শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ , ২৭ শাওয়াল ১৪৪৬

সাহিত্য
  >
প্রবন্ধ

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক

ফারুক হোসেন শিহাব অক্টোবর ১৬, ২০১৯, ১৩:৩২:৪৯

6K
  • রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক

‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ কবিতা ও ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’ গানের রচয়িতা তারুণ্য ও সংগ্রামের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। বাংলাদেশের কবিতায় অবিস্মরণীয় এই কবির শিল্পমগ্ন উচ্চারণ তাকে দিয়েছে সত্তরের দশকের অন্যতম আলোচিত-আলোকিত কবির স্বীকৃতি। অকালপ্রয়াত এই কবি নিজেকে মিলিয়ে নিয়েছিলেন আপামর নির্যাতিত মানুষের আত্মার সঙ্গে। 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণআন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা, ও অসাম্প্রদায়িকতা তার কবিতায় বলিষ্ঠভাবে তুরে ধরেছেন তিনি। পাশাপাশি স্বৈরতন্ত্র ও ধর্মের ধ্বজাধারীদের বিরুদ্ধে তার কণ্ঠ ছিল উচ্চকিত। তার কবিতা মূলত সাম্যবাদ, মুক্তিযুদ্ধ, ঐতিহ্যচেতনা ও অসাম্প্রদায়িকবোধে উজ্জ্বল। 

‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরনো শকুন’-এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি উচ্চারণ করেছেন অবিনাশী স্বপ্ন ‘দিন আসবেই দিন সমতার’। একই সঙ্গে তার কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নটা।

আজ ১৬ অক্টোবর নন্দিত এই কবির জন্মদিন। ১৯৫৬ সালের এই দিনে তিনি পিতার কর্মস্থল বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র জন্ম বরিশালে হলেও তাদের পৈত্রিক বাড়ি বাগেরহাটের মংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে। 

তবে বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। ঢাকা ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বিএ এবং ১৯৮৩ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। 

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ একজন ‘প্রতিবাদী-রোমান্টিক’ কবি ও গীতিকার হিসাবে খ্যাত। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা। তিনি জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। 

ব্যক্তিগত জীবনে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি বহুল আলোচিত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে। তার লেখা জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘উপদ্রুত উপকূল’ (১৯৭৯), ‘ফিরে পাই স্বর্ণগ্রাম’ (১৯৮২), ‘মানুষের মানচিত্র’ (১৯৮৪), ‘ছোবল’ (১৯৮৬) অন্যতম।

মাত্র ৩৫ বছরের (১৯৫৬-১৯৯১) স্বল্পায়ু জীবনে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। জনপ্রিয় গান ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্তপ্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র লেখা ও সুরারোপিত। পরবর্তীকালে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন।

এ ছাড়া ১৯৮০ সালে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কারসহ জীবদ্দশায় বহু পুরস্কার-সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। অকাল প্রয়াত এই কবি ও সংগঠকের কর্মময় স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার মংলার মিঠেখালিতে গড়ে উঠেছে ‘রুদ্র স্মৃতি সংসদ’।

‘উপদ্রুত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থ দুটির জন্য ‘সংস্কৃতি সংসদ’ থেকে পর পর দুই বছর ‘মুনীর চৌধুরী’ সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯১ সালের ২১ জুন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। বেঁচে থাকলে আজ হয়তো তার কলম হয়ে উঠতো আরো ক্ষুরধার, আরো উদ্দীপ্ত। তারপরও স্বল্প জীবনে তার অনন্য যে সৃজন তা বাংলা সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছে; আর শানিত করছে আমাদের বিপ্লবী মনন। আজকের এইদিনে প্রিয় এই কবির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

নিউজজি/এসএফ

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন