মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ , ১২ মুহররম ১৪৪৭

খেলা
  >
ক্রিকেট

অবশেষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট দক্ষিণ আফ্রিকার

ক্রীড়া ডেস্ক ১৪ জুন , ২০২৫, ১৯:২১:১৩

202
  • ছবি: ইন্টারনেট

মঞ্চটা শুক্রবারেই প্রস্তুত করে রেখেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তারপরও লর্ডস টেস্টের চতুর্থ দিনে কোন রোমাঞ্চ ছড়ায় কি না দেখতে অধীর অপেক্ষায় ছিল ক্রিকেট প্রেমিরা। তবে এদিন তেমস কিছু হতে দেননি এইডেন মার্করাম। তার বীরচিত ইনিংসে ভর করে ২৭ বছর পর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট নিজেদের করে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। 

লর্ডসে ২০২৩-২৫ চক্রের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছে ৫ উইকেটে। ২৮২ রানের লক্ষ্য চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে ছুঁয়ে ফেলে টেম্বা বাভুমার দল। সেই ১৯৯৮ সালে আইসিসি নকআউট বিশ্বকাপের (এখনকার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এই প্রথম কোনো বৈশ্বিক ট্রফি জিততে পারল দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল।

ফাইনালে চতুর্থ দিনে ৬৯ রানের প্রয়োজন মিটিয়ে টেস্টে প্রত্যাবর্তনের ৩৩ বছর পর এই সংস্করণে বিশ্বসেরা হলো দলটি। প্রোটিয়াদের স্মরণীয় এই সাফল্যের নায়ক মার্করাম। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফেরার পর, লক্ষ্য তাড়ায় ১৪ চারে ২০৭ বলে ১৩৬ রানের ইনিংস খেলে জয় থেকে স্রেফ ৬ রান দূরে থাকতে বিদায় নেন এই ওপেনার। বড় অবদান রাখেন অধিনায়ক বাভুমাও। চোটে পড়েও ব্যাটিং চালিয়ে যান তিনি। ১৩৪ বলে ৫ চারে ৬৬ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন এ ব্যাটার। তৃতীয় উইকেটে মার্করাম ও বাভুমার ২৫০ বল স্থায়ী ১৪৭ রানের দুর্দান্ত জুটিই মূলত গড়ে দেয় ম্যাচের ভাগ্য।

প্রথম ইনিংসে ১৩৮ রানে অলআউট হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাই হারের শঙ্কায় ভর করেছিল তাদের ওপর। তবে  দ্বিতীয় ইনিংসে তারায় দারুণ ব্যাটিং উপহার দেয়। যে কারনে কী অবলীলায় ছুঁয়ে ফেলল ২৮২ রানের লক্ষ্য। চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ রান করে জেতা সহজ নয় টেস্ট ক্রিকেটে। ১৪৮ বছরের ইতিহাসে ২৮২ ও এর বেশি রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে জয়ের উদাহরণ ছিল মাত্র ৫০টি। লর্ডসে তো মাত্র দুবারই কোনো দল চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ বা এর বেশি লক্ষ্য ছুঁয়ে জিতেছিল। সংখ্যাটাকে আজ তিন বানিয়ে ফেলল দক্ষিণ আফ্রিকা। দিনের শুরুতেই হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে ব্যাটিং করা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকেই হারালেও তেমন কোনো সমস্যা হয়নি দলটির।

৬৫ রান নিয়ে দিন শুরু করা বাভুমা শনিবার ফিরেছেন আর মাত্র ১ রান যোগ করেই। হ্যামস্ট্রিংয়ের কারণে পুরো ইনিংসেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়ানো প্রোটিয়া অধিনায়ক ফিরেছেন জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা মেরে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়ে। এরপরেই স্টার্কের বলে স্টাবস বোল্ড হয়ে ফেরেন। তখনও জয় থেকে ৪১ রান দূরে দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়া হয়তো আশায় বুক বাঁধছিল নতুন করে। তবে তাদের কোনো সুযোগ দেননি মার্করাম। ডেভিড বেডিংহ্যামকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ের দুয়ারে নিয়ে যান তিনি। বাকিটা সারেন বেডিংহ্যাম ও কাইল ভেরেইনা। তখন লর্ডসের ব্যালকনিতে উল্লাসে মেতে ওঠেন অন্য ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফের সদস্যরা। অনেকে ছুটে যান মাঠে। চলতে থাকে দীর্ঘ খরা কাটানোর উল্লাস। ভেঙে পড়ার পুরোনো ইতিহাসকে ছুড়ে ফেলে মার্করামরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে।

গত বছর ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে জয়ের দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ দিকে তালগোল পাকিয়ে হেরে গিয়েছিল মার্করামের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকা। হৃদয় ভাঙার অনেক উপাখ্যানের পর অবশেষে রচিত হলো তাদের স্বপ্নপূরণের গল্প।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ২১২

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ১৩৮

অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: ২০৭

দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: (লক্ষ‍্য ২৮২) ৮৩.৪ ওভারে ২৮২/৫ (মার্করাম ১৩৬, বাভুমা ৬৬, স্টাবস ৮, বেডিংহ্যাম ২১*, ভেরেইনা ৪*; স্টার্ক ১৪.৪-১-৬৬-৩, হেইজেলউড ১৯-২-৫৮-১, কামিন্স ১৭-০-৫৯-১, লায়ন ২৬-৪-৬৬-০, ওয়েবস্টার ৫-০-১৩-০, হেড ২-০-৮-০)

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে জিতে চ্যাম্পিয়ন

ম্যাচসেরা: এইডেন মার্করাম

নিউজজি/সিআর

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন