শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ , ৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অন্যান্য
  >
বিশ্বকাপ

বোল্ট-হেনরি তোপে ফাইনালে নিউ জিল্যান্ড

শামীম চৌধুরী, ম্যানচেস্টার থেকে ১০ জুলাই , ২০১৯, ২০:১৬:৩৩

  • জাদেজাকে ফিরিয়ে দিয়েই নিউজিল্যান্ডের হাতে ম্যাচটি ফিরিয়ে এনেছেন বোল্ট। ছবি-ক্রিকইনফো

১১ বছর আগে মালয়েশিয়ায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে কোহলি,উইলিয়ামসন সেমিফাইনালে করেছিলেন টস। সেই সেমিফাইনাল জিতে ট্রফিতেও হাত ছুঁয়েছেন কোহলি। 

১১ বছর পর কোহলির কাছে হারের বদলা নিয়েছেন উইলিয়ামসন ১৮ রানে জিতে। এবং সবচেয়ে বড় মঞ্চের সেমিফাইনালে ! যে দলটি বিশ্বকাপে প্রথম ৬বারের সেমিফাইনালে থেমেছে, সেই নিউজিল্যান্ড উপর্যুপরি ২ আসরে ফাইনালিস্ট ! 

হারদিক পান্ডিয়া যখন মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন (৩২), তখন ভারতের সব আশা ভরসা শেষ হওয়ারই কথা। শেষ ১১৭ বলে ১৪৮ রানের টার্গেট অনতিক্রমযোগ্য বলে ধরেই নিয়েছিল ভারত সমর্থকরাও। তবে ধোনি-জাদেজার ১১৬ রানের পার্টনারশিপই অবিশ্বাস্যভাবে ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়েছে।

শেষ ৬০ বলে ৯০, ৩০ বলে ৫২-কঠিন এই সমীকরন মেলানোর পরীক্ষায় ভারতকে দিয়েছে সাহস। দলের বাইরে টানা ৮ ম্যাচ রেখে জাদেজাকে করা হয়েছে উপেক্ষা, তা জানিয়ে দিতে ১৩০.৫০ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ব্যাটিং এই লোয়ার অর্ডার। ৪ বাউন্ডারি,৪ ছক্কায় ৫৯ বলে ৭৭ রানের ইনিংসটা শেষ হয়েছে বোল্টের শেষ ওভারে। তাতেই থেমে গেছে ভারত সমর্থকদের উচ্ছ্বাস। শেষ ১৩ বলে ৩২ রানের দুসাধ্য পথ অতিক্রম ধোনি'র একার পক্ষে সম্ভব নয়। বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে ফার্গুসনকে ছক্কায় ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৭৩তম হাফ সেঞ্চুরিতেই থামতে হলো এই লিজেন্ডারিকে।ভারত থামতো ২২১এ !   

ব্যাটিং পাওয়ার প্লে'র প্রথম ৬০ বল কি দূর্বিষহ পরিস্থিতিতেই না ফেলেছে ভারতকে। স্কোরশিটে ২৪ উঠতে নেই ৪ ব্যাটসম্যান। হেনরির প্রথম স্পেলের (৭-১-২৩-৩) পাশে বোল্টের ৫ ওভারের স্পেল (৫-২-৯-১) ! দূর্যোগ কাটিয়ে ৫ম জুটির ৪৭ রান ভারতকে দিয়েছে অক্সিজেন। সব হারিয়ে জাজেদা-ধোনির ৭ম উইকেট জুটি সর্বশক্তি দিয়ে চেস্টা করেছে। তবে তাদের ১১৬ রানের পার্টনারশিপ ভারতকে হাসাতে পারেনি। দুই গতির বোলার বোল্ট (২/৪২), হেনরি (৩/৩৭) এবং বাঁ হাতি স্পিনার স্যান্টার (২/৩৪) এ কেঁদেছে ভারত।  

বিশ্বকাপে সেমিফাইনালটা যেনো বরাদ্দই হয়ে গেছে নিউজিল্যান্ডের। কিন্তু সেমি'র বাধা তো অতীতে ৭ বারের মধ্যে ১বার মাত্র পেরিয়েছে। বিপরীতে ভারত ৬ বার শেষ চার-এর ঠিকানা পেয়ে ৩ বার দেখা পেয়েছে ফাইনালের। ২ বার ট্রফিতে দিয়েছে হাত। বিশ্বকাপে দু'দলের এই ঐতি্হ্য, হেড টু হেড, রাঙ্কিং,এবং সর্বশেষ মোকাবেলা-সব কিছুতেই এগিয়ে। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ভারতের বিশাল সমর্থকও বড় প্রেরনা। তার উপর ম্যানচেস্টারে চলমান বিশ্বকাপে  পাকিস্তান,ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে রীতিমতো চাঙ্গা ভারত। সেই ভারতকেই কি না সেমিফাইনালে উল্টো ছিন্ন ভিন্ন করেছে নিউজিল্যান্ড !  

যে দলটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ৪র্থ দল হিসেবে সেমিফাইনালিস্ট। সেই দলটিই কি না টূর্নামেন্টের হট ফেভারিট ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপে উপর্যুপরি দ্বিতীয় আসরের ফাইনালিস্ট !   

সোমবার রাত থেকে ঝির ঝির বৃস্টি। মঙ্গলবার সকালেও মেঘলা আবহাওয়া। টস এর মাত্র ২ মিনিট আগে হোভার কভার সরিয়ে পিচকে আলোর মুখ দেখানো হয়েছে। সব কিছুই দেখেছেন কিউই অধিনায়ক।  এমন চেহারা দেখেও টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেন  উইলিয়ামসন ? এটাই ছিল প্রশ্ন।

মুচকি হেসে কেন উইলিয়ামসন জানিয়ে দিয়েছিলেন, সিদ্ধান্তটা যথার্থ।দল ভর্তি গতির বোলার। বাতাস পেলে সুইং,মুভমেন্টে দেয়া যাবে রোহিত,কোহলি,রাহুলদের কাঁপিয়ে। ভারতকে ২৪০'র চ্যালেঞ্জ দিয়েই সে আস্থা রেখেছিলেন উইলিয়ামসন। 

মেঘলা দিনে  বাতাস  সহায়তা পেয়ে  ভারত পেস বোলাররা যে ভয়ংকর  হয়ে উঠেছে, প্রথম রানটির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৭টি বল পর্যন্ত। প্রথম বাউন্ডারির জন্য অপেক্ষা সেখানে ৪৮তম বল পর্যন্ত ! ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’র প্রথম ৬০ বলে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ২৭/১। বুমারাহ'র প্রথম স্পেল ৪-১-১০-১, ভুবনেশ্বরের সেখানে ৫-১-১৩-১।

এই পরিস্থিতি দেখেও যাননি ভড়কে কিউই অধিনায়ক। রিজার্ভ ডে'তে ইনিংসের অবশিস্ট ২৩ বলে ভারত বোলারদের গর্জনে ওঠেননি কেঁপে। বরং বুধবার সকালে ভুবনেশ্বরের ১১ বলের স্পেলে তিন উইকেট দেখে হয়েছেন উজ্জীবিত।মঙ্গলবার কেন উইলিয়ামসনের ৬৭, ২টি পার্টনারশিপে ৬৮ এবং ৬৫, রস টেলরের অবিচ্ছিন্ন ৬৭-তাতে স্কোর ২১১/৫'র নিয়েই অনেক সমীকরন রাখতে হয়েছে মাথায়। বুধবার সকালে অবশিষ্ঠ ২১ বলে ২৮ রান যোগ করে ভারতকে ২৪০'র টার্গেট দিয়েই পেস বোলারদের হাতে সোপর্দ করেছেন কিউই অধিনায়ক ম্যাচটি।  তাতেই পেয়েছেন কেন উইলিয়ামসন আস্থার প্রতিদান।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন