মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ , ১৯ শাবান ১৪৪৬

অন্যান্য
  >
বিশ্বকাপ

স্মৃতিময় ভেন্যুতে সাকিব-রিশাদ দ্যুতি, সুপার এইটের কক্ষপথে বাংলাদেশ

শামীম চৌধুরী, সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে ১৪ জুন , ২০২৪, ০০:২৭:১০

  • ৪১ রানের পার্টনারশিপের পথে সাকিব-রিয়াদ। ছবি-বিসিবি

বাংলাদেশ : ১৫৯/৫ (২০.০ ওভারে)

নেদারল্যান্ডস : ১৩৪/৮ (২০.০ ওভারে)

ফল: বাংলাদেশ ২৫ রানে জয়ী।

প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ : সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।

সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভেল স্টেডিয়াম বাংলাদেশের জন্য স্মৃতিময়। ১৫ বছর আগে বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাক্ষী এই ভেন্যুতে মাহমুদউল্লাহর টেস্ট অভিষেক।

তামিমের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিও এই ভেন্যুতে। স্মৃতিময় এই স্টেডিয়ামে পা রেখে উজ্জীবিত বাংলাদেশ ফিরেছে চেনা রূপে। 

সমালোচকদের সমালোচনার জবাব দিয়ে সাকিবের ব্যাটিং (৪৬ বলে ৬৪*), লেগ স্পিনার রিশাদ (৩/৩৩), তিন পেসার মোস্তাফিজ (১/১২), তানজিম (২/৩০), তাসকিনের (২/৩০) বোলিংয়ে ৭ মাস আগে ইডেন গার্ডেনসে বিশ্বকাপে ডাচদের কাছে হারের বদলা নিয়েছে বাংলাদেশ।  টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসকে ২৫ রানে হারিয়ে সুপার এইটের কক্ষপথে এখন বাংলাদেশ।  

ডালাসে বোলিংয়ে খেয়েছেন মার (৩-০-৩০-০), ব্যাটিংয়ে রাখতে পারেননি অবদান। শ্রীলঙ্কা পেসার পাথিরানার শর্ট বল আপার কাট করতে যেয়ে ডিপ থার্ডম্যানে দিয়েছেন ক্যাচ (৬ বলে ৩রান)। নিউইয়র্কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১ ওভারেই সাকিবের বোলিং (১-০-৬-০) দিয়েছেন থামিয়ে অধিনায়ক শান্ত।  নরকিয়ের বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে নিজের উইকেট দিয়েছেন বিলিয়ে দিয়েছেন সাকিব। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এমন পারফরমেন্সে র‍্যাঙ্কিংয়ে নেমে গিয়েছিলেন ১ নম্বর থেকে ৫ নম্বরে। ভারতের সাবেক লিজেন্ডারি ওপেনার শেভাগ তাকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন। তবে সাকিবকে নিয়ে দুর্ভবনায় ছিলেন না অধিনায়ক শান্ত। ভালভাবে ফিরবেন সাকিব, সেন্ট ভিনসেন্টে ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সে ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন শান্ত। অধিনায়কের সে ভবিষ্যদ্বানী যথার্থ, তা জানিয়ে দিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সাকিব ছন্দে ফিরে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৮ বছর পর পেয়েছেন ফিফটির দেখা। ২০১৬ সালে ইডেন গার্ডেনসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফিফটির (৫০*) ১৬ ম্যাচ পর দেখা পেলেন সাকিব ফিফটি (৪৬ বলে ৯ চার-এ ৬৪*)। সাকিবের ফর্মে ফেরা দিনে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ করেছে ১৫৯/৫। নেদারল্যান্ডসকে দিয়েছে ১৬০ রানের টার্গেট।

সুপার এইটের কক্ষপথে থাকার পরীক্ষায় সাকিব শুরু থেকেই পেয়েছেন ছন্দ। মাকরিনকে কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি শটে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। ফন বিককে এক ওভারে মেরেছেন ৪টি বাউন্ডারি মাকরিনকে মিড উইকেটে সিঙ্গল নিয়ে ৩৮ বলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৪র্থ ফিফটি উদযাপন করেছেন। তানজিদকে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৩২ বলে ৪৮, ৫ম উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ৩২ বলে ৪১ এবং অবিচ্ছিন্ন ৬ষ্ঠ জুটিতে জাকের আলীকে নিয়ে ১৫ বলে ২৯ রানে দিয়েছেন সাকিব নেতৃত্ব।  

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে স্কোর হয়নি সন্তোষজনক। ডালাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩৪/৩, নিউইয়র্কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্কোর সেখানে ২৯/১। সেন্ট ভিনসেন্টে এসে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে বাংলাদেশ পেয়েছে ছন্দ। তানজিদ হাসান তামিম-সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং ঝড়ে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে ওভারপ্রতি ৯ করে রান নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। ওই পর্বে শান্ত, লিটনকে হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোর ৫৪/২।

ইনিংসের শুরুতে অফ স্পিনার আরিয়ান দত্তকে খেলতে বেসামাল হয়েছেন বাংলাদেশ টপ অর্ডাররা। তার প্রথম স্পেলে (২-০-৮-২) ফিরে গেছেন শান্ত (৩ বলে ১), লিটন (২ বলে ১)। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে রিভার্স সুইপ করতে যেয়ে ফার্স্ট স্লিপে দিয়েছেন শান্ত ক্যাচ। চতুর্থ ওভারে সেই আরিয়ান দত্তকে সুইপ করতে যেয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে দিয়েছেন লিটন ক্যাচ। 

স্কোরশিটে ২৩/২ থেকে দলকে টেনে তুলেছেন তানজিদ হাসান তামিম-সাকিব আল হাসান। তৃতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেছেন তারা ৩২ বলে ৪৮ রান। 

কিংগমাকে এক ওভারে ১ ছক্কা ২ বাউন্ডারি মেরে ঝড় তোলা তানজিদ হাসান তামিম এদিন শুরু থেকেই টি-টোয়েন্টি আমেজে ব্যাট করেছেন। ম্যাকরিনকে বাতাসের বিপক্ষে পুল করতে যেয়ে করেছেন ভুল, দিয়েছেন তানজিদ হাসান তামিম ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে ক্যাচ (২৬ বলে ৫ চার, ১ ছক্কায় ৩৫)। ফন ম্যাকরিনের বলে ডিপ স্কোয়ার লেগে অবধারিত ছক্কার শটে সাইব্রান্ডের দারুণ ক্যাচে ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহ (২১ বলে ৪ চার, ২ ছক্কায় ২৫)। ১৯তম ওভারে জাকের আলী ফন বিককে ৩টি বাউন্ডারি মেরে দলের চ্যালেঞ্জিং স্কোরে রেখেছেন অবদান।

নেদারল্যান্ডসকে ১৬০ রানের টার্গেট দিয়ে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ (৩৬/২)। ইনিংসের মাঝপথে সাকিব বিক্রমজিৎতের কাছে পর পর ২ বলে ছক্কা খেলে শঙ্কার আলামত ছিল। তবে ওই ওভারে ১৪ রান খরচা বাদ দিলে সাকিবের অবশিষ্ট ৩ ওভার ছিল দারুণ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলমান আসরে টানা ৩ ম্যাচ উইকেটহীন কাটলেও প্রকৃত অর্থে নেদারল্যান্ডসকে চাপে ফেলতে পেরেছেন সাকিব (৪-০-২৯-০)। 

মাহমুদউল্লাহর একটি ওভারে (১-০-৬-১) ডেঞ্জারম্যান বিক্রমজিৎ সিং উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলে (১৬ বলে ৩ ছক্কায় ২৬) ম্যাচ জয়ের আবহ পায় বাংলাদেশ।  

এই ম্যাচেও লেগ স্পিনার রিশাদের একটি ওভারে দুই উইকেট (১-০-৭-২) ম্যাচে বাংলাদেশকে দিয়েছে অক্সিজেন। ১৫তম ওভারের চতুর্থ বলে সাইব্রান্ডকে সূর্যের দিকে মুখ দিয়ে কাভারে তানজিদের নেয়া ক্যাচ (২২ বলে ৩ চার, ২ ছক্কায় ৩৩) এবং এক বল পর বাস ডি লিডি ফরোয়ার্ড খেলতে যেয়ে স্ট্যাম্পিংয়ে কাঁটা পড়লে শেষ ৩০ বলে ৪৯ নেয়া সম্ভব হয়নি নেদারল্যান্ডসের। ১ ওভারের শেষ স্পেলেও রিশাদ সফল (১-০-৭-১)। প্রথম দুই স্পেলে (১-০-৫-০ও ১-০-৪-০) নেদারল্যান্ডসকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। মোস্তাফিজ শেষ পাওয়ার প্লে-তে ২ ওভারের স্পেলে (২-০-৩-১) ছড়িয়েছেন আতঙ্ক। এই জুটির বোলিংয়ে শেষ ২৪ বলে ৪৪, এবং শেষ ১২ বলে ৩৬ রানের টার্গেট পাড়ি দিতে পারেনি নেদারল্যান্ডসের। 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন