বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১ , ৭ শাবান ১৪৪৬

বিদেশ

আরজিকর কাণ্ডে প্রধান অভিযুক্তকে আমৃত্যু কারাদণ্ড

নিউজজি ডেস্ক ২০ জানুয়ারি , ২০২৫, ১৬:৪৮:৪৪

65
  • ছবি: ইন্টারনেট

ঢাকা: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বহুল আলোচিত আরজিকর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও আন্দোলনকারীরা ফাঁসির রায়ের আশা করলেও বিচারক অনির্বাণ দাস সোমবার আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। সেইসঙ্গে সঞ্জয় রায়কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে বলে জানানো হয়। পাশাপাশি নিহত তরুণী চিকিৎসকের পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এদিকে শিয়ালদহ আদালতে সঞ্জয় রায়কে তোলা হলে, আরজিকর-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত দাবি করেন, তিনি কোনো অপরাধ করেননি। কর্মরত চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুন-কাণ্ডে তিনি জড়িত নয় বলে দাবি করেন সঞ্জয় রায়। শাস্তি ঘোষণার দিন সঞ্জয় রায় আদালতে হাজির হয়ে বলেন, ‘আমি খুন করিনি। ধর্ষণও করিনি। আমায় মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’ বিচারকের উদ্দেশে সঞ্জয় রায়কে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি সব দেখতে পাচ্ছেন। আমি নিরপরাধ। এমনকী আমায় অত্যাচার করা হয়েছে।’

২০২৪ সালের ৯ আগস্ট আরজিকর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং নৃশংসভাবে খুনের ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা রাজ্য। দেশ জুড়ে প্রতিবাদ শুরু করেন চিকিৎসক এবং জুনিয়র চিকিৎসকরা।

এই মামলার দোষী সাব্যস্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘‘ধর্ষণকালীন আঘাতে মৃত্যু হয়েছে নির্যাতিতার।’’ তিনি আরও বলেন, এই ঘটনা ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’।

দুপুর পৌনে তিনটার দিকে রায় ঘোষণার আগে প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের উদ্দেশে বিচারক বলেন, আগের দিনই বলেছিলাম, ধর্ষণের জন্য আপনার (সঞ্জয়) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। ধর্ষণের সময় আঘাতে মৃত্যু হলে যাবজ্জীবন এবং মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। খুনের দায়ে আপনার শাস্তি হতে পারে। এগুলো সব আপনাকে জানানো হয়েছে। আপনার বক্তব্য থাকলে বলুন।

এসময় সঞ্জয় বলেন, আমি খুন বা অন্য কাজ কিছুই করিনি। আমি কোনওটাই করিনি। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি আগের দিনও বলেছি। যেটা আমি শুনেছি, এত (প্রমাণ) কিছু নষ্ট হয়েছে। আমি জানতাম না। আগের দিনই বলেছিলাম, আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা ছিল। সেটা নষ্ট হয়নি। আমি নির্দোষ। আপনাকে আগেও বলেছি যে কী ভাবে আমাকে মারধর করা হয়েছে, যার যা ইচ্ছে করেছে। অত্যাচার করা হয়েছে, সাইন (সই) করানো হয়েছে। যেখানে বলেছে সাইন (সই) করেছি।

পরে বিচারক অনির্বাণ দাস আসামিকে বলেন, ‘‘আপনাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে।’’ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬ এবং ১০৩ (১)— এই তিনটি ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। সিবিআই মৃত্যুদণ্ডের জন্য সওয়াল করলেও শেষমেশ আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক অনির্বাণ দাস। জরিমানা করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ধর্ষণের জন্য ৭ লক্ষ এবং হত্যার জন্য ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেন। বিচারক বলেন, ‘‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব নির্যাতিতার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার।’’

এর আগে আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। নির্যাতিতা চিকিৎসক ‘ডিউটি’তে ছিলেন। তিনি শুধু রোজগার করতে যাননি, মানুষকে সাহায্য করতে গিয়েছিলেন। এমবিবিএস পাশ করেছেন। এই ঘটনায় (ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডে) সবাই বিস্মিত। শুধু নির্যাতিতার পরিবার এক সদস্যকে হারায়নি, এক চিকিৎসককে হারিয়েছে সমাজ। সমগ্র সমাজ এই ঘটনায় নড়ে গিয়েছে। যাঁদের মেয়ে বাইরে কাজে যাচ্ছেন বা অন্য কোনও কারণে বাইরে যাচ্ছেন, এই ঘটনা সেই সমস্ত কন্যাসন্তানের মা-বাবাকে ভাবিয়ে তুলেছে। তিনটির মধ্যে দুটি অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে। কঠিন শাস্তির প্রার্থনা করছি আমরা। সমাজে বার্তা দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।

নিউজজি/পি.এম/নাসি 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন