নিউজজি ডেস্ক ২৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২১, ১৭:৩৯:২১
ছবি: ইন্টারনেট
ঢাকা: যুক্তরাজ্যের সুপ্রিমকোর্ট জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শামীমা বেগমকে ফেরার অনুমতি দেননি। শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এই রায় ঘোষণা করা হয়। শামীমা আইএসে যোগ দিতে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে যুক্তরাজ্য ছেড়েছিলেন। এর প্রায় ছয় বছর পর দেশটির সর্বোচ্চ আদালত তার ফেরা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাল।
২১ বছর বয়সী শামীমাকে ফিরতে না দিতে চাওয়ায় যুক্তরাজ্যের সরকার তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নিয়েছিল। ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এবং মামলায় অংশ নিতে তাকে দেশে আসার অনুমতি দেয়া ন্যায্য হবে কিনা সে বিষয়ে আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের ৫ বিচারক রায় দেন।
শামীমাকে ব্রিটেনে নিষিদ্ধ ঘোষণা দিয়ে বিচারপতি লর্ড রেড বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট সর্বসম্মতিক্রমে স্বরাষ্ট্রসচিবের সকল আপিল মঞ্জুর করে এবং শামীমা বেগমের ক্রস আবেদন খারিজ করে দেয়। তবে শামীমা বেগম তার নাগরিকত্ব হরণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তার আবেদনটি এখনো চালিয়ে যেতে পারেন কিন্তু সেটি ব্রিটেনে এসে লড়ার আর সুযোগ নেই।
মানবাধিকার সংগঠন লিবার্টি যারা শামীমা বেগমের হয়ে মামলা লড়েছিল তারা বলছে, সুপ্রিম কোর্টের রায় একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক নজির স্থাপন করেছে। লিবার্টির আইনজীবী রোজি ব্রিজহাউস বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সরকার এইভাবে কারো নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারেন না। যদি কোনো সরকারকে সুষ্ঠু বিচারের মৌলিক সুরক্ষাগুলো ব্যতীত, নিষেধাজ্ঞার মতো চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রয়োগের অনুমতি দেয়া হয়, তবে এটি একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক নজির স্থাপন করে।
তিনি বলেন, সরকারের নিরাপত্তা পরিষেবাগুলো সিরিয়া থেকে শত শত লোকের নিরাপদে ফিরে আসার ব্যবস্থা করেছে। তবে শামীমা বেগমকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে লক্ষ্য হিসাবে সরকার বেছে নিয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি ন্যায়বিচারের কাজ করে না, এটি সন্ত্রাসবিরোধী ব্যর্থ কৌশল এবং আইন-আদালতকে অবহেলা করার অন্য একটি উদাহরণ।
শামীমা এখন উত্তর সিরিয়ায় সশস্ত্র রক্ষীদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি ক্যাম্পে আছেন। শামীমা বেগম ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই বান্ধবীসহ সিরিয়ায় পাড়ি জমান। তারা তিনজনই ছিলেন বাংলাদেশি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন একাডেমির ছাত্রী। সিরিয়ায় পাড়ি দিয়ে শামীমা ডাচ বংশোদ্ভূত আইএস জঙ্গি ইয়াগো রিদাইককে বিয়ে করেন।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ এক সাংবাদিক সিরিয়ার এক শরণার্থীশিবিরে শামীমার সাক্ষাৎ পান। তখন শামীমা যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার আকুতি জানান। কিছুদিন পর শামীমা একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। এরও কিছুদিন পর শিশুটির মৃত্যু হয়। ইয়াগো–শামীমা দম্পতির আগেও দুটি সন্তান হয়েছিল। তবে কোনো সন্তানই বেঁচে নেই। পুষ্টিহীনতা ও অসুস্থতায় তারা মারা যায় বলে জানান শামীমা।
শরণার্থী শিবিরে তার খোঁজ মেলার পর তিনি দেশে ফিরতে চাইলেও নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে যুক্তরাজ্য তার নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়। এরপর শামীমা তার আইনজীবীর মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেন। সূত্র: দ্যা গার্ডিয়ান
নিউজজি/আইএইচ