শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ১১ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

অন্যান্য
  >
বিশ্বকাপ

১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভারতের

শামীম চৌধুরী ৩০ জুন , ২০২৪, ০০:২৭:৩৯

  • ছবি: ক্রিকইনফো

ভারত : ১৭৬/৭ (২০.০ ওভারে)

দক্ষিণ আফ্রিকা : ১৬৯/৮ (২০.০ ওভারে)

ফল : ভারত ৭ রানে জয়ী।

প্লেয়ার অব দ্য ফাইনাল : বিরাট কোহলি (ভারত)

প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট : জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত)।

১২ মাস আগে লন্ডনের ওভালে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার দিয়ে শুরু দ্রাবিড়-রোহিতের ট্র্যাজেডি। ৭ মাস আগে নিজেদের মাঠ ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনালে আহমেদাবাদে ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শকের নীল ঢেউ থামিয়ে হলুদের জয় দেখেছে বিশ্ব।

তবে এবার আর ফাইনাল ট্র্যাজেডি নয়, ডেথ ওভারে ভারতের তিন পেসার বুমরাহ- আর্শদ্বীপ-পান্ডিয়া তোপে ৭ রানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি জিতেছে ভারত। বোলারদের সাফল্যে একটার পর একটা ডেথ ওভার থ্রিলার জিতে ফাইনালে এসে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা স্বপ্ন দেখছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

তবে চোকার্স অপবাদ ঘুঁচিয়ে ২৬ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ট্রফি জয়ের স্বপ্ন নিয়ে ফাইনালে অবতীর্ন দক্ষিন আফ্রিকা। তবে ফাইনালে এসে ভারত ব্যাটারদের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে তাদের সেই পাওয়ার হাউজ। ক্যারিবিয় সাগরের বুক ফুটে জেগে ওঠা দ্বীপরাষ্ট্র বারবাডোজের কেনিংস্টন ওভাল থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের আবহ পাচ্ছে ভারত।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বাধিক ৭ বার প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পেয়েছেন ভারত সেনসেশন বিরাট কোহলি। প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কারও একবার পেয়েছেন। অথচ, এবারের বিশ্বকাপে ফাইনালের আগে একটি ম্যাচেও দেখা যায়নি চেনা কোহলিকে।

সেমিফাইনাল পর্যন্ত ৭ ইনিংসে ১০.৭১ গড়ে রানের সমস্টি মাত্র ৭৫। রান খরা কাটিয়ে ফাইনালে দেখা যাবে চেনা কোহলিকে, এমন বিশ্বাস বদ্ধমূল ছিল অধিনায়ক রোহিত শর্মার। তার সে বিশ্বাসের প্রতিফলন দেখতে পেরেছে বিশ্ব। ফাইনালে তার ৫৯ বলে ৬ চার, ২ ছক্কায় ৭৬ রানের ইনিংসে ভর করে ভারত পেয়েছে চ্যালেঞ্জিং স্কোর ১৭৬/৭।

তার ব্যাটে চড়েই ক্যারিবিয়ান সাগর থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দ্বিতীয় শিরোপার আবহ পাচ্ছে ভারত সমর্থকরা। শুরুটা করেছেন কোহলি ইনিংসের দ্বিতীয় বলে মার্কো জানসেনকে বাউন্ডারি দিয়ে। পর পর দুই বলে বাউন্ডারিতে ছন্দময় ইনিংসের জানান দিয়েছেন।

চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম ফিফটি উদযাপনে খেলেছেন তিনি ৪৮টি বল। দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁ হাতি স্পিনার কেশব মহারাজের প্রথম ওভারে ইনফর্ম রোহিত সুইপ করতে যেয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে এবং পন্ট সুইপ করতে যেয়ে উইকেটের পেছনে (২ বলে ০) ক্যাচ দিয়ে ভারতের বিপদ ডেকে এনেছিলেন।

রাবাদার প্রথম ওভারে সূর্যকুমার ডিপ স্কোয়ার লেগে রানিং ক্যাচে (৪ বলে ৩) পরিণত হয়েছেন যখন, তখন ভারতের স্কোর ৩৪/৩। সেখান থেকে অক্ষয় প্যাটেলকে নিয়ে ৫৪ বলে ৭২ রানের পার্টনারশিপে ভারতকে দিয়েছেন কোহলি চ্যালেঞ্জিং পুঁজির আবহ। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৬০ ম্যাচের মধ্যে ৩৪টিতে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাওয়া অক্ষয় প্যাটেল ২৪ বার নেমেছেন ৭ নম্বরে।

অথচ এই লেট অর্ডারকে দলের প্রয়োজনে ফাইনালে ব্যাটিংয়ে নামানো হয়েছে ৫ নম্বরে। তার প্রতিদান দিয়েছেন অক্ষয় প্যাটেল ৩১ বলে ১ চার, ৪ ছক্কায় ১৫১.৬১ স্ট্রাইক রেটে ৪৭ রান করে। ডি কক-এর ডাইরেক্ট থ্রো-তে রান আউট হলে ফিফটি হাতছাড়া হয় তার। ৫ম উইকেট জুটিতেও দিয়েছেন নেতৃত্ব কোহলি।

৩৩ বলে ৫৫ রানের এই জুটিতে শিবাম দুবেকে দিয়েছেন কোহলি উৎসাহ। টসে জিতে ভারতের ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে ভারত তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি।

মহারাজ (২-০-১৪-২) এবং রাবাদার (২-০-১০-১) এক স্পেলে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে ভারত ৪ উইকেট হারিয়ে করেছে ৪৫। তবে শেষ পাওয়ার প্লে-তে পুষিয়ে দিয়েছেন কোহলি-দুবে। শেষ ৩০ বলে ভারত যোগ করেছে ৩ উইকেট হারিয়ে ৫৮ রান। চায়নাম্যান সামছি এদিন কাটিয়েছেন উইকেটহীন (৩-০-২৬-০)।

ভারত ব্যাটাররা শুধু সমীহ করেছে পেসার নরকিয়াকে (৪-০-২৬-২)। ফাইনালে ১৭৭ চেজ করতে এসে বুমরাহ-আর্শদ্বীপের দুই ওভারে হেরিকস (৫ বলে ৪), মার্করাম (৫ বলে ৪) ফিরে গেলে অশনি সংকেত দেখে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে সেখান থেকে তৃতীয় উইকেট জুটির ৩৮ বলে ৫৮ রানে ম্যাচটা জমিয়ে তোলার আবহ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

অক্ষয় প্যাটেলের তৃতীয় ওভারে স্টাবস বোল্ড আউটে (২১ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ৩১) ফিরে গেলে ক্লাসেন-ডি কক ধরেছেন হাল। ক্লাসেনকে নিয়ে ২৩ বলে ৩৬ রানের পার্টনারশিপে দিয়েছেন নেতৃত্ব। ক্লাসেন-ডেভিড মিলার ২২ বলে ৪৫ রানের পার্টনারশিপে ভারতের হাত থেকে ম্যাচটা ছুটিয়ে আনার পথ সুগম করেছেন।

ইনিংসের ১৪তম ওভারে কুলদ্বীপকে ১৪ রান এবং ১৫তম ওভারে কুলদ্বীপ যাদবকে ২৪ রান নিয়ে ভারতকে ফেলে দিয়েছেন এই জুটি বেকায়দা। তবে শেষ ৩০ বলে ৩০ রানের টার্গেট কঠিন করে দিয়েছেন বুমরাহ-পাণ্ডিয়া-আর্শ‌দ্বীপ।

শেষ ১২ বেলে ২০, শেষ ৬ বলে ১৬ রানের টার্গেটের মুখে পড়ে ২০তম ওভারের প্রথম বলে পাণ্ডিয়ার ফুলটসে অবধারিত ছক্কার শট সূর্যকুমার অবিশ্বাস্য ক্যাচে মিলারকে (১৭ বলে ২১) ফিরিয়ে দিলে রাবাদা-মহারাজের পক্ষে ক্যারিবিয়ান সী পাড়ি দেয়া সম্ভব হয়নি। ৭ রানে জিতে ১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি জয়ের উৎসব করেছে ভারত।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন