বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ , ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিদেশ

সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে পারে উন্নত প্রযুক্তি

নিউজজি ডেস্ক ২১ জুন , ২০২১, ১৬:২৬:১৭

250
  • ছবি: ইন্টারনেট

ঢাকা: ইউরোপের রাজপথে বিশাল ট্রাক বাংলাদেশ-ভারতের মতো দেশের ট্রাকের তুলনায় অনেক বড়৷ শুধু চালকের পক্ষে তাই চারিপাশে নজর রাখা সম্ভব নয়৷ তাই আধুনিক সহায়তা ব্যবস্থার মাধ্যমে দুর্ঘটনা এড়ানোর চেষ্টা চলছে৷

মার্সেল স্মিট ৩০ বছর ধরে ট্রাক চালাচ্ছেন৷ বাঁক নেবার সময় সাইকেলের সঙ্গে ধাক্কার আশঙ্কা তাকে সব সময়ে তাড়া করে বেড়ায়৷ কারণ ‘ব্লাইন্ড স্পট’ তার চোখের আড়ালে থাকে৷ মার্সেল জানেন, যে কোনো সময় এমন অঘটন ঘটতে পারে৷

তার মতে, ‘‘সাইকেল চালক লাল ট্রাফিক লাইট অগ্রাহ্য করে ট্রাকের সামনে এসে পড়লে এবং ধাক্কা খেলে সেটা ট্রাক চালকের দোষ নয়৷ মৃত্যু না হয়ে তার গুরুতর আঘাত লাগলেও ট্রাকচালক হিসেবে কী করা উচিত? এমনটা ঘটলে আমি আর কখনো ট্রাক চালাতে পারবো কিনা, আমি তা জানি না৷’’

পরিসংখ্যান অনুযায়ী ট্রাক চালক বাঁক নেবার সময় দেখতে না পাবার কারণে জার্মানিতে প্রতি বছর প্রায় ২৮ জন সাইকেল চালক মারা যান৷ কিন্তু সাইকেল চালকদের এত ঘনঘন না দেখতে পাওয়ার কারণ কী? ট্রাকচালকেরও তো রেয়ার ভিউ আয়না রয়েছে! কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে সেই আয়না যথেষ্ট নয়৷ কারণ চালক উপর থেকে যেটুকু দেখতে পারেন, তা আসলে সীমিত৷ ট্রাক চালকের রেয়ার ভিউ আয়নায় পেছনের কিছু অংশ দেখা গেলেও একটি অংশ চোখের আড়ালে থেকে যায়৷ সেই অংশটিকেই ‘ব্লাইন্ড স্পট' বলা হয়৷ সেখানে সাইকেল চালক থাকলে ড্রাইভার তাকে দেখতে পান না৷

সেই ঘাটতি মেটাতেই ‘টার্ন অ্যাসিস্টেন্ট’ নামের সেন্সরভিত্তিক প্রযুক্তি কাজে লাগে৷ ‘ব্লাইন্ড স্পট'-এ কোনো বাধা টের পেলে এই প্রণালী সিগন্যাল বা সংকেত পাঠায়৷ চালক হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে মার্সেল স্মিট বলেন, ‘‘টার্ন অ্যাসিস্টেন্ট সত্যি দারুণ এক উদ্ভাবন৷ প্রায়ই সেটি শব্দ করে৷ কিছু না থাকলেও কোনো বাধা দেখলেই সেটিকে সাইকেল চালক মনে করে৷ তাতে ক্ষতি নেই বটে, কিন্তু শব্দ শুনলে বার বার তাকিয়ে দেখতে হয়৷ সত্যি বিপদ দেখলে সিস্টেম নিজে থেকেই এমারজেন্সি ব্রেক করে৷’’

মার্সেল স্মিট এমন্স নামের শিপিং কোম্পানিতে কাজ করেন৷ অনেক বছর আগেই কোম্পানির ট্রাকগুলিতে টার্ন অ্যাসিস্টেন্ট বসানো হয়েছে৷ কোম্পানির প্রধান ৮৫ শতাংশ ট্রাকে এই সেন্সর-ভিত্তিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করেছেন৷ প্রত্যেক দুর্ঘটনার নাটকীয় পরিণতির কারণে ট্রাকে সিকিউরিটি সিস্টেম লাগানো কোম্পানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷

কোম্পানির প্রধান মিশায়েল নেচ বলেন, ‘‘বাধ্যতামূলক হয়ে উঠবে এমনটা ভেবে আমরা এই কাজ করি নি৷ ততদিন অপেক্ষা করলেও পারতাম৷ নিজেদের স্বার্থে, কর্মীদের জন্য, নিজস্ব নিরাপত্তা, ট্রাকের নিরাপত্তা ও পথে বাকিদের নিরাপত্তার খাতিরে আমরা সেটা করি৷’’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন অনুযায়ী আগামী বছর থেকে সব ট্রাকে ‘টার্ন অ্যাসিস্টেন্ট' থাকতে হবে৷ যে সব ট্রাক ঘনঘন ইউরোপে মালপত্র সরবরাহ করে, সেগুলির মধ্যেও সর্বাধুনিক নিরাপত্তা প্রণালী থাকতে হবে৷ ট্রান্স লজিস্টিক নামের ইউক্রেনের এক শিপিং কোম্পানি কয়েক বছর আগেই ড্রাইভার অ্যাসিস্টেন্স সিস্টেম লাগানো ১০টি ট্রাক কিনেছে৷ বিশাল দামের কারণে সেই সিদ্ধান্ত মোটেই সহজ ছিল না৷ কোম্পানির প্রধান আন্দ্রিই লেপিশভ বলেন, ‘‘ট্রাকপ্রতি এই সিস্টেমের দাম প্রায় দেড় হাজার ইউরো৷ তবে সবকিছু মিলিয়ে খরচ কম নয়৷ শুধু ট্রাকের দাম এক লাখ ইউরো, বাকি ফিচার্সগুলির জন্য ৪০ হাজার ইউরো গুনতে হয়৷ ফলে এমন পদক্ষেপ নেবার সামর্থ্য আছে কিনা, সে কথা আগেই ভাবতে হয়৷’’

ট্রাক চালকরা বলেন, যত বেশি নিরাপত্তা অ্যাসিস্টেন্ট থাকবে, ততই ভালো৷ ওলেক্সান্ডার ইশচেংকো তাদেরই একজন৷ তিনি মনে করেন, ‘‘প্রত্যেক ট্রাকে ব্লাইন্ড স্পটের জন্য সেন্সর থাকা উচিত৷ লেন কিপিং অ্যাসিস্ট ও এমারজেন্সি ব্রেক সিস্টেম সব গাড়িতেই থাকা উচিত৷ এই সব বাধ্যতামূলক করতে পারলে অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব৷’’

অ্যাসিস্টেন্ট সিস্টেমগুলির কারণে বাড়তি সহায়তা পেয়ে মার্সেল স্মিট সন্তুষ্ট৷ তবে সব কিছুর দায়িত্ব যে চালক হিসেবে তার কাঁধেই রয়েছে, সে বিষয়েও তিনি সচেতন৷

সূত্র: ডয়েচে ভেলে।

নিউজজি/এস দত্ত

 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন