বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ৯ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

সাহিত্য

কথাশিল্পী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ

নিউজজি ডেস্ক ২ নভেম্বর , ২০২৪, ১১:৫৭:৪৮

61
  • সংগৃহীত

ঢাকা: স্বাধীনতা-উত্তর কথা শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, ভারতের একজন বাঙালি লেখক। তিনি প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের জন্য গল্প লিখেছেন। হাসির মোড়কে কল্পবিজ্ঞানের গল্প লেখার জন্যে তার জুড়ি মেলা ভার। তিনি বরোদাচরণ, ফটিক এবং শবর দাশগুপ্তর মতো বড়োদের জন্যে লেখা চরিত্রগুলির জন্যও বিখ্যাত। তার লেখা অনেকগুলি উপন্যাস এর উপর চলচিত্র নির্মাণ ও হয়েছে।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২ নভেম্বর ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। ময়মনসিংহে তার জীবনের প্রথম ১১ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর তার বাবা কলকাতায় রেলের চাকরি পেয়ে চলে আসেন।

তারপর তিনি তার পরিবারের সাথে কলকাতায় মনোহরপুকুর রোডে একটা ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন। পিতার রেলে চাকরি সূত্রে অসম, বিহার, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে থেকেছেন তিনি। কাটিহারে ক্লাস টু তে ভর্তি হবার সময় ভীষণ দুষ্টু ছিলেন তিনি একথা ‘আমার জীবনকথা’য় আত্মকথায় বলেছেন তিনি।

কাটিহারে থাকার সময় তিনি প্রথম গল্পের বই পড়া শুরু করেন, পত্রিকা পড়তেন নিয়মিত, সেই সময় খবরের কাগজে যুদ্ধের কথা, দুর্ভিক্ষের পরিবেশ চারিদিকে।  কাটিহারের পর তারা যান মালজংশনে, মালজংশন থেকে তারা গেলেন দোমোহানিতে, তারপর ময়মনসিংহে, সেখান থেকে আসামে।

কুচবিহার ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আইএ পাস করে পাকাপাকিভাবে আবার কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৫৫ সালে সিটি কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। পরবর্তীকালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পড়েছেন তিনি।

তার প্রথম গল্প ‘জলতরঙ্গ’ ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তার প্রথম উপন্যাস ‘ঘুণপোকা’ দেশ পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে প্রকাশিত হয়। তার প্রথম কিশোর উপন্যাস ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’।

মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড়ের একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি ১৯৬১ সালে তাঁর প্রকৃত কর্মজীবন শুরু করেন কালীঘাট ওরিয়েন্টাল একাডেমীতে শিক্ষকতার মাধ্যমে।

একাকীত্বের যন্ত্রণা আর মৃত্যুভয় তার মনে বাসা বাঁধে সেইসময়, ১৯৬৫ সাল নাগাদ তিনি ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের কাছে আশ্রয় নেন এবং ঠাকুরের বানী শুনে অবসাদ থেকে তার মুক্তি লাভ ঘটে। ‘ঘুনপোকা’ প্রকাশিত হওয়ার পরের বছর তিনি তার বান্ধবী সোনামন চক্রবর্তীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তার এক পুত্র সন্তান এবং এক কন্যাসন্তান হয়। ১৯৭৫সালে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় যোগদান করেন। দীর্ঘকাল দেশ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

নিজের লেখার ধরন সম্পর্কে তিনি বলেছেন – “হঠাৎ একটা লাইন এসে যায়। ওই যেমন তুলোর থেকে একটা একটা করে সুতো বেরিয়ে আসে, তেমনি ওই লাইন থেকে শব্দেরা ভিড় জমায়। ভাবনা শুরু হয়, চরিত্র আসে, ঘটনা আসে। আমি শব্দ দিয়ে ছবি দেখতে আরম্ভ করি।”

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন আধ্যাত্মিকতাবাদের মধ্যে। তার লেখায় তিনি অনুসন্ধান করে চলেছেন জীবনের সত্যতা, তাঁর উপন্যাসে উঠে এসেছে দেশভাগ, নকশাল আন্দোলন উদ্বাস্তু সমস্যার কথা, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রথম উপন্যাস ‘ঘুনপোকা’তে দেশভাগের কথা এসেছে।

তিনি যখন ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়েন তখন দেশভাগ হয়,তিনি খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন দেশভাগের যন্ত্রণা।যা তার সাহিত্যে রচনাতেও উঠে এসেছে বারবার।  তিনি পচ্ছন্দ করতেন না সম্পর্কে গোপনীয়তা, সত্যিকে তিনি প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছেন বারবার।

বাইরের ঘটনাবহুল জগত নয় বরং মানুষের অন্তর্জগৎ এর জটিলতা, আমিত্ব’র অসহায়তা ধরা পড়েছে তার ‘আমরা’ এবং ‘আমাকে দেখুন’ গল্পদুটিতে। তার ছোটগল্পগুলি আমাদের এক নতুন জগতে অবতীর্ণ করে, যেখানে অস্থিরতা নয়, থাকে বিশ্বাস।

অস্তিত্ব সন্ধানের ব্যকুলতা তার যেসমস্ত গল্পে দেখা যায় সেগুলি হল- ‘আমাকে দেখুন’, প্রতীক্ষার ঘর’,’স্বপ্নের ভিতরে মৃত্যু’,’আত্মপ্রতিকৃতি’ প্রভৃতি গল্পে। সাধারণ সহায় সম্বলহীন মানুষের মনেও যে ভালো দিক থাকে তা তিনি তুলে ধরেছেন ‘ইচ্ছে’ গল্পটির মধ্যে দিয়ে। যেখানে গল্পের নায়ক সাঁটুলাল তার পাপের অভাব নেই একথা জানে এবং মানেও, সে একের পর এক পাপ করে এবং অনুতাপে দগ্ধ হয়ে ভাবে এই শেষ পাপ, আর সে কোনো পাপ করবে না, কিন্তু এই শেষের শেষ হয়না, তা চলতেই থাকে।

তার আরেকটি অসাধারণ ছোটগল্প ‘নীলুর দুঃখ’, যেখানে নীলু পাড়ার সব মস্তান দের বন্ধু। নীলুর জীবনে অনেক দুঃখ। সংসারের সব ঝামেলা তার কাধেই এসে পরে। কুসুমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়নি। তার পরিবারের কেউ তাকে নিয়ে ভাবে না।তার হৃদয়ের দুঃখের গল্প এক গভীর রাতে সে একনাগাড়ে বলে চলে পাগলা পোগোর কাছে।গল্পকার অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে এক নিঃসঙ্গ তরুণের ব্যক্তিগত কষ্ট, যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন।

সাহিত্যে তার অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। শিশু সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৫ সালে তিনি বিদ্যাসাগর পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৮ সালে ‘মানবজমিন’ উপন্যাসের জন্য তিনি সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার পান। ২০১২ সালে বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত হন। এছাড়াও তিনি ১৯৭৩ এবং ১৯৯০ সালে আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন।

তার বেশ কিছু উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে সেগুলি হল – ‘বাঁশিওয়ালা’, ‘পাতালঘর’, ‘গোঁসাই বাগানের ভূত’, ‘গয়নার বাক্স’, ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’, ‘হীরের আংটি’, ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ প্রভৃতি।

তার সৃষ্ট বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র শবর দাশগুপ্ত। এই চরিত্রটিকে নিয়েও তিনটি সিনেমা হয়েছে। ‘এবার শবর’, ‘ঈগলের চোখ’ ও ‘আসছে আবার শবর’।

নিউজজি/ পি.এম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন