শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ১১ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

অন্যান্য
  >
বিশ্বকাপ

সাড়ে তিনশ মিলিয়ন ডলারের আতশবাজি উৎসবের স্বাক্ষী

শামীম চৌধুরী ৬ জুলাই , ২০২৪, ১২:৫৮:০৫

  • নিউ ইয়র্কের হাডসন রিভারের তীরে দাঁড়িয়ে আতশবাজি উৎসব দেখছেন নিউজজি২৪ডট কম-এর ক্রীড়া সম্পাদক শামীম চৌধুরী। ছবি-সেলফি

৩০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ৩৪ হাজার আসনবিশিষ্ট নাসাউ কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সে এখন আর কোনো ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অস্তিত্ব চোখে পড়বে না।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র পর্ব শেষ হওয়ার পরই খুলে ফেলা হয়েছে এই স্টেডিয়ামে নির্মিত স্টিলের গ্যালারি! বাংলাদেশী মুদ্রায় সাড়ে তিনশ' কোটি টাকা এভাবেই জলে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

টাকা তাদের কাছে আসলেই তেজপাতা। সারা বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক সহযোগিতা বিভিন্ন দাতা গোষ্ঠীর মাধ্যমে করছে যারা বছরের পর বছর, তারা তাদের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে কার্পন্য করবে কেনো ? 

১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই বৃটিশদের হাত থেকে আমেরিকাকে মুক্ত করতে পারার আনন্দ উদযাপনটা উত্তরোত্তর রঙীন হচ্ছে। 

প্রতি বছরের ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে তাই প্রধান আকর্ষণ নিউইয়র্কের আতশবাজি উৎসব। দিনব্যাপী উৎসব নয়, মাত্র ৩০মিনিটে ৬০ হাজার আতশবাজি পোড়ানো হয় হাডসন রিভারে।

সেই আতশবাজির রঙ্গীন রশ্মি আলোকিত করে গোটা নিউইয়র্ক শহরকে। এই আতশবাজি উৎসব দেখার প্রস্তুতিটা বেশ ক'দিন আগে থেকেই নেন নিউ ইয়র্কবাসীরা। শুধু নিউ ইয়র্কবাসীই নন, আশে-পাশের বিভিন্ন রাজ্য থেকেও জনসমাগম হয় এই বিশাল অনুষ্ঠানে। 

১৯৭৬ সালের ৪ জুলাই থেকে হাডসন রিভারে আতশবাজি শুরু। প্রতি বছর তা রুটিন মেনে হচ্ছে। ৬০ হাজার আতশবাজি নদীর বুক ফুটে নানা রঙে ছড়িয়ে পড়ছে আকাশে। তার পুরো খরচটা স্পন্সর হিসেবে বছরের পর বছর বহন করছে মেসি'স নামের একটি চেইন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে তো দূরের কথা, ক্যারিবিয় অঞ্চলেও প্রধান ডিপার্টমেন্টাল স্টোর মেসি'স। যুক্তরাষ্ট্রে তার শাখা ৫০৮টি! গত ৪ জুলাই এই আতশবাজির জন্য খরচা করেছে এই প্রতিষ্ঠান কতো ডলার, জানেন ? ৩৫০ মিলিয়ন ডলার! 

এবার আতশবাজি উৎসবের স্পট পরিবর্তন করা হয়েছে। এই প্রথম হাডসন রিভারের পশ্চিম তীরকে নেয়া হয়েছে বেছে। ওপারে নিউজার্সি, এপারে ম্যানহাটনের পশ্চিম প্রান্তের ৬টি স্পট নির্ধারণ করেছে নিউ ইয়র্ক সিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কভার শেষে ঢাকায় ফেরার পথে নিউইয়র্কে ক'দিন অবস্থানে আতশবাজি উৎসবটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।

রাত ৯টা ২৫ মিনিট থেকে ৯ টা ৫৫-এই ৩০ মিনিটের আতশবাজি দেখতে বিকেল থেকে হাডসন রিভারের ৪টি স্পটের দিকে মানুষের সারি। প্রায় ৩ কিলোমিটার দূর থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এই স্পটগুলোর দিকে যানবাহন। এখানকার মেট্রো স্টেশনগুলোও সাময়িক বন্ধ। পায়ে হেঁটে এতোটা লম্বা পথ পাড়ি দিয়েও কারো কোনো অভিযোগ নেই। অ্যাপেল স্কোয়ার থেকে সবার মতো আমিও পায়ে হেঁটে গন্তব্যের কাছাকাছি যেয়ে পড়েছি বিপাকে। বসার তো দূরের কথা, দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। বিকেলের রোদে ও কারো হাঁসফাঁস নেই। যে দেশে প্রাপ্ত বয়স্ক প্রায় সবার প্রাইভেট কার আছে, পার্কিং  সমস্যার কারণে নিরুপায় হয়ে হাঁটছেন তারা। 

প্রতিবারের মতো এবারও প্রায় ১৫ লাখ লোক জড়ো হয়েছে এই আতশবাজি দেখতে।  ঘন্টার পর ঘন্টা প্রতীক্ষা শেষে আকাশকে যখন বর্নিল করে তুলেছে আতশবাজি, তখন সে কি আনন্দ সবার। সবার ক্যামেরার লেন্স আতশবাজির দিকে। 

২৪৮ তম জাতৗয় উৎসবে একটি মাত্র বড় অনুষ্ঠান। অথচ, কী জানেন, এই আতশবাজি উৎসবে নেই কোনো প্রধান অতিথি। 

আতশবাজি অনুষ্ঠান শেষে ঝির ঝির বৃষ্টি ফেরার পথটা হয়েছে আরো বেশি ভোগান্তির। মেডিসন স্কোয়ার থেকে মেট্রোতে উঠতে হয়েছে শরীরের জোর খাটিয়ে। তারপরও সাড়ে তিনশ মিলিয়ন ডলারের আতশবাজি উৎসব দেখার স্বাক্ষী হতে পেরে নিজেকে বড়ই ভাগ্যবান মনে হয়েছে। 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন