সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ , ১৪ জিলকদ ১৪৪৬

খেলা
  >
ক্রিকেট

বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়ে জিম্বাবুয়ের ইতিহাস

ক্রীড়া ডেস্ক ২৩ এপ্রিল , ২০২৫, ১৮:৫৬:১০

134
  • ছবি: ইন্টারনেট

টেস্ট ক্রিকেটে গত  চার বছর ছন্দহীন জিম্বাবুয়ে। তাই ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দল আশা করেছিল জয়ের মধ্যে টেস্ট সিরিজের পথচলা শুরু হবে। তবে তেমনটা হতে দেয়নি সেই জিম্বাবুয়ে। চার দিনের মধ্যেই সফরকারীরা টাইগারদের ৩ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস গড়লো। 

দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে বুধবার সেই মিরাজকে রিভার্স সুইপে বাউন্ডারি মেরে জিম্বাবুয়েকে জিতিয়ে দেন ওয়েসলি মাধেভেরে। ২০২১ সালের পর এটিই  জিম্বাবুয়ের প্রথম টেস্ট জয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের মার্চে আবুধাবিতে আফগানিস্তানকে হারিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। এরপর গত চার বছরে ১০ ম্যাচ খেলে আটটিতে হেরেছে আফ্রিকান দলটি, ড্র করে দুটিতে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ে জিতল প্রায় ৭ বছর পর। ২০১৮ সালের নভেম্বরে মাহমুদউল্লাহর দলের বিপক্ষে জিতেছিল হ্যামিল্টন মাসাকাদজার দল।

১৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বুধবার জিম্বাবুয়ে ৭ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করে। যা জিম্বাবুয়ের টেস্ট ইতিহাসে রেকর্ড রান তাড়া করে জয়। আগের রেকর্ডটা ১৬২। ১৯৯৮ সালে পেশোয়ার পাকিস্তানের দেওয়া ১৬২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৭ উইকেটে জিতেছিল দলটি।

সিলেটের উইকেটে ১৭৪ রান করে জেতা অনেকটাই সহজ লক্ষ্য। তবে জিম্বাবুয়ের এত রান করে জেতার অতীত রেকর্ড না থাকায় বাংলাদেশের অনেক সমর্থকই আশা খুঁজে পেয়েছিলেন। কিন্তু ওপেনিং জুটিতে জিম্বাবুয়ে ৯৫ রান তুলে ফেলায় শেষদিকে বাংলাদেশ ভালো করলেও ম্যাচ জেতা সম্ভব হয়নি। এই ইনিংসেও ফিফটি পেয়েছেন জিম্বাবুয়ের ওপেনার ব্রায়ান বেনেট। আরেক ওপেনার বেন কারেন করেছেন ৪৪ রান। দুজনকেই ফিরিয়েছেন মিরাজ। ওপেনিং জুটিতে ভাঙার পর মিরাজ-তাইজুল নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়েছেন। তবে দলকে জয় এনে দিতে পারলেন না তাঁরা। টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার ১০ উইকেট নেওয়াটাই হয়ে রইল মিরাজের সান্তনা। তবে হাতে আর কিছু রান বেশি থাকলে কী হতো কে জানে! দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোরে যে আরও কিছু রান যোগ হলো না, তার দায় ব্যাটসম্যানদের।

অধিনায়ক নাজমুলের ভুলে বুধবার সিলেট টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। 

সিলেটে আজ বাংলাদেশ দিন শুরু করে অধিনায়ক নাজমুলের ভুলে। ব্লেসিং মুজারাবানির পাতা ফাঁদে  পা দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। চতুর্থ দিনের প্রথম বলটা ইয়র্কার দিয়ে নাজমুলকে অপ্রস্তুত করে ফেলেন মুজারাবানি। অপ্রস্তুত নাজমুলকে পরের বলটিতে মুজারাবানি দেন বাউন্সার। ব্যাস! উইকেটে এসেই পুল খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন নাজমুল। গতকাল ধৈর্যের পরীক্ষায় পাস করে ৬০ রানে অপরাজিত থাকা নাজমুলের ইনিংস শেষ তাতে।

আগের দিন ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশের হাল ধরেছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকের আলি। অথচ চতুর্থ দিনে বৃষ্টির কারণে খেলা এক ঘণ্টা পরে শুরু হওয়ার পর মাত্র দুই বল টিকতে পেরেছেন নাজমুল। ব্লেসিং মুজারবানির শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন ফাইন লেগে ভিক্টর নিউয়াচির হাতে। ১০৫ বলের ইনিংসে আগেই ৬০ রান করা নাজমুল আজ আর রান যোগ করতে পারেননি। 

নাজমুলের বিদায়ের পর জাকেরের সঙ্গে বাংলাদেশের শেষ ভরসা ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু তিনি বুধবার নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি। মুজারবানি বলে ঠিক সময়ে ব্যাটটা চালাতে পারেননি মিরাজ, তাঁর ব্যাট ছুঁয়ে বল চলে যায় ব্রায়ান বেনেটের হাতে।

দলের বিপদে হাল ধরতে পারেননি তাইজুল ইসলাম। তিনি ৩ বলে ১ রান করে রিচার্ড এনগারাভার বলে উইকেটের পেছেন ক্যাচ দেন। তাইজুল ফিরলেও হাসান মাহমুদ বেশ খেলেন। এক প্রান্ত আগলে রেখে জাকের আলিকে সঙ্গ দেন। এর ফলে তারা ৯১ বলে ৩৫ রানের জুটি গড়ে। এরমধ্যে ৫৮ বলে ১২ রান করেন হাসান। কিন্তু হাসান ফিরতেই বাংলাদেশের ইনিংস থামতে খুব বেশি সময় লাগেনি। টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি তুলে নেওয়া জাকের আউট হন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ১১১ বলে ৫৮ রান করেন। টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার ৫ উইকেট পাওয়া মুজারাবানি ২০.২ ওভার ৭২ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছেন।

জবাব দিতে নেমে স্বাগতিক বোলারদের ওপর চড়াও হন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার। ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে ওয়ানডের গতিতে রান করতে থাকেন তারা। দ্বাদশ ওভারে পূর্ণ হয় তাদের জুটির পঞ্চাশ রান। প্রথম ইনিংসেও পঞ্চাশছোঁয়া জুটি গড়েন বেনেট ও ব্রায়ান।  এ জুটির শতক পূর্ণ হওয়ার আগে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মিরাজ। বড় শটের খোঁজে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন ৭৫ বলে ৪৭ রান করা কারান। ৯৫ রানে ভাঙে প্রথম উইকেটের বন্ধন। অন্য প্রান্তে ৬৫ বলে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি করেন বেনেট। দ্রুতই নিক ওয়েলচকে ফেরান তাইজুল।

শেষ সেশনে নাটকীয়তার জন্ম দেন মিরাজ। তার আচমকা টার্নের সঙ্গে লাফিয়ে ওঠা বলে হকচকিয়ে যান শন উইলিয়ামস। ৯ রান করে ধরেন ড্রেসিং রুমের পথ। মিরাজের পরের ওভারে বড় শটের খোঁজে টাইমিং করতে পারেননি বেনেট। লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৫৪ রান করা তরুণ ওপেনার। পরে তাইজুলের বলে কট বিহাইন্ড হন ক্রেইগ আরভাইন। এখানেও বড় ভূমিকা মিরাজের। অনেকটা জোর করেই শান্তকে দিয়ে সফল রিভিউ নেওয়ান বাংলাদেশ সহ-অধিনায়ক।

পরের ওভারে নিয়াশা মায়াভোকে বোল্ড করে ম্যাচে উত্তেজনা বাড়ান মিরাজ। ৪ উইকেট বাকি রেখে তখনও জয় থেকে ২৯ রানে দূরে ছিল জিম্বাবুয়ে।

আট নম্বরে নেমে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। তাইজুলের পরপর দুই ওভারে ছক্কা ও চার মেরে দেন তিনি। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দারুণ ডেলিভারিতে মাসাকাদজাকে বোল্ড করে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন মিরাজ।

তখনও বাকি ছিল ১৩ রান। তাই আশা দেখছিল বাংলাদেশ। এর মাঝেই এক দফা বৃষ্টি ও পরে আলোকস্বল্পতার কারণে খেলা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তবে ফ্লাডলাইট জালিয়েই চলতে থাকে খেলা।

মিরাজের বলে লং অন দিয়ে বাউন্ডারি মেরে দেন এনগারাভা। তাইজুলের বলে স্লগ করে চার মারেন মাধভেরে। পরে মিরাজের বলে রিভার্স সুইপ করে মারা বাউন্ডারিতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় নিশ্চিত করেন মাধভেরে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৯১

জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৭৩

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (আগের দিন ১৯৪/৪) ৭৯.২ ওভারে ২৫৫ (শান্ত ৬০, জকের ৫৮, মিরাজ ১১, তাইজুল ১, হাসান ১২, খালেদ ০, নাহিদ ০*; নিয়াউচি ১৮-৪-৪২-১, মুজারাবানি ২০.২-৫-৭২-৬, এনগারাভা ১৯-০-৭৪-১, মাধভেরে ৮-১-৩২-০, মাসাকাদজা ১৪-৪-২০-২)

জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ১৭৪) ৫০.১ ওভারে ১৭৪/৭ (কারান ৪৪, বেনেট ৫৪, ওয়েলচ ১০, উইলিয়ামস ৯, আরভাইন ১০, মাধেভেরে ১৯*, মায়াভো ১, মাসাকাদজা ১২, এনগারাভা ৪*; নাহিদ ৫-০-২৪-০, হাসান ৪-১-১৩-০, মিরাজ ২২.১-৮-৫০-৫, খালেদ ৩-১-৬-০, তাইজুল ১৬-০-৭০-২)

ফল: জিম্বাবুয়ে ৩ উইকেটে জয়ী

ম্যাচসেরা: ব্লেসিং মুজারাবানি

সিরিজ: ২ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে জিম্বাবুয়ে। 

নিউজজি/সিআর

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন