শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ , ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার
  >
ব্যক্তিত্ব

ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিউজজি ডেস্ক ২৫ সেপ্টেম্বর , ২০২১, ০০:২৬:২২

478
  • ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ঢাকা : চট্টগ্রামের ক্ষণজন্মা পুরুষ, সংবাদপত্র ও প্রকাশনা শিল্পের অগ্রদূত এবং চট্টগ্রামের সাংবাদিকতা জগতের পথিকৃৎ, দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের ৫৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। 

রাউজানের সন্তান আবদুল খালেক পড়ালেখা শেষ করে ভারতের শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়তে যান। ওখান থেকে ডিগ্রি নিয়ে চট্টগ্রাম ফিরে আসেন। তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রথম মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার। ওই সময় চট্টগ্রামে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু হচ্ছিল। তরুণ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন এবং বিদ্যুতায়নে অবদান রাখেন। সরকারি চাকরিতে যোগদানের কিছুদিনের মধ্যে এ অঞ্চলের মানুষের প্রতি সরকারি বঞ্চনা তাকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। মানুষের দুর্গতি, বিড়ম্বনায় তার মন কাঁদে।

সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। তৎকালীন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বড় পদে তাকে নিয়োগ দেয়ার জন্য সরকারের তরফ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়। তিনি তা গ্রহণ না করে চাকরি ছেড়ে দেন।

আজ থেকে অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় আগে এই অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষকে এগিয়ে নেয়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। চট্টগ্রামের শিক্ষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার মানসে কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেস, কোহিনূর লাইব্রেরি এবং কোহিনূর পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। কোহিনূর নামে তার পরিবারে কোনো সদস্য ছিল না। তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোর নামকরণ করেন বিশ্বখ্যাত সেই হীরক খণ্ডের নামে।

চট্টগ্রামকে আলোকিত করার জন্য বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে ভূমিকা রেখেছিলেন। একজন প্রতিষ্ঠিত ইঞ্জিনিয়ারের নিশ্চিত জীবন গ্রহণ করেননি। পা বাড়িয়েছিলেন অনিশ্চিতের দিকে। আলোকিত মানুষ গড়ার চেষ্টায় পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। তৎকালীন পারিপার্শ্বিক অবস্থায় পত্রিকা প্রকাশনা যে কত কঠিন ব্যাপার বর্তমানে তা অনুধাবন করা কঠিন। মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার সেই কঠিন কাজটিই বেছে নিয়েছিলেন। ১৯৬০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর মহিমান্বিত দিনে তিনি প্রকাশ করেছিলেন দৈনিক আজাদী।

কেবল পত্রিকা প্রকাশ, লাইব্রেরি বা ছাপাখানা করে থেমে থাকেননি। কবি, সাহিত্যিকদের প্রতিও তার ছিল বিশেষ টান। তার প্রত্যক্ষ সহায়তা পেয়ে অনেকে পরবর্তীতে কবি, সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। একুশের প্রথম কবিতা মাহবুব উল আলম চৌধুরীর ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি’ প্রকাশনার দায়ে কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেস বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পাকিস্তান সরকারের রোষানলে নানাভাবে ভোগান্তি সহ্য করতে হয়েছিল কোহিনূর ইলেকট্র্রিক প্রেসের মালিক-কর্মচারীদের। তবুও তিনি পত্রিকা প্রকাশনা থেকে পিছপা হননি।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত অলিয়ে কেরাম হযরতুল আল্ল্লামা ছৈয়দ আহমদ শাহ ছিরিকোটির (র.) প্রধান খলিফা আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার ব্যক্তিগত জীবনে সৎ ও ধর্মভীরু ছিলেন। মানুষের প্রতি ছিল অগাধ মমত্ব। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষকে ভালোবেসে গেছেন। ১৯৬২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মারা যান চট্টগ্রামের এই কৃতী পুরুষ।

আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সিটি কর্পোরেশন নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়কে ‘ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক চত্বর’ নামকরণ করেছে। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তন গড়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের নামে ছাত্রবৃত্তি চালু রয়েছে।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন