি আশানুরূপ সাড়া পায়নি। এর চার বছর পর অভিনেতা জিতেন্দ্রর বিপরীতে শ্রীদেবী অভিনয় করেন ‘হিম্মতওয়ালা’ সিনেমায়। ১৯৮৩ সালে মুক্তির পর সিনেমাটি বক্স অফিসে ঝড় তোলে। তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়ে যান শ্রীদেবীও। অভিনয়, নাচ আর গ্ল্যামার দিয়ে দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা পাকা করে নেন তিনি।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শ্রীদেবী অভিনয় করেছেন প্রায় তিন’শ সিনেমায়। এর মধ্যে ৭৪টি তামিল, ২৫টি মালায়লাম, ৬টি কন্নড়, ৯১টি তেলেগু এবং ৭২টি হিন্দি সিনেমা রয়েছে। তার অভিনয়ের ঝুলিতে রয়েছে ‘সদ্‌মা’, ‘নাগিনা’, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘চাঁদনি’, ‘চালবাজ’, ‘লামহে’, ‘খুদা গাওয়া’, ‘জুদাই’, ‘ইংলিশ ভিংলিশ’-এর মতো বিখ্যাত সিনেমা।

এক জীবনে শ্রীদেবীর অর্জনের শেষ নেই। দর্শকদের কাছে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা ছাড়াও তিনি অসংখ্য স্বীকৃতি পেয়েছেন। এর মধ্যে ভারতীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আইফা অ্যাওয়ার্ড, ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, জি সিনে অ্যাওয়ার্ড, স্টারডাস্ট অ্যাওয়ার্ড, স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড অন্যতম। এছাড়া ভারত সরকার তাকে সম্মানজনক পদ্মশ্রী-তে ভুষিত করেছিল। ২০১৩ সালের এক জরিপে শ্রীদেবী শতাব্দীর সেরা অভিনেত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন।

শ্রীদেবীর ব্যক্তি জীবন নিয়ে রয়েছে অনেক রহস্য। শোনা যায়, আশির দশকে একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান তিনি। এরপর তারা বিয়ে করেন। তবে সেই বিয়ে ভেঙে যায়। এরপর ১৯৯৬ সালে শ্রীদেবী বিয়ে করেন প্রযোজক বনি কাপুরকে। এই সংসারে শ্রীদেবীর দুটি মেয়ে রয়েছে। তারা হলেন জাহ্নবী কাপুর ও খুশি কাপুর। ইতোমধ্যে জাহ্নবী কাপুর অভিনেত্রী হিসেবে বলিউডে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন।

২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন শ্রীদেবী। দুবাইয়ের একটি হোটেলের বাথটাবে তার মরদেহ পাওয়া যায়। সেই ঘটনা নিয়ে অনেক রহস্য থাকলেও বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলেই মেনে নিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

শ্রীদেবী কেবল একজন অভিনেত্রী ছিলেন না, তিনি ভারতীয় সিনেমার একটি বিশাল অধ্যায়। কয়েক দশক ধরে তিনি মাতিয়েছেন সিনে দুনিয়া। তার দেখানো পথে হাঁটছে এই প্রজন্মের অনেক অভিনেত্রী। তাই শুধু দর্শকদের হৃদয়ে প্রিয় তারকা হয়েই নয়, শ্রীদেবী বেঁচে থাকবেন তার অসংখ্য অনুসারীর আদর্শ হয়েও।

নিউজজি/নাসি

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন