শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ , ২৭ শাওয়াল ১৪৪৬

সাহিত্য
  >
প্রবন্ধ

কবি আবদুল কাদিরের প্রয়াণদিবস আজ

ফারুক হোসেন শিহাব ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭, ১৬:৪৮:২৮

6K
  • কবি আবদুল কাদিরের প্রয়াণদিবস আজ

বাঙালি কবি, সাহিত্য-সমালোচক ও ছান্দসিক হিসেবে-খ্যাত কবি আবদুল কাদির। তার লেখায় ছন্দ বিচারে ছিল স্বাতন্ত্র্যিক ও পরিচ্ছন্ন একটি ধারা। রবীন্দ্র ও নজরুল উত্তর যুগে তথা তিরিশের দশকের শক্তিমান কবি আবদুল কাদির সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিচরণ করলেও কবি হিসেবেই তিনি সর্বাধিক খ্যাতিমান। কেননা, তিরিশের দশক থেকেই কবি হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠিত।

আজ ১৯ ডিসেম্বর গুণী কবির প্রয়াণ দিবস। ১৯৮৪ সালের এই দিনে তিনি প্রয়াত হয়েছিলেন। ১৯০৬ সালের ১ জুন বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আড়াইসিধা গ্রামে কবি আবদুল কাদির জন্মগ্রহণ করেন। অতি শৈশবেই তিনি মাতৃহারা হন। ১৯২৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্নদা মডেল হাইস্কুল থেকে পাঁচটি বিষয়ে লেটারসহ ম্যাট্রিক পাস করেন এবং ১৯২৫ সালে তিনি ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। অতঃপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।

১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় বিখ্যাত সওগাত পত্রিকায় সম্পাদনা বিভাগে চাকরি নেন। ১৯৩০ -এ কলকাতা করপোরেশনের একটি প্রাথমিক স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে কমরেড মুজাফফর আহমদের কন্যা আফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন। বাংলা ১৩৩৭-এ ‘জয়তী’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ এবং সম্পাদনা ছাড়াও একই বছর নবশক্তি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৩৮ -এ তিনি কলকাতার যুগান্তর পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে কবি কাজী নজরুল ইসলামের দৈনিক ‘নবযুগ’ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক নিযুক্ত হন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে সরকারের প্রচার সংস্থার বাংলা অনুবাদক পদে নিয়োজিত হন। ১৯৪৬ -এ সাপ্তাহিক মোহাম্মদী ও অর্ধ-সাপ্তাহিক পয়গাম পত্রিকায় চাকরি করেন। ১৯৫২ -এ পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের মুখপত্র মাসিক বিখ্যাত মাহেনও পত্রিকায় কর্মরত থাকার পর ১৯৬৪ -এ কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের প্রকাশনা কর্মকতা হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুন সরকারি চাকুরি থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

তার কাব্যপ্রয়াসে মোহিতলাল মজুমদারের ধ্রুপদী সংগঠন এবং নজরুলের উদাত্ত আবেগের চমৎকার সমন্বয় প্রত্যক্ষ হয়। মুসলিম সাহিত্য সমাজ (১৯২৬)-এর নেতৃত্বে ঢাকায় যে ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলন সূচিত হয়, কবি আবদুল কাদির তার নেতৃস্থানীয় উদ্যোক্তা। তিনি ছিলেন সাহিত্য সমাজের মুখপত্র বার্ষিক শিখা (১৯২৭) পত্রিকার প্রকাশক ও লেখক।

১৯৩৩ সালে তার কাব্য দিলরুবা ও ১৯৬৭ সালে উত্তর বসন্ত প্রকাশিত হয়। এছাড়া ১৯৭৯ সালে আবদুল কাদিরের অন্যতম বিখ্যাত গ্রন্থ ছন্দ সমীক্ষণ প্রকাশ পায়। যাতে তিনি বাংলা ছন্দ সম্পর্কে মৌলিক বক্তব্য রেখেছেন।

সাহিত্য সম্পাদক হিসাবেও তিনি পরিশ্রম এবং একনিষ্ঠতার ছাপ রেখেছেন, সম্পাদনা করেছেন বিখ্যাত কাব্য সঙ্কলন কাব্য মালঞ্চ, মুসলিম সাহিত্যের সেরা গল্প, নজরুল রচনাবলী (প্রথম খণ্ড-পঞ্চম খণ্ড), রোকেয়া রচনাবলী, শিরাজী রচনাবলী, লুৎফর রহমান রচনাবলী, ইয়াকুব আলী চৌধুরী রচনাবলী, আবুল হুসেন রচনাবলী, কাব্যবীথি ইত্যাদি। সাহিত্যকীর্তির জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, মুক্তধারা পুরস্কার প্রভৃতি লাভ করেন।

কবি, সাহিত্য সমালোচক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও ছান্দসিক আবদুল কাদিরের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

 

নিউজজি/এসএফ

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন