বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ , ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

খেলা
  >
ক্রিকেট

রেকর্ড গড়ে কোহলির ব্যাটে চড়ে ফাইনালে ভারত

ক্রীড়া ডেস্ক ৫ মার্চ , ২০২৫, ০০:১৬:৩৪

130
  • ছবি: ক্রিকইনফো

বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বড় লক্ষ্য মিলল না ভারতের সামনে। তারপরও রেকর্ড গড়ার চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ, আইসিসি আয়োজিত ওয়ানডে টুর্নামেন্টের নকআউট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এত রান তাড়া করে জয়ের নজির ছিল না কোনো দলের। সেই পরীক্ষায় উতরে গেলেন ভারতের ব্যাটাররা। রান তাড়ায় বরাবরই উজ্জ্বল বিরাট কোহলি খেললেন অসাধারণ ইনিংস। তার পাশাপাশি জ্বলে ওঠেন  শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল ও হার্দিক পান্ডিয়া। শেষ পর্যনাত রেকর্ড গড়েই অজিদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে উঠেছে ভারত।

দুবাইতে মঙ্গলবার প্রথম সেমিফাইনালে ৪ উইকেটে জিতে ভারত। ফলে প্রথম দল হিসেবে টানা তৃতীয়বারের মতো এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে জায়গা করে নিল ভারত। অজিদের ছুড়ে দেওয়া ২৬৫ রানের লক্ষ্য তারা মিলিয়ে ফেলে ১১ বল হাতে রেখে। 

আইসিসির ওয়ানডে টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সফল রান তাড়ার আগের রেকর্ডটিও ছিল ভারতের। ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আহমেদাবাদে ২৬১ রানের লক্ষ্যে জিতেছিল তারা।

ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা অভিজ্ঞ তারকা কোহলির ব্যাট থেকে আসে ৮০ রান। ৯৩ বল মোকাবিলায় পাঁচটি চার মারেন তিনি। এই ইনিংস খেলার পথে স্বদেশি কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকারের পর ইতিহাসের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে রান তাড়ায় ৮ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন কোহলি। শুধু তাই নয়। আইসিসির ওয়ানডে সংস্করণের টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংসের মালিক এখন কোহলি। তার নামের পাশে এমন ইনিংস রয়েছে ২৪টি

অন্যপ্রান্তে শুবমান গিলকে রেখে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ওপর চড়াও হন রোহিত শর্মা। দুবার অবশ্য জীবন মেলে ভারতীয় অধিনায়কের। 

পঞ্চম ওভারের শেষ বলে সাফল্য মেলে অজিদের। ডোয়ারশিসের বল থার্ড ম্যানে ঠেলে দিতে গিয়ে স্টাম্প হারান গিল। ১১ বলে তার সংগ্রহ ৮ রান। দলীয় ৩০ রানে ভারত হারায় প্রথম উইকেট। স্কোরবোর্ডে আর ১৩ রান যোগ হতে বিদায় নেন রোহিতও। তার ক্যাচ ফেলে দেওয়ার প্রায়শ্চিত্ত করেন কনোলি। ইনিংসের অষ্টম ওভারে আক্রমণে গিয়েই বাঁহাতি স্পিনে ধরেন শিকার। এলবিডব্লিউ হওয়ার পর রোহিত রিভিউ নিলেও মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি। ২৯ বলে ২৮ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

দ্রুত ২ উইকেট তুলে নেওয়ার চাপ জারি রাখতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। বরং প্রতিরোধ লড়াইয়ে দারুণ জুটি গড়ে দলকে সামলে নেন কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ার। জয়ের ভিত পেয়ে যায় ভারত। স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে ৫৩ বলে ফিফটিতে পৌঁছান কোহলি। ওয়ানডেতে এটি তার ৭৪তম হাফসেঞ্চুরি। ব্যক্তিগত মাইলফলক স্পর্শের পরের ওভারে আউট হতে পারতেন তিনি। কিন্তু শর্ট মিডঅফে বল লুফে নিতে ব্যর্থ হন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। বোলার কনোলিও ক্যাচের জন্য হাত বাড়ানোয় মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে থাকতে পারে ম্যাক্সওয়েলের।

কোহলিকে বিদায় করতে না পারলেও লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা পরের ওভারে আনেন ব্রেক থ্রু। ভাঙে ১১১ বলে ৯১ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি। শ্রেয়াস বোল্ড হয়ে যান ৬২ বলে ৪৫ রান করে। এরপর আরও দুটি কার্যকর জুটিতে অবদান রাখেন ব্যক্তিগত ৫১ রানে জীবন পাওয়া কোহলি। অক্ষর প্যাটেলের সঙ্গে ৫২ বলে ৪৪ এবং রাহুলের সঙ্গে ৪৬ বলে ৪৭ রান যোগ করেন তিনি।

ডানহাতি পেসার এলিসের বলে বোল্ড হন অক্ষর। তিনি করেন ৩০ বলে ২৭ রান। সেঞ্চুরির সুবাস পেতে থাকা কোহলিকে থামান জ্যাম্পা। বল সীমানার বাইরে পাঠানোর চেষ্টায় লংঅনে ডোয়ারশিসের তালুবন্দি হন কোহলি। কিন্তু ততক্ষণে জয়ের কক্ষপথে পৌঁছে গিয়েছিল ভারত। সেই অবস্থা থেকে পা হড়কায়নি দলটি। অস্ট্রেলিয়ার বোলাররাও পারেননি দারুণ কিছু করে ফল নিজেদের দিকে নিতে।

ষষ্ঠ উইকেটে রাহুল ও হার্দিক জমা করেন ৩১ বলে ৩৪ রান। হার্দিক ২৪ বলে ২৮ রানে ম্যাক্সওয়েলকে ক্যাচ দিয়ে এলিসের শিকার হলেও রাহুল ভারতকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। ৩৪ বলে রাহুল অপরাজিত থাকেন ৪২ রানের ইনিংস খেলে। ৪৯তম ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ম্যাক্সওয়েলকে ওয়াইড লংঅন দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি শেষ করে দেন খেলা।

এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। কপার কনোলিকে নিয়ে সেমিতে বাজি ধরেছিল অজিরা। সেটাই হেরেছে তারা। মাত্র দুই ওয়ানডে খেলা তরুণ এই ব্যাটার সেমির মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ইনিংস ওপেন করতে নেমে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। ৯ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।

কনোলি সুবিধা করতে না পারলেও আরেক ওপেনার ট্রভিস হেড দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেন। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে আরো একবার ভারতীয় সমর্থকদের মনে ভয় ধরিয়েছিলেন তিনি। তবে ফিরেছেন ব্যক্তিগত ফিফটি পাওয়ার আগেই। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩৩ বলে ৩৯ রান।

মিডল অর্ডারে এদিন ব্যর্থ মার্নাস ল্যাবুশেন ও জস ইংলিশ। দুজনই উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ল্যাবুশেন ৩৬ বলে করেছেন ২৯ রান। আর ইংলিশের ব্যাট থেকে এসেছে ১১ রান।

বাকিদের আসা-যাওয়ার মাঝেও এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন স্টিভেন স্মিথ। তবে বেশ ধীরগতির ব্যাটিং করেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৯৬ বলে ৭৩ রানে ফিরেছেন তিনি। বড় ম্যাচে এসে ব্যর্থ গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এক ছক্কায় ৭ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।

২০৫ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়াকে আড়াইশ ছাড়ানো সংগ্রহ এনে দিতে বড় অবদান রেখেছেন অ্যালেক্স ক্যারি। এই মিডল অর্ডার ব্যাটার এক প্রান্তে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। তবে অপর প্রান্তে কেউই তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেনি। রান আউটে কাটা পড়ার আগে ৫৭ বলে ৬১ রান করেছেন তিনি।

ভারত ফাইনালে ওঠায় হাইব্রিড মডেলে আয়োজিত এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতেই। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হওয়ার দৌড়ে আছে নিউ জিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এই দুটি দল আগামীকাল বুধবার পাকিস্তানের লাহোরে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে পরস্পরের মুখোমুখি হবে।

নিউজজি/সিআর

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন