বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ , ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

ফিচার
  >
ব্যক্তিত্ব

বলছি এক কিংবদন্তির কথা

নিউজজি ডেস্ক ২৩ মার্চ , ২০২৫, ১৩:১৫:৩৪

82
  • ছবি: ইন্টারনেট

হলুদ বাটো মেন্দি বাটো’, ‘ডাকো যত না নয়নও দু’হাতে বাদলও মেঘ ঘুমাতে দেবে না’সহ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অসংখ্য শ্রোতা-দর্শকপ্রিয় গানের সুরস্রষ্টা কিংবদন্তি সুরকার-সংগীত পরিচালক আলী হোসেন।

আলী হোসেনের বাবার বাড়ি কুষ্টিয়া। কিন্তু তার জন্ম হয়েছে ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ নানার বাড়ি কুমিল্লায়। বাবার চাকরির সুবাদে পাকিস্তানের করাচিতে তাকে পড়াশোনা করতে হয়েছিল। সেখানেই একসময় নজরুল একাডেমিতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে তার চাকরি হয়। বাবা মোহাম্মদ ইয়াকুবের গানের প্রতি দুর্বলতা ছিল বিধায় তার কাছেই গানের হাতেখড়ি। তবে নজরুল একাডেমিতে চাকরি করার সুবাদে একই প্রতিষ্ঠানের উচ্চাঙ্গ সংগীতের শিক্ষক পিয়ারে খানের কাছেও তিনি গান শিখেছেন।

এভাবেই ধীরে ধীরে গানের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা। ১৯৬৪ সালে আলী হোসেন দেশে আসেন। দেশে আসার পর নানাভাবে গানের কাজেই সময় কেটে যায় তার। ১৯৬৬ সালে তার সুর-সংগীতে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র মোস্তাফিজ পরিচালিত ‘ডাক বাবু’ মুক্তি পায়। এই চলচ্চিত্রেই তিনি শাহনাজ রহমতুল্লাহকে দিয়ে ‘হলুদ বাটো মেন্দি বাটো’ গানটি করান। একই চলচ্চিত্রে গান করেন সৈয়দ আব্দুল হাদীও।

আলী হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তার হাত ধরেই চলচ্চিত্রের গানে অভিষেক ঘটে শাহনাজ রহমতুল্লাহ ও সৈয়দ আব্দুল হাদীর। একই চলচ্চিত্রে আব্দুল হাদীর কণ্ঠে ছিল ‘চাতুরী জানে না মোর বধূয়া’। ‘ডাক বাবু’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন আজিম-সুজাতা। চলচ্চিত্রটি সে সময় বেশ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল।

গানগুলো জনপ্রিয় হওয়ার কারণে একজন সংগীত পরিচালক হিসেবেও আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আলী হোসেনকে। এরপর ঢাকায় বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রের কাজ করার পাশাপাশি উর্দু ‘ছোট সাহেব’, ‘দাগ’, ‘আনাড়ি’, ‘কুলি’ ইত্যাদি চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনার কাজ করেন আলী হোসেন। সেই সময় উর্দু থেকে বাংলায় যেসব চলচ্চিত্র হয়েছে, সেসব চলচ্চিত্রের বাংলা গান বেশিরভাগ তিনিই করতেন।

সেই সময়ে তার হাত দিয়ে সৃষ্টি হয় ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান যেন ভুলে যেও না’, ‘আরে ও প্রাণের রাজা তুমি যে আমার’, ‘এ আকাশকে সাক্ষী রেখে এ বাতাসকে সাক্ষী রেখে’, ‘ও দুটি নয়নে স্বপনে চয়নে নিজেরে যে ভুলে যায় তুলনা খুঁজে না পায়’, ‘কে তুমি এলে গো আমার এ জীবনে’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান। এসব গানের অনবদ্য সুর-সংগীত পরিচালনার জন্য সে সময় আলী হোসেনের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। তারই হাত ধরে সংগীতে সম্পৃক্ততা ঘটে প্রবাল চৌধুরী ও উমা খানের।

গজল সম্রাট মেহেদী হাসান যখন খুব ব্যস্ত, সেই ব্যস্ত সময়ে তিনি ‘রাজা সাহেব’ চলচ্চিত্রের জন্য মেহেদী হাসানকে দিয়ে একটি গান করান। গানটি ছিল ‘ঢাকো যত না নয়নও দু’হাতে, বাদলও মেঘ ঘুমাতে দেবে না’। চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর এই গানটি সেই সময় ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। এই গানের কারণেই চলচ্চিত্রটি দেখতে দর্শকের উপচেপড়া ভিড় ছিল। মেহেদী হাসান বেশ আন্তরিকতা নিয়ে গানটি গেয়েছিলেন। একটি একটি করে শব্দ বলে তাকে গানের অর্থ বুঝাতে হয়েছিল।

খসরু নোমান পরিচালিত ‘রাজা সাহেব’ চলচ্চিত্রের এই গানে লিপসিং করার সৌভাগ্য হয়েছিল চিত্রনায়ক আলমগীরের। এতে আলমগীরের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন রোজিনা। তারপর যত সময় যায় এই গান যেন ইতিহাস হয়ে যায়। মেহেদী হাসানের নিজেরও এই গান খুব প্রিয় ছিল। বিভিন্ন আসরে এই গান গাওয়ার অনুরোধও আসত। বেশ আন্তরিকতা নিয়েই তিনি এই গান গাইতেন।

গানটি গাওয়ার আগে বেশ শ্রদ্ধার সঙ্গেই আলী হোসেনের নাম উচ্চারণ করতেন তিনি।

কামাল আহমেদ পরিচালিত ‘ব্যথার দান’ চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। আলী হোসেন এখন পর্যন্ত প্রায় একশটি সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেছেন। বর্তমানে রেডিও-টিভিতে কাজ করেই সময় পার হয়ে যায় তার। আলী হোসেনের স্ত্রী সালেহা খাতুন। একমাত্র ছেলে আসিফ হোসেন আমেরিকায় থাকেন। একজন আলী হোসেন আমাদের দেশের গর্ব।

নিউজজি/পিএম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন