শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ১১ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

অন্যান্য
  >
বিশ্বকাপ

যে পরিকল্পনায় দক্ষিণ আফ্রিকার কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নেয় ভারত

ক্রীড়া ডেস্ক ৩০ জুন , ২০২৪, ১২:৪১:১৯

  • ছবি: ক্রিকইনফো

আকসার প্যাটেলকে এক ২৪ রান নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন হেনরি ক্লাসেন। ঠিক তখন কেনসিংটন ওভালের গ্যালারির ভারতীয় উচ্ছ্বাস থেমে গিয়ে তখন নেমে আসে নীরবতা। ভেসে আসে কেবল গুটিকয় প্রোটিয়া দর্শকের উল্লাস-ধ্বনি। সে সময় তো কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য ৩০ বলে প্রয়োজন ৩০ রান, উইকেট বাকি ৬টি। তবে হাল ছাড়েননি ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। সতীর্থদের মধ্যে তিনি ছড়িয়ে দেন মন্ত্র-হারার আগে হার নয়, শেষের আগে ছাড় নয়। তাতে সবাই উদ্বুদ্ধ ছিল। পরের পাঁচ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা উইকেট হারাল চারটি, রান তুলতে পারল কেবল ২২। পরাজয়ের কিনারা থেকে জয়ের তীরে পৌঁছে গেল ভারত। ম্যাচের পর অধিনায়ক রোহিত শার্মা বললেন, পরিস্থিতি প্রতিকূল হলেও শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের প্রতিজ্ঞা ছিল তাদের।

ম্যাচ শেষে রোহিতের দাবি, শেষ মূহুর্তেও হাল ছাড়েননি তারা, ‘(দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের) মাঝপথে আমরা বেশ ভালোভাবে ম্যাচে ছিলাম। পরের পাঁচ ওভার আমাদের পক্ষে আসেনি। ক্লসেন ও মিলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ডি ককও নিজের ভূমিকা পালন করে। আমরা জানি যে, ব্যাট হাতে ওদের সামর্থ্য কতটা, আমরা সেটি বুঝি। তবে সবার জন্য বার্তাটা পরিষ্কার ছিল, শেষ বলের আগ পর্যন্ত ম্যাচ শেষ নয়। কারণ ক্রিকেটে এটাই হয় এবং বিশ্বাসটা রাখতে হবে। অধিনায়ক হিসেবে আমার কাজ এটা, সবার মধ্যে বিশ্বাসটা আনা।’

পিছিয়ে পড়ার সময়গুলোতে বারবার লড়াইয়ের মন্ত্রে উজ্জীবিত ছিল ভারত। সে কথাই বলেন রোহিত, ‘যখনই আমাদের হাতে বল ছিল, উইকেট পাই বা না পাই, আমরা লড়াই করতে চেয়েছি। ম্যাচে এগিয়ে থাকি বা পিছিয়ে, লড়াই চালিয়ে যেতে চেয়েছি। আমরা লড়াই ধরে রাখতে চেয়েছি কারণ এমন মুহূর্ত আর আসবে না। এটি ফাইনাল ম্যাচ। তাই শরীর, মন আর সবকিছুতে যা কিছু আছে, সবটা দিয়ে দিতে হবে। তাই সবার জন্য এই বার্তাই ছিল, সবকিছু মেলে ধরো, শরীর ও মনের সবটুকু নিংড়ে দাও, এরপর দেখা যাক কী হয়। সবার মধ্যে শেষ বল পর্যন্ত ওই বিশ্বাসটা ছিল যে, আমরা লড়াই করব। যদিও ১৫ ওভার শেষে আমরা পিছিয়ে ছিলাম, যখন তাদের ৪-৫ ওভারে ৩০ রান প্রয়োজন ছিল, কিন্তু বিশ্বাসটা আমাদের ঠিকই ছিল। আমরা লড়াই করতে চেয়েছি এবং শেষ পর্যন্ত বাধাটা পার করতে পেরেছি।"

ম্যাচ শেষে রোহিত বললেন, মাঠের তীব্র বাতাসের সুবিধা কাজে লাগিয়ে সে অনুযায়ী ফিল্ডিং সাজান তিনি, ‘যখন বুমরাহ ১৮তম ওভারে বোলিংয়ে এলো, আমরা যেমন উইকেট নিতে চাচ্ছিলাম, তেমনি ডট বল করে চাপও সৃষ্টি করতে চাচ্ছিলাম। তাই সঠিক জায়গায় ফিল্ডার রাখা জরুরি ছিল। লং অন, লং অফের ফিল্ডার ভেতরে রাখা, স্কয়ারের ফিল্ডারদের সামনে রাখা, কারণ উইকেটের আচরণের কাছে আমার মনে হয়েছে, এই পিচে ব্যাটসম্যানদের জন্য স্কয়ারে খেলা কঠিন। বুমরাহর অ্যাঙ্গেল ও রিভার্স সুইংয়ের কারণে সোজা ব্যাট চালানো সহজ ছিল। আমরা জানতাম, যদি স্টাম্প বরাবর বোলিং করা যায়, তাহলে রান করা কঠিন হয়ে যাবে। আর তখন তারা যদি বলের লাইন বুঝে না খেলে ভুল করে, তাহলে উইকেটের সুযোগও আসবে।’

বুমরাহর স্পেল শেষ হওয়ার পর বাকি দায়িত্ব পড়ে আর্শদিপ সিং ও পান্ডিয়ার কাঁধে। ১৯তম ওভারে আঁটসাঁট লাইন-লেংথ ও গতির বৈচিত্র্য কাজে লাগিয়ে মাত্র ৪ রান দেন আর্শদিপ। ফাইনালে দুটিসহ সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ ১৭ উইকেটের রেকর্ড স্পর্শ করেন তরুণ বাঁহাতি পেসার।

চাপের মুহূর্তে আর্শদিপের ওই ওভারের কথাও আলাদাভাবে বলেন ভারত অধিনায়ক। “(অষ্টাদশ ওভারে) প্রথম বলেই মিলারকে প্রায় বোল্ড করে দিয়েছিল বুমরাহ। পরে সে মার্কাসের (ইয়ানসেন) উইকেট নেয়। সেটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওই ওভারটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এরপর আর্শদিপও অসাধারণ বোলিং করে। সে মাত্র ৩ রানের (৪) ওভার করে। এবং শেষে ১৬ বা ১৭ রান প্রয়োজন ছিল।”

শেষ ওভারে ১৬ রানের সমীকরণে ভারতের জয়ের পথে একমাত্র বাধা ছিলেন মিলার। তার নাগালের বাইরে করার চেষ্টায় প্রথম বলটি ওয়াইড ফুল টস করেন পান্ডিয়া। উড়িয়ে মারেন মিলার। মনে হচ্ছিল, সীমানা পার হয়ে যাবে বল। কিন্তু দড়ির ঠিক সামনে অসাধারণ এক ক্যাচ নেন সুরিয়াকুমার। প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় ভারতের জয়।

বাকি পাঁচ বলে ভুল করেননি পান্ডিয়া। ৮ রানের বেশি নিতে পারেনি প্রোটিয়ারা। চাপের মুহূর্তে পান্ডিয়ার এমন পারফরম্যান্সের প্রশংসায় পঞ্চমুখ রোহিত।

নিউজজি/সিআর/নাসি 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন