শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ , ২০ শাওয়াল ১৪৪৬

ফিচার
  >
ব্যক্তিত্ব

২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে হত্যা হয়েছিলেন জি সি দেব

নিউজজি ডেস্ক ২৬ মার্চ , ২০২৫, ১৩:০৮:৫৮

64
  • ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে হত্যা হয়েছিলেন জি সি দেব

ঢাকা: বাঙালির দর্শনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব গোবিন্দ চন্দ্র দেব। তিনি জি সি দেব নামেই সমধিক পরিচিত। বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবী-সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার একটি পরিকল্পনার অংশ রূপে পাকিস্তানি সৈন্যরা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই দার্শনিককে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে হত্যা করেছিল। জি সি দেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন।

তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের আসাম প্রদেশের পঞ্চখণ্ড পরগনার (বর্তমানে বাংলাদেশের সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা) লাউতা গ্রামে ১৯০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছিলেন গোবিন্দ চন্দ্র দেব। তার পূর্বসূরিগণ ছিলেন উচ্চগোত্রীয় ব্রাহ্মণ, যারা গুজরাট থেকে সিলেট এসেছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর জি সি দেব স্থানীয় মিশনারিদের তত্ত্বাবধানে বড় হন।

শৈশবেই মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন জি সি দেব। তিনি ১৯২৫ সালে বিয়ানীবাজার উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম বিভাগে এন্ট্রাস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতার রিপন কলেজ থেকে তিনি ১৯২৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯২৯ সালে সংস্কৃত কলেজ থেকে ব্যাচেলর অব আর্টস এবং ১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। জি সি দেব ১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ড. জি সি দেব কলকাতা রিপন কলেজের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন সময়ে রিপন কলেজ কলকাতা থেকে দিনাজপুর স্থানান্তরিত হলে তিনিও কর্মসূত্রে সেখানে আসেন। কিন্তু যুদ্ধ শেষে রিপন কলেজ পুনরায় কলকাতায় স্থানান্তরের সময় তিনি দিনাজপুর থেকে যাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং সুরেন্দ্রনাথ কলেজের (বর্তমানে দিনাজপুর সরকারি কলেজ) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালের জুলাইয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি পূর্বতন ঢাকা হলের (বর্তমান- শহীদুল্লাহ হল) হাউস টিউটর হিসেবে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে একই বছর তিনি জগন্নাথ হলের প্রভোস্টের দায়িত্ব পান। ড. দেব ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ১৯৬৭ সালে প্রফেসর পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

ড. দেব তার জীবনঘনিষ্ঠ মানবিক দর্শন প্রচারের জন্য সমস্ত সম্পত্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে গেছেন যা দ্বারা পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন কেন্দ্র (ডিসিপিএস) প্রতিষ্ঠিত হয়।

গোবিন্দ চন্দ্র দেবের মোট গ্রন্থ ৯টি, যার মধ্যে দুটি বাংলায় এবং ৭টি ইংরেজিতে ৷ জীবদ্দশায় প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে- আইডিয়ালিসম অ্যান্ড প্রগ্রেস (১৯৫২), আইডিয়ালিসম: অ্যা নিউ ডিফেন্স অ্যান্ড অ্যা নিউ অ্যাপ্লিকেশন (১৯৫৮), আমার জীবন দর্শন (১৯৬০), অ্যাসপাইরেশন অব দ্য কমন ম্যান (১৯৬৩), দ্য ফিলসফি অব বিবেকানন্দ অ্যান্ড দ্য ফিউচার অব ম্যান, তত্ত্ববিদ্যা-সার (১৯৬৬) ও বুদ্ধ, দ্য হিউম্যানিস্ট (১৯৬৯)।

তার মৃত্যুর পরে প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে- প্যারাব্লেস অব দ্য ইস্ট (১৯৮৪) ও মাই অ্যামেরিকান এক্সপেরিয়েন্স (১৯৯৩)।

ড. দেব-এর পালিতা কন্যা রোকেয়া বেগম আর তার স্বামী তার বাসায় থাকতেন। ২৫ মার্চ রাতে সারারাত ধরেই তার বাড়ির উপর গুলিবর্ষিত হয়েছে। ভোরের দিকে দরজা ভেঙে পাকিস্তানি সেনারা ঘরে প্রবেশ করে। এরপর ব্রাশ ফায়ার করে গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও রোকেয়া বেগমের স্বামীকে হত্যা করে। এ সময় রোকেয়া বেগম অচেতন হয়ে পড়ায় বেঁচে যান। ২৬ মার্চ বিকেলে জগন্নাথ হলের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর গর্ত খুঁড়ে মাটি চাপা দেয়া হয় ড. দেবসহ অন্যদের মরদেহ।

গোবিন্দ চন্দ্র দেব এমএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক’ ও ‘হেমচন্দ্র মুখার্জি রৌপ্যপদক’, পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষিত সমাজ কর্তৃক ১৯৬১ সালে ‘দর্শন সাগর’ উপাধি, মরণোত্তর ‘একুশে পদক (১৯৮৫)’ ও ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০০৮’ (মরণোত্তর) লাভ করেন।

নিউজজি/নাসি

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন