শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ , ২০ শাওয়াল ১৪৪৬

খেলা
  >
ক্রিকেট

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শুরুতেই হার বাংলাদেশের

ক্রীড়া ডেস্ক ২০ ফেব্রুয়ারি , ২০২৫, ২৩:২৬:০৮

146
  • ছবি: ইন্টারনেট

দেশ ছড়ার আগে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষের কথা বলেছিলেন। তবে  বৃহস্পতিবার এ টুর্নামেন্টের শুরুতেই হারের তেতো স্বাদ পেল টিম টাইগার্স।
 
দুবাইয়ে তাওহিদ হ্নদয়ের সেঞ্চুরির পরও ভারতের কাছে ৬ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্তর দলের ছুড়ে দেওয়া ২২৯ রানের লক্ষ্য ২১ বল হাতে রেখে মিলিয়ে ফেলল রোহিত শর্মাবাহিনী।
 
তাওহিদ হৃদয়ের অভিষেক ওয়ানডে সেঞ্চুরি ও জাকের আলী অনিকের ফিফটির পরও বাংলাদেশের পুঁজি ছিল সাদামাটা। ৪৯.৪ ওভারে তারা গুটিয়ে যায় ২২৮ রানে। রান তাড়ায় ভারতকে আগ্রাসী সূচনা দিয়ে সাজঘরে ফেরেন রোহিত। তবে আরেক ওপেনার শুবমান গিল ছিলেন অবিচল। ১২৯ বলে নয়টি চার ও দুটি ছক্কায় ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। তার ব্যাটে চড়ে ৪৬.৩ ওভারে ৪ উইকেট খুইয়ে জয় নিশ্চিত করে ভারত।
 
রান তাড়ায় বেশ দেখে শুরু করেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা-শুভমান গিল। এ পথ ধরে মোস্তাফিজুর রহমানের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে ৪ মেরে ওয়ানডে ক্রিকেটে ১১ হাজার রানের মাইলফক ছুঁয়ে ফেলেন রোহিত। দ্বিতীয় দ্রুততম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১১ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন রোহিত। তাঁর লেগেছে ২৬১ ইনিংস। ২২২ ইনিংসে ১১ হাজার রান করেছেন বিরাট কোহলি।
 
রেকর্ড গড়ার দিনে দ্রুত রান তুলতে চেয়েছিলেন রোহিত। আউটও হয়েছেন বড় শট খেলতে গিয়ে। ৩৬ বলে ৪১ রান করে তাসকিনের বলে কাভার পয়েন্টে রিশাদের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক।
 
রোহিতকে হারানোর পর থিতু হওয়ার চেষ্টা করেন বিরাট কোহলি-গিলের জুটি। তবে তাদেরকে সেই সুযোগ দেননি রিশাদ হোসেন। তার বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কোহলি। এরপর গিল খেলেন দারুণ। এ পথ ধরে তিনি পেয়ে যান ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৬তম ফিফটির দেখা । বাংলাদেশের বিপক্ষে আজকের ফিফটি ওয়ানডেতে তার টানা চতুর্থ পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস।
 
এক প্রান্ত গিল দারুণ খেললেও অন্য প্রান্তে থাকা শ্রেয়াস আয়াস করেন হতাশ। মোস্তাফিজকে মিড অফের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তিনি ধরেন পড়েন। নাজমুলের হাতে। ১৫ রান করেছেন আইয়ার। এরপর ডানহাতি–বাঁহাতি কম্বিনেশন ও দ্রুত রান তুলতে অক্ষরকে পাঁচ নম্বরে পাঠিয়েছিল ভারত। এই কৌশল অবশ্য তাদের কাজে লাগেনি। বড় শট খেলতে গিয়ে রিশাদের বলে তার হাতেই ক্যাচ দেন অক্ষর। তার বিদায়ে ম্যাচ জমে ওঠার আভাস মেলে। দ্রুতই ফিরতে পারতেন লোকেশ রাহুল। তাসকিনের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ তুলেছিলেন তিনি। সেই সহজ ক্যাচটিও নিতে পারেননি জাকের। শেষ পর্যন্ত গিল-রাহুল জুটিই ম্যাচ শেষ করে ফেরে।
 
এরআগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি বাংলাদেশের। প্রথম দুই ওভারে সৌম্য সরকার ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে দলটি। সপ্তম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজও ফিরে যান। এরপর ক্রিজে যান তাওহিদ হৃদয়। এক ওভার পর আরেকপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তিনি দেখেন, টানা দুই বলে বিদায় নেন তানজিদ হাসান ও মুশফিকুর রহিম। এরপর জাকেরকে নিয়ে শুরু করেন প্রতিরোধ। 
 
হৃদয়-জাকের জুটিও অবশ্য প্রথম বলেই ভাঙতে পারত। আকসার প্যাটেলের হ্যাটট্রিক বলে প্রথম স্লিপে সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন রোহিত শার্মা। এরপর ২৩ রানে থাকা হৃদয়ের ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন হার্দিক পান্ডিয়া। জাকের পরে ২৪ রানে রক্ষা পান স্টাম্পড হওয়া থেকে। জীবন পেয়ে সুযোগ কাজে লাগান দুজনই। নবম ওভার থেকে শুরু করে ৪৩তম ওভার পর্যন্ত খেলে তারা যোগ করেন ১৫৪ রান। ওয়ানডেতে ষষ্ঠ উইকেটে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। সবশেষ ওয়ানডেতেই গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট পড়ার পড় ১৫০ রান যোগ করেছিলেন জাকের ও মাহমুদউল্লাহ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড এখন হৃদয়-জাকেরের। ২০০৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪২ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর ১৩১ রানের জুটি গড়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মার্ক বাউচার ও জাস্টিন কেম্প। বাংলাদেশের জন্য ভারতের বিপক্ষে এটি যে কোনো উইকেটেই সেরা জুটি।
 
দলের বিপদের সময় দারুণ খেলেন হৃদয়-জাকের। পঞ্চাশ রানের জুটি গড়েন তারা ৮৪ বলে। পরের পঞ্চাশ রান করতে তারা খেলেন ৮০ বল। এরপর রানের গতি কিছুটা বাড়ান হৃদয়। জুটির শেষ ৪২ বলে আসে ৫৪ রান। এদিকে ৮৭ বলে পঞ্চাশ করেন জাকের। পরেও দ্রুত রান তোলার চাহিদা মেটাতে পারেননি তিনি। সব মিলিয়ে ১১৪ বলের ইনিংসে ৪টি চার মারেন ২৬ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
 
হৃদয়ের শুরুটাও হয় মন্থর। ক্যারিয়ারের অষ্টম ফিফটি করতে খেলেন ৮৫ বল। মাইলফলক ছুঁয়ে নতুন রূপে জেগে ওঠেন তিনি। কুলদিপ ইয়াদাভের বলে কাভারের ওপর দিয়ে মারেন ম্যাচের প্রথম ছক্কা। পরের ওভারে রাভিন্দ্রা জাদেজার বল স্লগ সুইপ করে পাঠান সীমানার ওপারে।
 
এই ছন্দ ধরে রেখে এগোতে থাকেন তিনি। এর মাঝেই একটি রান নিতে গিয়ে পেশিতে টান অনুভব করেন ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। বাকি সময় আর স্বচ্ছন্দে দৌড়াতে পারেননি তিনি। তবু পঞ্চাশ থেকে একশতে পৌঁছাতে মাত্র ২৯ বল লাগে হৃদয়ের। এরপর অবশ্য আর কোনো রান যোগ করতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত তার নৈপুণ্যে বাংলাদেশ পেয়ে যায় সম্মানজনক স্কোর। তবে ভারতের মতো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে এ স্কোর নিয়ে যে ধরনের বোলিং দরকার ছিল সেটা বৃহস্পতিবার করতে পারেনি টিম টাইগার্স। যে কারণে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শুরুটা হারই সঙ্গী হয়েছে তাদের। এই হারে টুর্নামেন্টে টিকে থাকাও দলটির জন্য হয়ে দাঁড়াল বেশ কঠিনই।

নিউজজি/সিআর

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন